ঢাকা: দেশের সকল নাগরিককে তাদের মৌলিক অধিকার সংবলিত আইন সম্পর্কে অবহিত করে সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যপুস্তকে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংশ্লিষ্ট আইন সমুহ সহজবোধ্যভাবে অর্ন্তভূক্ত করার প্রস্তাব করেছেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক। গত ৩-৬ মার্চ অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিনের তৃতীয় কার্যঅধিবেশনে এই প্রস্তাব প্রস্তাব করলে তাতে সম্মতি দেয় সরকার। এটি বাস্তবায়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্তে বলা হয়, মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যপুস্তকে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংশ্লিষ্ট আইনসমুহ (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০; বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭; পিতা-মাতার ভরন পোষন আইন, ২০১৩; তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯; ভূমি সংক্রান্ত আইনসমুহ প্রভৃতি) সহজবোধ্যভাবে অন্তভূক্ত করতে হবে।
এমপিওভূক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহের বেতন ভাতা ইএফটি এর মাধ্যমে প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের প্রস্তাব আমলে নিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক তার প্রস্তাবনায় বলেন, বেতন ভাতা সহজিকরণ এবং আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য এমপিওভূক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসাসমূহে বেতন ভাতা ইএফটির মাধ্যমে প্রদান করা যেতে পারে। এছাড়া কওমী মাদ্রাসার নিবন্ধন না থাকায় মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা এবং পাঠদান কার্যক্রম তদারকি করা সম্ভব হচ্ছেনা। এ পরিপ্রেক্ষিতে কওমী মাদ্রাসাসমূহকে নিবন্ধনের আওতায় আনা প্রয়োজন। এই প্রস্তাবটিও বাস্তবায়নের জন্য কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহৎ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের আয় ব্যয়ের হিসাব বেসরকারি অডিট ফার্মের মাধ্যমে নিরীক্ষার বিষয়ে উদ্যেগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মাধ্যমিক স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার জন্য নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছেন চাদপুরের জেলা প্রশাসক। প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষা কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদারের স্বার্থে মাধ্যমিক স্কুলের/দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার জন্য নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এছাড়াও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে শিক্ষায় গতিশীলতা আনয়নকল্পে দুর্গম ও বিদ্যুৎবিহীন এলাকার বিদ্যালয় সমহে সোলার প্যানেল স্থাপনের উদ্যেগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
সম্মেলনের প্রথম দিনের তৃতীয় কার্যঅধিবেশনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিষয়াবলির এই অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকার থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে সেগুলো পরিদর্শন ও মনিটরিং আরও বাড়াতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলার প্রশ্নে কোন আপোষ করা যাবেনা। মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা প্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসক সমন্বিতভাবে কাজ করবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় এখনো কিছু সমস্যা আছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষার প্রতি বেশি আগ্রহী হয় সে বিষয়ে তাদের উৎসাহিত করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরীতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। শিক্ষা ব্যবস্থায় সমস্যা থাকবেই তার পরেও শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এখন আমাদের দায়িত্ব ও মুল লক্ষ্য হলো শিক্ষার মান উন্নয়ন করা। শিক্ষা ক্ষেত্রে কোন ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন বাড়াতে হবে। স্কুল ফিডিং কার্যক্রমে সরকারের পাশিপাশি জনগণকেও সম্পৃক্ত করতে জেলা প্রশাসকরা ভূমিকা পালন করতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এমএস