ঢাকা : জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ আলোকে শুরু হয়েছে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা।
বুধবার (৩ জুলাই) সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হয়েছে, যা শেষ হবে দুপুর তিনটায়। নতুন কারিকুলামের প্রশ্ন কেমন হবে তা নিয়ে পরীক্ষার আগের রাতে উদ্বিগ্ন ছিলেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কারণ প্রশ্ন সম্পর্কে শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের ধারণা দিতে পারেনি। তাই কৌতুহলী শিক্ষার্থীরা পড়া বাদ দিয়ে স্যোশাল মাধ্যমে প্রশ্নের খোঁজে ব্যস্ত ছিলেন।
এদিকে পরীক্ষার আগের দিন (মঙ্গলবার) তিনটায় স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেইলে প্রশ্ন পাঠিয়ে দেয় এনসিটিবি। সেই প্রশ্ন ফটোকপি করেই আজ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার আগের দিন এভাবে প্রশ্ন সরবরাহ করায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেছে।
ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে আজকে অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষার প্রশ্নসহ সমাধান দিতে দেখা গেছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা অন্যান্য পরীক্ষার প্রশ্নসহ সমাধান যাতে দেওয়া হয় সেই বিষয়ে অনুরোধও করেছেন। বিষয়টি নিয়ে ‘নতুন কারিকুলাম পরিবর্তনে অভিভাবকদের প্রত্যাশা’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে অভিভাবকদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে ক্লাস নাইনে পড়ে। আজ পরীক্ষা অথচ তার মধ্যে কোন অনুভূতি নেই। কারণ প্রশ্ন সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা দেওয়া হয়নি। এদিকে তার বন্ধু তাকে জানিয়েছে ফেসবুকে প্রশ্নফাঁস হয়েছে। তাই পড়ালেখা বাদ দিয়ে সে ফেসবুকে প্রশ্ন খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এর জন্য দায়ী কে? আমাদের ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার পরিকল্পনা চলছে।’
ওই অভিভাবক আরও বলেন,‘এভাবে প্রশ্ন সরবরাহ করলে প্রশ্নফাঁস হবেই। কারণ শহরে স্কুলগুলো সচেতন হলেও গ্রামের অনেক প্রতিষ্ঠানে ফটোকপি মেশিন নাও থাকতে পারে। তাদের গ্রামের বাজারে গিয়ে সেগুলো ফটোকপি করতে হবে। এতে প্রশ্নফাঁসের সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন কারিকুলাম নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা করা উচিত।’
ফারজানা দিবা নামের একজন ‘নতুন কারিকুলাম পরিবর্তনে অভিভাবকদের প্রত্যাশা’ গ্রুপে লিখেছেন, ‘অভিভাবকগণ এতদিন নতুন কারিকুলামের বিপক্ষে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে আসছেন, কাট কাট মার মার আন্দোলনের ঘোষণা দিচ্ছেন। বাচ্চার ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে গেল বলে ফেসবুকে পোস্ট করছেন। তারাই গতকাল ষান্মাসিক মূ্ল্যায়নের প্রশ্ন ও সমাধান চেয়ে পোস্ট করছেন। একদিকে এনসিটিবি বাচ্চাদের পড়ালেখার ৯০ শতাংশ ধ্বংস করেই দিয়েছে, বাকীটা কী আপনারা পূরণ করছেন?
দিনাজপুর জেলার কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তারা বলেন, ‘আমরা গতকাল দুপুরের পরে প্রশ্ন পেয়েছি। কিন্তু স্কুলে ফটোকপি মেশিন না থাকায় আমাদের স্থানীয় বাজারে যেতে হয়েছে। সেখানে গিয়ে প্রশ্ন ফটোকপি করতে হয়েছে। চার শ্রেণির পরীক্ষা একসঙ্গে হওয়ায় অনেক ফটোকপি করতে হয়েছে।’
তারা আরও বলেন, ‘ফটোকপির দোকানিরা চাইলেই একটি কপি রাখতে পারে। এভাবে প্রশ্নফাঁসের শঙ্কা থেকেই যায়। তাই আমরাও বিষয়টি সমাধান চাই। অনেক সময় গ্রামে ঝড়-বৃষ্টির কারণে বিদ্যুৎ থাকে না তখন আমরা কী করবো।’
জানা গেছে, বুধবার (৩ জুলাই) ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা, সপ্তম শ্রেণির ধর্ম, অষ্টম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা এবং নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পরীক্ষায় লিখিত অংশের মূল্যায়ন ৬৫ ও দলীয় কার্যক্রমভিত্তিক অংশের মূল্যায়ন হবে ৩৫ মার্কে। এই ১০০ মার্কের মূল্যায়ন পাঁচ ঘণ্টায় শেষ করতে হবে শিক্ষার্থীদের। পরীক্ষার মাঝে কিছুক্ষণ বিরতি থাকবে বলে জানিয়েছে স্কুল প্রধানরা। তবে এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা পাঁচ ঘণ্টা কী লিখবেন সে বিষয়ে সন্দিহান শিক্ষকরাও। কারণ পাঁচ ঘণ্টা লেখার মতো প্রশ্নে তেমন কিছু নেই। সূত্র : দেশ রূপান্তর
এমটিআই