ঢাকা: টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তৃতীয় দফায় বন্যার কবলে পড়ে সিলেট। এ কারণে সারাদেশের সঙ্গে ৩০ জুন পরীক্ষা শুরুর পরিবর্তে ৯ জুলাই থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ফলে পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার থেকে সিলেটে শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। তবে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তারা বলছেন— ঘরে পানি চলে আসায় পরীক্ষার্থীরা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারেনি। পরীক্ষায় কী আসবে, কী লিখবে তার সবই অনিশ্চিত।
এদিকে পরীক্ষা শুরুর আগের দিন সোমবার (৮ জুলাই) পর্যন্ত সিলেটের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে বন্যার পানি দেখা গেছে। এর মধ্যে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজ ও বালাগঞ্জ ডিএন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেও পানি রয়েছে।
যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন— দক্ষিণ সুরমা কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে পানি থাকলেও পরীক্ষার হলের ভেতরে পানি নেই। তাই পরীক্ষায় কোনো প্রভাব পড়বে না। আর বালাগঞ্জ ডিএন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পানি থাকায় সেখানের বদলে বালাগঞ্জ সরকারি কলেজে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
দেশজুড়ে গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হলেও বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আবশ্যিক) বিষয়ের পরীক্ষা দিয়েই সিলেট বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, কলেজের প্রবেশপথে পানি রয়েছে। তবে পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে রাস্তায় বালুর বস্তা দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি শ্রেণিকক্ষে পানি রয়েছে। সেগুলোতে পরীক্ষার হল রাখা হবে না।
বালাগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসার মারিয়া হক বলেন, আমাদের এখানে দুটি কেন্দ্রের মধ্যে বালাগঞ্জ ডিএন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পানি রয়েছে। এই কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা বালাগঞ্জ সরকারি কলেজে পরীক্ষা দেবে।
সিলেট শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল গণমাধ্যমকে বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এখন। কেন্দ্রের আশপাশে পানি থাকলেও কেন্দ্রের মধ্যে কোনো পানি নেই। এ কারণে ৯ তারিখে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত।
এদিকে পরীক্ষার দিন শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশে যেন বিঘ্ন না ঘটে, একইসঙ্গে নিরাপত্তার কারণে সিলেট মহানগরের এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মহানগর ও শহরতলির ২৮টি পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশে সমাবেশ ও মিছিলসহ কয়েকটি বিষয় নিষিদ্ধ করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ।
সোমবার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা নিশ্চিত করতে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে সিলেট মহানগরী পুলিশ আইন-২০০৯ সালের ধারা ২৯, ৩০, ৩১ ও ৩২ ধারায় পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এই আদেশ পরীক্ষা শুরুর দিন থেকে শেষ হওয়ার দিন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
শিক্ষা বোর্ডসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন বিভাগের চার জেলা। পুরো বিভাগের ৩০৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮২ হাজার ৭৯৫ পরীক্ষার্থী এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এর মধ্যে ৩৩ হাজার ৫৯০ জন ছাত্র এবং ৪৯ হাজার ২০৫ জন ছাত্রী। এর মধ্যে সিলেটে ৩৫ হাজার ৬২০, সুনামগঞ্জে ১৫ হাজার ৬৬৪, মৌলভীবাজারে ১৬ হাজার ৫০৮ ও হবিগঞ্জে ১৫ হাজার ৩ পরীক্ষার্থী রয়েছে।
বিভাগের চার জেলায় মোট ৮৭টি পরীক্ষাকেন্দ্র যার মধ্যে সিলেটে ৩৩টি, সুনামগঞ্জে ২২টি, মৌলভীবাজারে ১৪টি ও হবিগঞ্জে ১৮টি।
গত ২৯ মে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। ৮ জুনের পর বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। সবশেষ ১৭ জুন শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে সিলেটে দ্বিতীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়। এতে সিলেট নগরীর ২৪টি ওয়ার্ডসহ ১৩টি উপজেলা ও সুনামগঞ্জের ১৩টি উপজেলা কমবেশি প্লাবিত হয়। এ অবস্থায় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি এক বিজ্ঞপ্তিতে সিলেট বিভাগের এইচএসসি, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে।
এদিকে সোমবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে ৪৯ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জের ৯৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এমএস