ঢাকা : করোনার কারণে ২০২০ সালের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সব পরীক্ষার্থী ‘অটো পাস’ করলেও এবার তা হচ্ছে না। যেহেতু সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে, এসব বিষয়ের একটিতে ফেল করলেও পুরো পরীক্ষায় ফেল হিসেবে বিবেচিত হবে। সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের আওতায় এসব বিষয়ে পাস হবে না। যেসব বিষয়ে পরীক্ষা হয়নি শুধু সেসব বিষয়ের ফলাফল সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের আওতায় প্রস্তুত হবে।
সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে এবারই প্রথম ফলাফল তৈরি হচ্ছে না। এর আগে ২০২১ ও ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায়ও সাবজেক্ট ম্যাপিং-এর প্রয়োগ হয়েছে। সেসব পরীক্ষায় এসএসসি থেকে ৭৫ শতাংশ ও জেএসসি থেকে ২৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং করা হয়েছিল। এবারও সেই একই পথে হাঁটছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। কিন্তু পুরো পরীক্ষা কি সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের আওতায় আনা হবে?
এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ‘যেসব বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে সেসব বিষয়ে ফলাফল স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হবে। আর যেসব বিষয়ে পরীক্ষা হয়নি সেগুলোর ফলাফল তৈরিতে এসএসসি থেকে ৭৫ শতাংশ ও জেএসসি থেকে ২৫ শতাংশ নিয়ে শতভাগ পূর্ণ করা হবে।’
যেসব বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং হবে সেগুলোতে কি ফেল করার কোনো সুযোগ রয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেসব বিষয়ে স্বাভাবিকভাবে কেউ ফেল করবে না। এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার নম্বর বিবেচনায় আনা হবে। সুতরাং সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে কেউ ফেল করবে না।’
কিন্তু যেসব বিষয়ে এবার পরীক্ষা হয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে কী হবে, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ের উত্তরপত্র পরীক্ষকরা মূল্যায়ন করেছেন। মূল্যায়নের পর যে ফলাফল পাওয়া যাবে তাই বিবেচনায় আনা হবে। এখন কেউ যদি আবশ্যিক বিষয়ে ফেল করে তাহলে তো স্বাভাবিক নিয়মে ফেলই হওয়ার কথা।’
এ বিষয়ে বিভিন্ন বোর্ডের একাধিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, যুক্তিবিদ্যা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, পদার্থ প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র এবং ভূগোল প্রথম পত্রের পরীক্ষা হয়েছে। এসব বিষয়ের মধ্যে যদি কেউ ফেল করে (অতিরিক্ত বিষয় ছাড়া) তাহলে তারা পরীক্ষায় ফেল বলে বিবেচিত হবে।
দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোর ফলাফল তৈরির কাজ করে বোর্ডের কম্পিউটার সেন্টারগুলো। প্রতিটি কম্পিউটার সেন্টারে সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্টের নেতৃত্বে ফলাফল তৈরির জন্য একটি টিম রয়েছে। ফলাফল তৈরির বিষয়ে জানতে কথা হয় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট মাহফুজ মোর্শেদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর সব শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্টদের মিটিং হবে। সেই মিটিংয়ে মূলত সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে কোন বিষয়ের বিপরীতে কোন বিষয়ের নম্বর এসএসসি ও জেএসসি থেকে আনা হবে, কিংবা কেউ যদি এসএসসিতে বিজ্ঞানে ও এইচএসসিতে এসে ব্যবসায় শিক্ষা থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় তখন এইচএসসির কোন বিষয়ের বদলে এসএসসি ও জেএসসির কোন বিষয় বিবেচনায় আনা হবে সেগুলো নির্ধারণ করা হবে।
অর্থাৎ এমন অনেক ব্যতিক্রমী বিষয় উত্থাপন হবে এবং একটি নির্দেশিকা তৈরি করা হবে।’
সেই নির্দেশিকার আলোকে দেশের সব শিক্ষা বোর্ড ফলাফল প্রস্তুত করবে বলে জানা যায়। এদিকে ফলাফল তৈরির সহায়ক হিসেবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন।
সেই বিজ্ঞপ্তিতে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যারা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি পাস করেছে তাদের অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের সত্যায়িত ফটোকপি কলেজ অধ্যক্ষের মাধ্যমে বোর্ডে জমা দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৯৯৬ সালের আগে এসএসসি পাস করে যদি এবার কেউ প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তাদের এসএসসির নম্বর ফর্দের সত্যায়িত ফটোকপি বোর্ডে জমা দিতে হবে।
সব ফলাফল বোর্ডে থাকলেও আবার ম্যানুয়ালি কেন সংগ্রহ করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব ফলাফল সারা দেশের কেন্দ্রীয় সার্ভারে থাকলেও পরবর্তী সময়ে জটিলতা এড়ানোর জন্য সতর্কতার অংশ হিসেবে আমরা তা সংগ্রহ করে রাখছি।’
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং এর আগে চলমান আন্দোলনে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। নিহতও হয়েছে অনেকে। আন্দোলনের সময় পরীক্ষা স্থগিত ছিল। পরবর্তী সময়ে বাকি পরীক্ষাগুলো নেওয়া হলে তারা সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে না বলে সেসব পরীক্ষার ফলাফল সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে তৈরি হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।
এমটিআই