ঢাকা : সরকার পতনের আনন্দ উদযাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ‘গণবিয়ের’ যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সেটি হবে কি না সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।
তবে এ ঘোষণার পর অন্যান্য হলেও নানা আয়োজন করা হচ্ছে। কোনো হলে বর ও কনে সেজে ছেলেরাই আনন্দ করছে, কোনো হলে গরু জবাই করে ভোজের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে; সেই সঙ্গে হল সাজানো হচ্ছে, করা হচ্ছে আলোকসজ্জা, সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করে উচ্চস্বরে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে নাচ ও গানের আসর।
জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী আল আমিন সরকার প্রথমে এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, বর হতে হবে এই হলের, কনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য হলেরও হতে পারেন, আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও হতে পারেন।
এই গণবিয়ের একটি কার্ড ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। হল কর্তৃপক্ষ বলছে, এই ধরনের আয়োজন করতে দেওয়া হবে না।
তবে আল আমিনও এখন বলছেন, ২০ সেপ্টেম্বর থেকে আরও তিন মাস অপেক্ষা করবেন তারা।
শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ একে নিছক মজা হিসেবে দেখছেন, কেউ কেউ বলছেন ‘নীরব প্রতিবাদ’ এর কথা। ছাত্র অবস্থায় বিয়েকে নিরুৎসাহিত করে সমাজ ও পরিবার। এর প্রতিবাদেই হবে এমন আয়োজন।
তবে ২০ সেপ্টেম্বর ঘনিয়ে এলেও এখনও বিয়েতে আগ্রহী বর ও কনের সন্ধান মিলছে না সেভাবে। ফলে ‘গণবিয়ের’ আয়োজন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে এমনিতেই।
জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফারুক শাহ বলেন, তারা কোনোভাবেই এমন আয়োজন করতে দেবেন না। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি।
হলের শিক্ষার্থীরা ফেইসবুকে গণবিয়ের বিষয়ে লিখেছিল, সেটা হঠাৎ করে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরে। আমি প্রক্টর স্যারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত, এটা এখানে আয়োজন করতে দেয়া হবে না।
হলের বর্তমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে আমরা কথা বলেছি। তাদেরকে আমরা বুঝিয়ে বলেছি এ বিষয়ে।
‘গণবিয়ে’র পরিকল্পনাকারী আল আমিন সরকারের বক্তব্যে এটি স্পষ্ট যে ২০ সেপ্টেম্বর আয়োজনটি হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমরা আয়োজনটির সময়সীমা ৩ মাস বাড়িয়ে দিয়েছি। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে পরের ৩ মাস পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। এই ৩ মাসের মধ্যে যারা বিয়ে করতে ইচ্ছুক তাদেরকে নিয়ে আমরা আয়োজনটি করব।
ইংরেজি বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, এখন পর্যন্ত দুইজন ছেলে বিয়ে করতে ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তবে হলে না, তারা আয়োজনকে করতে চান পরিবারের সদস্যদের নিয়ে।
তাহলে ২০ সেপ্টেম্বর কী হবে- এই প্রশ্নে গণবিয়ের পরিকল্পনায় খানিকটা পরিবর্তন আনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের হলের ছাত্রদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে বিয়ে করেছেন, তাদেরকে সংবর্ধনা দেব। তারা সেদিন বর কনের বেশেই উপস্থিত থাকবেন।
এই আয়োজনকে ঘিরে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই আমাদেরকে আর্থিক সহযোগিতাসহ ও সার্বিক সমর্থন দিতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসছেন। এমনও দাতাও আছেন যারা ২০ সেপ্টেম্বরই আয়োজনটি সফল করতে সর্বোচ্চ সহায়তা করতে চান।
হলের প্রাধ্যক্ষ আবার অন্য একটি আয়োজনের পরিকল্পনা করেছেন।
তিনি বলেন, ২০ তারিখ থেকে আমাদের হলে তিনদিন ব্যাপী ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে।
কিন্তু সরকার পতনের আনন্দ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি জায়গায় গণবিয়ের পরিকল্পনা কেন?
এই প্রশ্নে আল আমিন সরকার বলেন, শুধু উৎসব নয়, এটি একটি নীরব সামাজিক প্রতিবাদ। আমাদের সমাজে একটি রীতি হল পাত্র ছাত্রাবস্থায় বিয়ে করতে পারেন না, যতদিন পর্যন্ত তিনি চাকরি না পান। আমরা সেই রীতি ভেঙে শিক্ষার্থীদের বিয়ের আয়োজন করে নীরবে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
কিন্তু এই আয়োজন তো করতে পারছেন না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা ৩ মাস পরে বড় পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে বা অন্য কোথাও 'গণবিয়ে'র আয়োজন করব। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজন করার অনুমতি না মিললে বাইরে কোনো কমিউনিটি সেন্টারেও এটা আয়োজন করতে পারি।
অন্যান্য হলে কী কী হচ্ছে : জহুরুল হক হলে ‘গণবিয়ের’ ঘোষণা হলেও নানা আয়োজন হচ্ছে অন্য হলে। শিক্ষার্থীরা আয়োজন করছেন প্রীতি ভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলে গত ১৩ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর আয়োজিত হয় 'প্রীতি হাম্বা ভোজ ও কাওয়ালি সন্ধ্যা'।
এ আয়োজনে হলে আলোকসজ্জা ও শিক্ষার্থীদের আনন্দোৎসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, এ আয়োজনে একটা 'বিয়ে বিয়ে' পরিবেশ ছিল। কিন্তু কোনো বিয়ে হয়নি। হলের ছাত্ররা মজা করে অনেকে বর সেজে ছবি/ভিডিও করেছেন। কোনো বিয়ে না হওয়ার কারণ হয়ত পাত্রী না পাওয়া।
আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে এবং ২০ সেপ্টেম্বর মাস্টারদা সূর্য সেন হলের শিক্ষার্থীরা প্রীতিভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে।
মাস্টারদা সূর্য সেন হলের শিক্ষার্থী খালিদ ইবনে মিজান বলেন, গরু কিনে এনে রান্না হবে, কাওয়ালি গান হবে। সেখানে হলের সব শিক্ষার্থীরই অংশ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
তবে এ আয়োজনের খবর ভালো লাগেনি বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের শিক্ষার্থী নওরিন সুলতানা তমার। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আনন্দ করতে চেয়েছে। তাদের আনন্দ করার পূর্ণ অধিকার আছে। কিন্তু আনন্দ করার জন্যে প্রীতি ভোজ পর্যন্তই ঠিক আছে, গণবিয়ে করে আনন্দ করতে হবে সেটা মনে হয় না।
ছেলেদের হলের গণবিয়ের কারণে মেয়েদেরও অনেক কথা শুনতে হচ্ছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্থানে এমন কিছু চাই না। বিয়ে একটি পবিত্র সম্পর্ক, এখানে পরিবারের সম্মতিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। এ ব্যাপারটা এভাবে হলে অনেক বিপত্তি ঘটার সম্ভবনা আছে বলে মনে করছি।
একই হলের আরেক শিক্ষার্থী নুসরাত জান্নাত তালবিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার জায়গা। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে পারেনি, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ব্যানারে গণবিয়ের আয়োজন করা হাস্যকর।
এমটিআই