• ঢাকা
  • বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪, ৩১ আশ্বিন ১৪৩১

নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন সেই আবু সাঈদ


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৪, ২০২৪, ০৬:৫৩ পিএম
নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন সেই আবু সাঈদ

ঢাকা: ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রথম শহিদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশ করে। এতে দেখা গেছে আবু সাঈদ মাদ্রাসার এবতেদায়ি শাখার ইংরেজি ও বাংলা বিষয়ে সাধারণ শিক্ষক হিসেবে উর্ত্তীর্ণ হয়েছেন। তার নিবন্ধন নম্বর ২০১২৫৬২৯৭।

এর আগে এ বছরের ১৫ মার্চ ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন ১৩ লাখ ৪০ হাজার ৮৩৩ জন। পরীক্ষার দুই মাস পর ১৫ মে প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশিত হয়। স্কুল ও কলেজ পর্যায় মিলিয়ে মোট পাস করেন চার লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ জন। পাসের হার ছিল ৩৫.৮০%। ৮ লাখ ৬০ হাজারের বেশি প্রার্থী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। পরীক্ষার্থীরা তাদের নিবন্ধন পরীক্ষার রোল ও ব্যাচ নম্বর ব্যবহার করে এর ফলাফল দেখতে পারবেন। এছাড়াও উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা টেলিটক সিমের মাধ্যমে তাদের ফলাফল জানতে পারবেন।

জানা গেছে, আবু সাঈদ ২০০১ সালে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  বাবনপুর গ্রামের জাফরপাড়ার দিনমজুর মকবুল হোসেনের ছেলে সে। ছয় ভাইয়ের মধ্যে আবু সাঈদ ছিলেন সবার ছোট। তিনি স্থানীয় জাফর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপরে স্থানীয় খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জি‌পিএ-৫ পে‌য়ে এসএসসি পাশ করেন। ২০১৮ সালে রংপুর সরকা‌রি কলে‌জ থেকে জি‌পিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাশ করেন। পরে ২০২০ সালে বেগম রো‌কেয়া‌ বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ে ইং‌রে‌জি বিভাগে ভ‌র্তি হন। তিনি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।

২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সক্রিয় কর্মী ছিলেন আবু সাঈদ। তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসাবে এই আন্দোলনে যোগদান করেন। তিনি রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ও রংপুর অঞ্চলে কোটা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। আন্দোলনকে বেগবান করতে ১৫ জুলাই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুজ্জোহাকে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন নিহত আবু সাঈদ।

তিনি তার পোস্টে লেখেন, ‘স্যার! (মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা), এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার স্যার! আপনার সমসাময়িক সময়ে যারা ছিলো সবাই তো মরে গিয়েছে। কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি আমাদের প্রেরণা। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত।

আপনারাও প্রকৃতির নিয়মে একসময় মারা যাবেন। কিন্তু যতদিন বেচেঁ আছেন মেরুদণ্ড নিয়ে বাচুঁন। নায্য দাবিকে সমর্থন জানান, রাস্তায় নামুন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হয়ে দাড়াঁন। প্রকৃত সম্মান এবং শ্রদ্ধা পাবেন। মৃত্যুর সাথে সাথেই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন না। আজন্ম বেচেঁ থাকবেন শামসুজ্জোহা হয়ে। অন্তত একজন ‘শামসুজ্জোহা’ হয়ে মরে যাওয়াটা অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের আর গর্বের।’

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পরদিন অর্থাৎ ১৬ জুলাই দুপুর ১২টা থেকেই রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোটা আন্দোলনকর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এই বিক্ষোভে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন আবু সাঈদ। পরে পুলিশের গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবু সাঈদ।

এসএস

Wordbridge School
Link copied!