জবি : ২০১৬ সালে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে রাজধানীর কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জমিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের ঘোষণা দেয় সরকার। এরপর ছয় বছর পার হলেও কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। দ্রুত দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীর নিকট কাজ হস্তান্তরের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে প্রচারণাও শুরু করেছেন তারা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় ক্যাম্পাস বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ৩ দফা দাবিগুলো হলো- (১) স্বৈরাচার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রজেক্ট ডিরেক্টরকে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং ৭ দিনের মধ্যে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসারদের হাতে এই দ্বায়িত্ব অর্পণ করতে হবে। (২)শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসতে হবে যে ২য় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়া হয়েছে এবং হস্তান্তর প্রক্রিয়ার রূপরেখা স্পষ্ট করতে হবে। (৩) অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং পুরাতন ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার সরকারের আমলের সকল চুক্তি বাতিল করতে হবে।
২৪ এর গনঅভ্যুত্থানের পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ভিসি নিয়োগের জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সংশ্লিষ্টদের মতে জবি থেকে ভিসি হলেই জবিয়ানদের অধিকার আদায় করা সহজ হবে। কিন্তু জবি থেকে ভিসি নিয়োগ হলেও শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণে ব্যর্থ জবি প্রশাসন।
আবসন সংকটে ভোগান্তির স্বীকার প্রতিটি শিক্ষার্থীর আশা দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ অতি দ্রুত শুরু হবে এবং তাদের আবাসন সংকট নিরসন হবে। তাই তাদের দাবি দ্বিতীয় ক্যম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা। অথচ দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পের মেয়াদ ছয় বছর হয়ে গেলেও এখনো ভূমি অধিগ্রহণের কাজই শেষ হয়নি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া ১২ ব্যাচের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তৌসিব মাহমুদ সোহান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় ক্যাম্পাস প্রকল্পের মেয়াদ ৬ বছর হয়ে গেলেও এখনো ভূমি অধিগ্রহণের কাজই শেষ হয় নাই। সরকার পরিবর্তন হলেও এসব কাজে জড়িত যে কর্মকর্তা ছিলেন তারা এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। তাছাড়া নতুন ভিসি আসার পরেও দ্রুত কাজ শুরুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ দেখি নাই।এই জন্য আমরা মনে ২য় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে গেলে দ্রুতই ক্যাম্পাসের কাজ শেষ হবে।
১৪ ব্যাচের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মো.রাশিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিন দফা আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। প্রজেক্ট ডিরেক্টরের শাস্তি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে দেয়া এবং ভূমি অধিগ্রহণ। সেই সাথে দ্রুত সময়ের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এই দাবিগুলো এতদিন নরম সুরে জানিয়েছি কাজ হয়নি। তাই এখন একটু গরম ভাবে বলতে হচ্ছে।
আমরা শিক্ষার্থীরা নানান সংকটের মধ্যে হাবুডুবু খাব, আর প্রশাসন নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবেন সেটা হতে পারে না। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে যে দাবির জন্য আন্দোলন হবে, সেটা খুবই যৌক্তিক। আর যৌক্তিক কাজে সবসময়ই শিক্ষার্থীদের সাথে থাকতে চাই।
আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া ১৩ ব্যাচের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী একেএম রাকিব বলেন, একমাত্র আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত এবং বঞ্চিত।
আমাদের থাকার হল নেই, ভালো মানের কোনো ক্যান্টিন নেই আর ক্লাসরুমের সংকট তো আছেই।এই অবস্থা থেকে দ্রুত মুক্তি চাই আর তা সম্ভব যদি ২য় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা যায়। তাই আমরা সোমবার থেকে আন্দোলনে নামবো এবং দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবো না।
এমটিআই