ঢাকা: সেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নারী শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ালেন অভিনেত্রী রুনা খান। নিজের ফেসবুকে মিমের একটি ছবি পোস্ট করতে দেখা যায়। সেখানে একটি বার্তা লিখে দিতেও দেখা যায়। মিম বার্তাটি শেয়ার দিয়ে রুনা খানকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেন, রুনা খান আপু কে আমি ধন্যবাদ এবং শ্রদ্ধা জানাই আমাকে সাপোর্ট করার জন্য। এই ছবিটি নিয়ে অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেছেন, নানা করম৷ এই ছবিটি ২০২৩ আইসিসিআর ডে উপলক্ষে ইন্দ্রিরা গান্দী কালচারাল সেন্টার এর পক্ষে ছায়ানট এর মঞ্চে প্রগ্রাম উপস্থাপনা করার দিনের পোশাক ছিলো৷ আমি আইজিসিসি ঢাকা এর ক্লাসিকেল শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একজন শিক্ষার্থী।
রুনা খানের সেই বার্তাটিতে দেখা যায়, শোন মেয়ে, শোন কাজী ফারজানা মীম, আমি তোমাকে আমার বুকের গভীরতম স্থান থেকে ভালোবাসা জানাই। কৃতজ্ঞতা জানাই। তোমাকে আমার সশ্রদ্ধ সালাম জানাই। তোমার সাহস আমাকে নতুন করে আশাবাদী করেছে। তোমার মেধাবী মুখ আমাকে প্রচন্ড আনন্দিত করেছে। তোমার স্পষ্ট করে গুছিয়ে কথা বলার ক্ষমতা আমাকে আন্দোলিত করেছে। আমি গর্ববোধ করছি তোমাকে নিয়ে। তুমি এমন একটি মেয়ে, যে মেয়েটি হবার জন্য আমি এদেশের সমস্ত মেয়ের প্রতি বারবার অনুরোধ জানাই কতকাল ধরে। তোমার মতো একটা মানুষের মতো মানুষ হবার জন্য যেন এদেশের সব মেয়ে নিজেকে তৈরি করে, তোমার মতো যেন বুকভরা সাহস তাদের থাকে, তোমার মতো যেন চোখ কান মস্তিষ্ক খোলা থাকে- সেই আশায় বুক বেধে আমি লিখি, বলি, কাজ করি।
আজ তোমাকে দেখে, তোমার কথা শুনে, তোমার পদক্ষেপগুলো জেনে শুনে আমি কি ভীষণ আনন্দিত আর গর্বিত হয়েছি, তোমাকে কতটা বুঝিয়ে বলতে পারছি জানি না।
এদেশে মেয়েরা দিনের পর দিন যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। ক্লাসরুমে, অফিসরুমে, মিটিং রুমে, খোলা বাজারে, হাটে মাঠে ঘাটে, বাসে, রাস্তায়। এদেশে শিক্ষক সেজে থাকা পিশাচরা ছাত্রীর জীবন ধ্বংস করে দিতে পারে এক নিমেষে। এদেশে মেয়েরা কথা বলতে চাইলে তার টুটি চিপে ধরা হয়। তবু কেউ কথা বললে তাকে বে*শ্যা বলে ডাকা হয়।
তুমি এসবের ধার ধারোনি। তুমি ভয় পাওনি। তুমি হতাশায় ভেঙে পড়নি। নিজেকে শেষ করে দাওনি। তুমি মাথা উঁচু করে টানটান দাঁড়িয়েছ সোজা নিপীড়কের মুখোমুখি। তুমি সোজা স্পষ্ট গলায় বিচার দাবি করেছ। তুমি তাই করেছ যা তোমার করা উচিৎ। তুমি একটা সাবাশ মেয়ে। তুমি একটা অদ্ভুত সুন্দর মেয়ে।
তোমার সাথে আমার পরিচয় নেই। কিন্তু যদি কোনোদিন পরিচয় হয়, আমি ভীষণ সম্মানিত বোধ করবো। যদি তোমার সাথে কোনোদিন কথা বলার সুযোগ হয়, আমি নিশ্চয়ই আবেগাপ্লুত হবো। নিশ্চয় তুমি তখন আমাকে আবারো ভীষণ রকম উজ্জীবিত করবে। আমি এরইমধ্যে খুব অনুপ্রাণিত বোধ করছি।
তোমার শক্তিময়তা, তোমার তেজ, তোমার উঁচু মাথা, সরল ও সত্যভাষণ কি ভীষণ সাহসী আর তীক্ষ্ণ! কি দারুন একটা মেয়ে তুমি মীম! কি দারুন। আমি তোমাকে স্যালুট জানাই। আমি তোমাকে ভালবাসা জানাই। তোমার জয় হোক। অবশ্য তুমি এরইমধ্যে জিতে গেছ। তুমি সাহসী যোদ্ধা। তুমি লড়াকু মেয়ে। তুমি সব মেয়ের ভেতরে যে আগুন আর আলোর প্রদীপ জ্বালালে তার জন্য তোমাকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। আদর নিও মীম। ভালবাসা জেনো! আমারও ভালোবাসা জেনো মেয়ে.. তবে রুনা খানের এ লিখাটি না হলেও লিখেছেন মুনমুন শারমীন শামস্।
গেল শনিবার (১৬ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফাইরুজ অবন্তিকার 'আত্মহত্যা'র বিচারের দাবিতে উত্তাল হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাদী হয়ে মামলা করতে ও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে ১২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায় অবন্তিকার মতো শিক্ষক কর্তৃক যৌন হয়রানি ও কু-প্রস্তাবের স্বীকার হন ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের ১৩ তম আবর্তন ব্যাচের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মিম। তার দাবি, ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজক আবু শাহেদ ইমন তাকে দিনের পর দিন কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। তার কথায় সাড়া না দেয়ায় তাকে একাধিকবার পরীক্ষায় ফেল করানো হয় বলেও দাবি মিমের।
আপনার মতামত লিখুন :