ঢাকা : দেশীয় চলচ্চিত্রের এক সময়ের জনপ্রিয় নায়ক বাপ্পারাজ। অভিনয়ের পাশপাশি নির্মাণেও ঝুঁকেছিলেন। মাঝেমধ্যে পর্দায় দেখা গেলেও এখন একদমই অন্তরালে থাকেন। দেশের আলোচিত এই অভিনেতার মুখোমুখি হয়েছিলেন একটি গণমাধ্যমে। সেখানে কথা বলায় বেশ আলোচনা-সমালোচনা তৈরী করেন এই অভিনেতা। এক প্রশ্নের জবাবে বাপ্পারাজ বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন নির্মাতা নেই। ভালো নির্মাতা কে আছে বলেন?
বাংলাদেশে সে অর্থে ভালো কোনো পরিচালক নেই। ভালো পরিচালক, সঙ্গে ভালো গল্প না হলে তো ভালো সিনেমা হবে না। আমাদের ভালো মেকার দরকার। তাহলে ভালো ভালো সিনেমা নির্মাণ করা সম্ভব হবে। অথচ এফডিসির বাইরে থেকে যারা নির্মাণে আসছেন, তারাও শাকিব কেন্দ্রিক সিনেমা নির্মাণে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে আলাদাভাবে চলচ্চিত্রের এগিয়ে যাওয়া মুশকিল।’ অনেকেই তার কথা সম্মতি জানালেও বেশ কিছু পরিচালক অসম্মতি জানাতে দেখা গেছে। এ নিয়ে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত পরিচালক রিয়াজুল রিজু জানান, ‘বাংলাদেশে ভালো পরিচালক আছে প্রযোজক নাই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নাই যে কারনে পরিচালকরা বাধ্য হয়।’
ঈদে অনেকগুলো চলচ্চিত্র মুক্তি পাচ্ছে, আপনার মতে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে? এমন কথার প্রেক্ষিতে এই নায়ক বলেন, ‘কোথায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সবাই ঈদকে কেন্দ্র করে ছবি মুক্তি দিচ্ছে, এতে করে তো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ঈদ ছাড়া বাংলা ছবি চলে না। হয়তো একটা বা দুইটা সিনেমা চলবে। বাকিগুলো তো চলবে না। তাছাড়া অনেকগুলো তো ভাগে হলও পাবে না। আমাদের দেশের হল সংখ্যা কত? সবাই কি হল পাবে? পাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেখেন ঈদে ছবি চলে ঢাকায়। ঢাকাতেই হল যা আছে, তাও এতগুলো ছবি দেখানো সম্ভব না। তাছাড়া ঢাকার এত মানুষও তো থাকবে না। বাড়িতে চলে যাবে। আর গ্রামে টো এখন সেভাবে হলও নেই। ফলে ছবিগুলো দেখার সুযোগ নেই। বরং ঈদের পর কিছু ছবি মুক্তি দিলে কিছু সিনেমা ধীরে ধীরে চলত। কিন্তু সবার লোভ ঈদ।’
বর্তমান সুপারস্টার নায়ক শাকিব খান প্রসঙ্গে বাপ্পারাজ বলেন, ‘এখন সবাই শাকিব খান কেন্দ্রিক সিনেমা বানাতে চায়। সবাই শিওর শট খেলতে চায়। শাকিবের সিনেমা বানালেই ব্যবসাসফল। এই যে রায়হান রাফি, যে নিজ নামে পরিচিত হয়েছিল। সেও শাকিব খানের দিকে ভিড়ে গেল। ওই সিনেমা হিট হলে নাম হবে শাকিব খানের। সবাই বলবে শাকিবের সিনেমা হিট। তখন কিন্তু কেউ বলবে না রায়হান রাফির সিনেমা। পরিত্রাণের উপায় যদি বলেন, তাহলে তো বলতেই হয় শাকিব খানকে সিনেমা ছেড়ে দিতে হবে। তখন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ডুবে যাবে। আর ডুবে গেলেই উপায় খুঁজে পাবে মানুষ।’
দেশীয় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়ানোর চিন্তা নিয়ে এই নায়ক আরও বলেন, ‘কীভাবে দাঁড়াবে? যখন ভালো ভালো ছবি নির্মাণ হচ্ছিল, ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াতে ধরেছিল; তখনই চলচ্চিত্রের নেতারা হিন্দি ছবি আমদানির ঘোষণা দিল। শিল্পী সমিতি টাকা পাবে। শিল্পীরা কী পাবে? তারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে। হিন্দি ছবির আমদানিতে শিল্পীদের কোনো লাভ নেই। লাভ নেতাদের, তারা নেতা নেত্রী হয়ে টাকা কামাবে। কিন্তু আমাদের মতো শিল্পীরা বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াবে।’
এদিকে ওটিটিকে বেশ ভাল সম্ভাবনায় দেখছেন নায়ক বাপ্পারাজ। তিনি এটাকে সম্ভাবনার জায়গায় রেখেছেন। বাংলা ভালো ভালো কন্টেন্ট তৈরি হচ্ছে বলে জানান। দেশের কিছু দারুণ সিরিজ ফিল্ম দেখেছেন। কলকাতার নির্মাতারাও ভালো বানাচ্ছেন। এক ধরনের প্রতিযোগিতা হচ্ছে বলে জিনিসগুলো ভালো হচ্ছে। আর এখন এমন একটা সময় মানুষ ঘরকেন্দ্রিক বিনোদনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। তবে তিনি আর নির্মাণে জড়াবেন না। তার বাবা নায়ক রাজ রাজ্জাক মারা যাওয়ার পর হতাশ হবার কথা জানান। এখন থেকে অভিনয় সরব থাকবেন। নিজের পছন্দের চরিত্র পেলে অভিনয়টা চালিয়ে যাবেন এই অভিনেতা।
এমটিআই