ঢাকা: বাংলা সিনেমার জগতে মার্শাল আর্টে পারদর্শী যে কয়জন অভিনেতা রয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ড্যানি সিডাক। ১৯৮৬ সালে ‘লড়াকু’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন অভিনেতা। অভিনয়ে নিজের শৈলী দেখাতেই পছন্দ করতেন এই অভিনেতা। চলচ্চিত্রে কখনোই তিনি ডামি ব্যবহার করতেন না।
প্রথম সিনেমা ‘লড়াকু’তে নিজ হাতে ভেঙেছেন ১২ ইঞ্চি পুরু বরফ। এরপর তিনি বাঘ, সিংহ ও অজগর সাপের সঙ্গে সরাসরি লড়াই করেছেন। এসব করতে গিয়ে একবার নির্ঘাত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন বলে জানান এই অভিনেতা।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড্যানি সিডাক বলেন, “নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ভাই আমাকে বললেন, ‘বাঘ, সাপের সঙ্গে লড়াই করেছ, এবার কিসের সঙ্গে লড়াই করবা? তোমার সঙ্গে এবার ২০ জন পালোয়ান দিব।’আমি বলেছি, আমি একাই এবার সিংহের সঙ্গে লড়াই করব। ঝন্টু ভাই বললেন, ‘সত্যি সত্যি পারবা?’ আমি বললাম, সত্যি পারব।”
তিনি বলেন, “যথারীতি আমি আর সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর ভারতে চলে গেলাম। ভারতের ত্রিবান্দ্রাম নামক এক জায়গায় সার্কাস দলের সঙ্গে কথা বলি। তাদেরকে বলি, আমি সিংহের লড়াই করব। কিছুতেই ওরা রাজি হচ্ছিল না। ওরা আমাকে বলেছিল, ‘তুমি কি পাগল, সরাসরি ফাইট করবা! সিংহ তো তোমাকে চেনে না। যে পালে, তাকে চেনে।’ আমি তার পরও বলি, আমি পারব। তোমরা পাশে থাইকো।”
বন্ড পেপারে সাইন করে শুটিং শুরু করেন ড্যানি সিডাক। তিনি বলেন, ‘বন্ড পেপারে সাইন করে ওদের রাজি করালাম। আমাকে সিংহের খাঁচার ভেতর ঢুকিয়ে তালা মেরে দেওয়া হলো। পরিচালকের কথামতো শট দিতে গিয়ে আমি সিংহটাকে পেছন থেকে ধরি। আধা মিনিটের মধ্যে আমাকে মাথা দিয়ে বাড়ি মেরে সিংহটা আমাকে নিয়ে পড়ে গেল। ঘুরে কামড় দিতে চেয়েছে আমাকে। তার আগে পা দিয়ে মারছিল। মনে হচ্ছিল, আমার শরীরটাকে লোহার রড দিয়ে পেটাচ্ছে। আমি পারছিলাম না। বারবার বলছিলাম, আমি আর পারছি না। এরপর লোহার ক্যাচি দিয়ে আমাকে কোনোমতে উদ্ধার করে। এরপর আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আমার শরীরে ১০২ ডিগ্রি জ্বর আসে।’
এর পরও হাল ছাড়েননি ড্যানি সিডাক। পরের দিন আবারও সিংহের সঙ্গে লড়াই করেন। ড্যানি সিডাক বলেন, “পরের দিন সকালে গিয়েছি। ওরা অন্য একটি সিংহ নিয়ে এলো। আমাকে বুদ্ধি শিখিয়ে দিল। বলল, ‘যখন দেখবা সিংহের ঘাড়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে তখন তুমি সামনে থেকো না।’ সেটা খেয়াল করেই আমি শুটিংটা করেছি। সিংহের খাঁচা থেকে বের হওয়ার পর দেখতে পাই, বাইরে হাজার হাজার তামিল লোক জড়ো হয়ে গেছে। তারা দেখতে এসেছে, সিংহের সঙ্গে সরাসরি লড়াই করেছে!”
আশি ও নব্বইয়ের দশকের খল অভিনেতা ড্যানি সিডাক এখনো চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় করে চলেছেন। ‘বনের রাজা টারজান’, ‘সুপারম্যান’, ‘গরিবের রাজা রবিনহুড’, ‘সিংহ পুরুষ’, ‘লেডি র্যাম্বো’, ‘বাঘা বাঘিনী’ ও ‘রূপের রানি গানের রাজা’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন ড্যানি সিডাক। অভিনয়ের বাইরে চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনাও করেছেন তিনি।
আইএ