ঢাকা : এক মাস না পেরোতেই বেঁকে বসলেন নিপুণ। সোজা চলে গেলেন আদালতে। আইনজীবী ধরে করিয়েছেন রিট। চাইছেন শিল্পী সমিতির নতুন এই কমিটির ফলাফল স্থগিত করা হোক!
অনেকেই বলেন, যাদের হাতে সিনেমার কাজ নেই, তারাই সমিতি-সংগঠন নিয়ে ডুবে থাকেন। এর বাস্তবতাও দেখা যায় হরহামেশা। যেমন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি; গত কয়েক বছর ধরে সংগঠনটি রীতিমতো নাট্যমঞ্চে পরিণত হয়েছে! যেখানে চেয়ার দখল নিয়ে অভিনব সব লড়াই চলে, চলছে। এর শুরুটা হয়েছিল ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদটি নিয়ে; যেটার জন্য প্রকাশ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত গিয়েছিলেন নিপুণ আক্তার ও জায়েদ খান।
সেই অধ্যায়ের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটেছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচনের মাধ্যমে। এবারও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন নিপুণ। কিন্তু হেরে গেছেন ডিপজলের কাছে। নির্বাচনে মিশা সওদাগর ও ডিপজল প্যানেল নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল। ফলাফল ঘোষণার পর বিজয়ীদের মালা পরিয়ে শুভেচ্ছাও জানান পরাজিত নিপুণ।
কিন্তু এক মাস না পেরোতেই বেঁকে বসলেন নিপুণ। সোজা চলে গেলেন আদালতে। আইনজীবী ধরে করিয়েছেন রিট। চাইছেন শিল্পী সমিতির নতুন এই কমিটির ফলাফল স্থগিত করা হোক! গত মঙ্গলবার (১৪ মে) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় নিপুণের হয়ে রিটটি করেছেন আইনজীবী পলাশ চন্দ্র রায়। আগামী ১৯ মে রিটের শুনানি হবে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের বেঞ্চে।
ঠিক কেন এই রিট করলেন নিপুণ? কী কারণে তিনি ফলাফল স্থগিত চাইছেন? সে বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলতে অবশ্য পারছেন না। কারণ তিনি রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখান থেকেই তিনি জানান, তার কাছে অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ রয়েছে। একটি অনিয়মের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়ে নিপুণ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বাতিল ভোটের সংখ্যা সঠিক দেননি। আমার জানামতে, ৮১টি ভোট বাতিল হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ৪০টি ভোট বাতিল দেখিয়েছে। এ নিয়ে স্পষ্ট করে কোনও কিছুই আমাদের প্যানেলকে জানায়নি তারা।’
ফলাফল ঘোষণার পর এভাবেই হাসিমুখে মিশা-ডিপজলের পাশে ছিলেন নিপুণনিপুণ জানালেন, আরও আগেই রিট করার কথা ভেবেছিলেন তিনি। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা এবং জরুরি কাজে বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করে রাখায় সেটা সম্ভব হয়নি। তবে বিদেশ যাওয়ার আগেই আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে গেছেন তিনি। সেই সুবাদেই রিট করা হয়েছে।
এদিকে নিপুণের হঠাৎ এমন কাণ্ড বিশ্বাস হচ্ছে না শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মিশা সওদাগরের। তিনি বলেছেন, ‘আমি এখনও হাতে কোনও কাগজ পাইনি যে, এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে। তাছাড়া নিপুণ আমার ছোট বোন। ছোট বোন এমন কাজ করতে পারে, আমি ভাবতেই পারি না। আমার মনে হচ্ছে এটা সম্ভব নয়, আর নিপুণ তো আমেরিকায় সে কীভাবে এটা করে!’
গোটা বিষয়টি নিয়ে এখনই আলোচনা করতে চান না মিশা। যেহেতু আইনি পর্যায়ে গড়াচ্ছে, সেটাকে আইনজীবীর মাধ্যমেই সামলানো হবে বলে জানান এই অভিনেতা।
শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে ঘুরেফিরে এমন পরিস্থিতি একদমই ভালো চোখে দেখছেন না সিনেমা অঙ্গনের মানুষেরা। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে নিন্দা প্রকাশ করেছেন। শিল্পীদের আরও সংযত হওয়া উচিত বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ তারকারা।
নিপুণ আক্তারউল্লেখ্য, গত ১৯ এপ্রিল এফডিসিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন খোরশেদ আলম খসরু। ফলাফলে দেখা যায়, ২৬৫ ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মিশা সওদাগর। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মাহমুদ কলি পান ১৭০ ভোট। আর সাধারণ সম্পাদক পদে ২২৫ ভোট পেয়ে জয়ী হন ডিপজল; বিপরীতে তার চেয়ে ১৭ ভোট কম পেয়ে পরাজিত হন নিপুণ।
এমটিআই