Menu
ঢাকা: সংস্কৃতি খাতে জাতীয় বাজেটের বরাদ্দ অত্যন্ত কম বলছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। একই সঙ্গে তাদের অভিযোগ, বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব আছে। ফলে অর্থের সঠিক ব্যবহার হয় না। তবে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, পরিকল্পনা সম্মিলিতভাবেই করা হয়। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে অর্থের সঠিক ব্যবহার না হওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। আগামী বাজেটের আকার হচ্ছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, প্রস্তাবিত বাজেটে তারা বরাদ্দ চেয়েছে ৭৭৯ কোটি টাকা। শতাংশের হিসাবে তা শূন্য দশমিক ১০।
তবে সংস্কৃতি খাতে জাতীয় বাজেটের বরাদ্দ অত্যন্ত কম বলছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। একই সঙ্গে তাঁদের অভিযোগ, বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব আছে। ফলে অর্থের সঠিক ব্যবহার হয় না।
তবে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, পরিকল্পনা সম্মিলিতভাবেই করা হয়। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে অর্থের সঠিক ব্যবহার না হওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। আগামী বাজেটের আকার হচ্ছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, প্রস্তাবিত বাজেটে তারা বরাদ্দ চেয়েছে ৭৭৯ কোটি টাকা। শতাংশের হিসাবে তা শূন্য দশমিক ১০।
বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট বাজেটের দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ (৬৯৯ কোটি টাকা) বরাদ্দ ছিল সংস্কৃতি খাতে। আগের দুই বাজেটেও বরাদ্দের হারে একই ধারাবাহিকতা ছিল। গত ১৫ বছরের মধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছরে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ ছিল সর্বোচ্চ দশমিক ১৬ শতাংশ। তখনকার বাজেটের অনুপাতে টাকার পরিমাণ ছিল ২১৪ কোটি।
কয়েক বছর ধরে সংস্কৃতি খাতে জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম ১ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আসছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। নতুন অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে এখন তারা একই দাবি জানাচ্ছেন।
নাট্যজন মামুনুর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সংস্কৃতির যে গুরুত্ব, তার প্রতিফলন বাজেটে দেখা যায় না। নাট্যজন মামুনুর রশীদ আরও বলেন, সংস্কৃতি না থাকলে দেশ কতখানি দুর্নীতিপরায়ণ হয়, তার উদাহরণ তো দেখাই যাচ্ছে। সংস্কৃতি খাতে বাজেট খুব কম। আবার এই কম বরাদ্দের অর্থ ফেরতও যায়। এমনটা কেন হয়, তা স্পষ্ট হওয়ার দরকার।
দেশের সংস্কৃতিচর্চা শিল্পকলা একাডেমির সীমানার মধ্যে আটকা পড়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়াও মামুনুর রশীদ বলেন, সেখানে সাধারণ মানুষ নিজেদের সংযুক্ত করতে পারে না।
কিন্তু আলাদা করে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো ও জনবান্ধব সংস্কৃতিচর্চা নিশ্চিত করার দাবি সংস্কৃতিকর্মীদের। তারা বলছেন, তেমনটা না হলে সংস্কৃতিচর্চা শুধু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নগরকেন্দ্রিক হয়ে থাকবে। এ নিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন কয়েক বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছে।
সংস্কৃতি খাতে যতটুকু বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তা খরচ করার ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সঠিক জায়গায় ব্যয়ের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। তিনি বলেন, সংস্কৃতিচর্চাসহ উন্নত মানের গবেষণার জন্য ন্যূনতম বরাদ্দ প্রয়োজন। এখানে অর্থাভাব রয়েছে। আবার সুষ্ঠু পরিকল্পনা, দক্ষ জনবল, সদিচ্ছারও অভাব আছে।
সংস্কৃতি বাজেট
১৯৮৮ সালে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় নামে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। দেশজ সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সমকালীন শিল্প-সাহিত্য সংরক্ষণ, মুক্তচিন্তার প্রসার ও গবেষণা-উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির মানসিক বিকাশ-উৎকর্ষসাধন মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য। ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের অধীন ২১টি দপ্তর-সংস্থা রয়েছে।
বাজেটের অর্থ পরিচালন ও উন্নয়ন খাত-এ দুই ভাগে খরচ করে মন্ত্রণালয়। পরিচালন খাতের মধ্যে আছে নগদ মজুর ও বেতন, অনুষ্ঠান-উৎসব, বিশেষ অনুদান, কল্যাণ অনুদান, গবেষণা, বইপুস্তক বাবদ মঞ্জুরি, সাংস্কৃতিক মঞ্জুরি। এগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয় সাংস্কৃতিক মঞ্জুরিতে। অন্যদিকে উন্নয়ন খাতের অর্থ ব্যয় হয় অবকাঠামো নির্মাণ, সম্প্রসারণ, সংস্কারসহ বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম পরিচালনায়।
গত ৩ মে মন্ত্রণালয়ের হিসাব বিভাগ জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিচালন বরাদ্দ ছিল ৪৩৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আর উন্নয়ন বরাদ্দ ২৬২ কোটি ৮ লাখ টাকা। মোট বরাদ্দ ৬৯৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অভাব আছে। ফলে অর্থের সঠিক ব্যবহার হয় না।
মন্ত্রণালয় যা বলছে
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাজেট ব্যবস্থাপনা বিভাগ বলছে, বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা সম্মিলিতভাবেই করা হয়। আর বাজেটের অর্থ ফেরত যাওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, তার পরিমাণ খুবই সামান্য।
মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বাজেট ব্যবস্থাপনা ও অডিট অধিশাখা) মো. আতাউর রহমান বলেন, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে বাজেটের অর্থ ফেরত যাওয়ার অভিযোগটি ঠিক নয়। মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট পরিকল্পনা থাকে। ৯০ শতাংশের বেশি অর্থই খরচ হয়। উন্নয়ন খাতে প্রশাসনিক জটিলতা থাকে, মামলা থাকে। এসব কারণে কিছু অর্থ ফেরত যায়। কিছু কাজে বাইরের ঠিকাদারদের ওপর নির্ভর করতে হয়। কখনো কখনো দেশের বাইরে থেকে পণ্য আমদানি করতে এলসি খোলার বিষয় থাকে, যা সময়সাপেক্ষ। একেবারে যে দক্ষতার অভাব নেই, তা তিনি বলবেন না। তবে সেটি কোনো বড় কারণ নয়। এসব বিষয়ে কিছু অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খরচ হয় না।
পরিকল্পনার মন্ত্রণালয়ের হিসাব বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, আওতাধীন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি করে পরিচালনা পর্ষদ (গভর্নিং বডি) আছে, যেখানে দেশের প্রথিতযশা ব্যক্তিরা থাকেন। মন্ত্রণালয় থেকেও সদস্য থাকেন। সবার পরামর্শেই কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। এখানে মন্ত্রণালয়ের একার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।
‘এভাবে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন হয় না’ সামগ্রিক বিষয় জানিয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান নূরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সঠিক সময়ে কাজগুলো শেষ না হলে বরাদ্দ টাকার একটি অংশ ফেরত যায়। গণগ্রন্থাগারের ভবন নির্মাণ, জাতীয় জাদুঘরের স্থাপনা, নজরুল ইনস্টিটিউট ভবনের কাজ আমার জানামতে আরও আগেই শেষ হওয়ার কথা, যা এখনো শেষ হয়নি।’
মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পর্কে স্পষ্টীকরণ থাকা দরকার বলে মনে করেন আসাদুজ্জামান নূর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যাদের (প্রতিষ্ঠান) গবেষণার কাজ এগিয়ে নেওয়ার কথা, তারা গবেষণায় গুরুত্ব না দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে টাকা খরচ করছে। এভাবে একটি দেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন হয় না। সংস্কৃতির চর্চা বাড়াতে হলে সৃজনশীল চিন্তা করা শিখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সৃজনশীল প্রতিযোগিতার চর্চা বাড়াতে হবে। সংস্কৃতিকে শুধু প্রতিষ্ঠানের মধ্যে না রেখে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
এএন/এআর
© 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সোনালীনিউজ.কম
Powered By: Sonali IT