ঢাকা : কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঘটে যাওয়া সহিংসতা-সংঘর্ষ, কারফিউ, সাধারণ ছুটি এবং ইন্টারনেট সেবার বিচ্ছিন্নতা ছাপ ফেলেছে দেশের বিনোদন জগতের নানা পর্যায়ে।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শুটিং বন্ধ থাকায় ঘরে থাকতে হয়েছে অভিনয় শিল্পীদের। তাদের মধ্যে বর্ষীয়ান অভিনেতা আবুল হায়াত, তারিক আনাম খান, আফসানা মিমি, হালের অভিনেতা সিয়াম আহমেদ এবং পরিচালক শবনম ফেরদৌসীর সঙ্গে কথা হয়েছে।
তারা ফেলে আসা কয়েক দিনকে ‘অন্যরকম সময়’ হিসেবে বর্ণনা করে এমন সহিংস পরিস্থিতির যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার কথা বলেছেন। সব সামলে শুটিংয়ে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
‘মৃত্যুর খবর শুনে চোখে পানি চলে আসে’
অভিনেতা আবুল হায়াত বললেন, তিনি অনেকদিন ধরে বাসাতেই থাকেন, বিশ্রামে থাকার চেষ্টা করেন। তবে গত কয়েক দিনের সহিংস পরিস্থিতি তাকে পীড়া দিয়েছে, মনকে স্থির হতে দেয়নি। বিশেষ করে একের পর এক মৃত্যুর খবর যখন আসতে থাকে, নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি এই অভিনেতা।
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে তো নিজেকে ভালো রাখা যায় না। এতোগুলো বাচ্চার মৃত্যুর খবর। আমাদের বিল্ডিংয়ের ফারহান ফাইয়াজ নামের একটি ছেলে মারা গেছে। এসব খবরে ভালো থাকার কথা না, মৃত্যুর খবর শুনে চোখে পানি চলে আসে।
এই আন্দোলনকে ঘিরে মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবেই মানা যায় না বলে মন্তব আবুল হায়াতের।
‘সবকিছু সুস্থ হোক’
দেশের যে পরিস্থিতি গেছে এবং যাচ্ছে, তাতে খুব একটা ভালো থাকা যায় না বলে মন্তব্য অভিনেত্রী-নির্দেশক আফসানা মিমির।
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলতেও চাই না। সবাই সাবধানে থাকুক, সুস্থ হয়ে উঠুক সব কিছু এটাই চাওয়া।
‘জীবনের এক অন্য সময় পার করলাম’
টেলিভিশন, সিনেমা এবং ওটিটির কাজ নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় কাটে অভিনেতা তারিক আনাম খানের। শুটিং বন্ধ হওয়ায় আরো অনেকের মত তিনিও বাসাতেই ছিলেন।
এই অভিনেতা বলেন, শুটিং বন্ধ আবার ইন্টারনেট ছিল না, সব মিলিয়ে কোনোরকম দিন কেটেছে। ওটিটির কাজগুলো দেখব সেটারও সুযোগ নেই।
কীভাবে সময় কাটিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুটিং বন্ধ, কাজ বন্ধ, ঘরে বসে বাইরে কি হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না। টেলিভিশনে নিউজ দেখেছি, বাজার করে, বই পড়েই কেটেছে। সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়েছে ফোনে কল করে। এই পরিস্থিতিটা তো নিশ্চিতভাবে আনন্দের পরিস্থিতি ছিল না।
জীবনের একটা ‘অন্য সময়’ দেখলেন বলে ভাষ্য এই অভিনেতার।
এত মৃত্যু এগুলো কাম্য ছিল না। এখন একটাই চাওয়া সব কিছু দ্রুত ঠিক হয়ে যাক।
‘এমন দিন দুঃখজনক’
তরুণ অভিনেতা সিয়াম আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হওয়ার পর এমন সময়ের মুখোমুখি হওয়া ‘দুঃখজনক’।
একটা ‘দমবন্ধ’ সময় পার করার কথা জানিয়ে সিয়াম বলেন, বাসায় আছি গত কয়েকদিন ধরে। অন্য সবার মত আমিও দ্রুত স্বাভাবিক সময়ে ফিরতে চাই।
‘হুট করেই সব কেমন হয়ে গেল’
বাইরে সংঘর্ষ-প্রাণহানি এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার সময়টা পরিচালক শবনম ফেরদৌসীর কাছে ছিল ‘দুবির্ষহ’। তিনি বলেন, হুট করে সব কেমন হয়ে গেল। কেবল ফোনে সবার সঙ্গে কথা বলা গেছে।
পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া ‘ঘরবন্দি’ হওয়ার বিষয়টিকে ‘নতুন অভিজ্ঞতা’ হিসেবে বর্ণনা করে এই শবনম বলেন, আমার 'আজব কারখানা' সিনেমাটা হলে ভালোই চলছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সহজে আগের অবস্থায় যাবে কি না সেই চিন্তা তো আছেই। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে। অপেক্ষা করছি মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হক, মোবাইলে ইন্টারনেট ফিরে আসুক।
কিছুদিন আগে এক রকস্টারের জীবন নিয়ে মুক্তি পেয়েছে শবনম পরিচালিত সিনেমা ‘আজব কারখানা’। সেখানে রকস্টার হয়েছেন কলকাতার অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।
এমটিআই