ঢাকা: একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা, নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক আবুল হায়াতের ৮১’তম জন্মদিন আজ (৭ সেপ্টেম্বর)। থিয়েটার, টিভি নাটক, বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্রে এখনো তার উপস্থিতি দর্শককে মুগ্ধ করে। তবে দিনটিকে ঘিরে যে উৎসবের কথা ছিলো সেই সিদ্ধান্ত থেকে তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে এবং দেশে বন্যা দুর্গত এলাকাবাসীর কথা ভেবে সরে এসেছেন।
আবুল হায়াত জানান, রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসাতেই স্ত্রী’র সঙ্গে ঘরোয়াভাবে দিনটি উদযাপন করবেন। তবে একেবারেই অনানুষ্ঠানিকভাবে আজ বিকেলে ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’র উদ্যোগে আবুল হায়াতের ৮১’তম জন্মদিন উদযাপন করা হয়।
মূলত, সহশিল্পীদের বিশেষ অনুরোধেই তিনি এই অনানুষ্ঠানিক আয়োজনে যোগ দিতে সম্মত হয়েছেন।জন্মদিন ঘিরে নানান পরিকল্পনা থাকলেও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি চিন্তা করে সেসব আয়োজন থেকে সরে এসেছেন আবুল হায়াত।নিজের বিশেষ দিনটি পারবারের সঙ্গে ঘরোয়াভাবেই উদযাপন করতে চান বরেণ্য এই অভিনেতা।
প্রসঙ্গত, আবুল হায়াতের জন্ম ১৯৪৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে।বাবার চাকরির সুবাদে বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। ঢাকা ওয়াসার প্রকৌশলী পদে চাকরি জীবন শুরু করলেও এক বছর পর ১৯৬৯ সালে অভিনয়ে নাম লেখান তিনি।
থিয়েটারের মাধ্যমে অভিনয়ের যাত্রা শুরু আবুল হায়াতের।‘ইডিপাস’নামের নাটক দিয়ে টেলিভিশনের পর্দায় অভিষেক হয় আবুল হায়াতের। এরপর থেকে নিয়মিত নাটক, সিনেমায় অভিনয় করে দেশজুড়ে পেয়েছেন তারকাখ্যাতি।এখনও সমানতালে অভিনয় করে চলেছেন। পাশাপাশি দাম্পত্যজীবনেও ভীষণ সুখী এই অভিনেতা। বর্তমানে দেশের অন্যতম নাট্যদল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি।
আবুল হায়াতের উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো— ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অন্য ভুবনের ছেলেটা’, ‘দ্বিতীয় জন্ম’, ‘শেখর’, ‘অয়োময়’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘আজ রবিবার থেকে জোছনার ফুল’, ‘শুকনো ফুল রঙিন ফুল’, ‘আলো আমার আলো’, ‘নদীর নাম নয়নতারা’, ‘খেলা’, ‘শনিবার রাত ১০টা ৪০ মিনিট’, ‘হাউজফুল’, ‘এফএনএফ’সহ অসংখ্য দর্শকনন্দিত নাটকে অভিনয় করে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।
এদিকে চলতি মাসের একেবারেই শেষপ্রান্তে প্রকাশ করার কথা রয়েছে আবুল হায়াতের আত্নজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘রবি পথ’। বিগত দশ বছর যাবত তিনি তার এই আত্নজীবনী মূলক গ্রন্থটি লিখে যাচ্ছেন বলে জানালেন।আত্মজীবনীতে নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। রবি পথের প্রচ্ছদ করেছেন তাঁর বড় মেয়ে অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত। প্রকাশ হবে সুবর্ণ প্রকাশনী থেকে। জন্মদিন, অভিনয়, নির্মাণ এবং আত্নজীবনী মূলক গ্রন্থ প্রসঙ্গে আবুল হায়াত বলেন, বইটি মূলত আমার স্ত্রী, আমার দুই সন্তান বিপাশা নাতাশা এবং তৌকীর, শাহেদের প্রবল আগ্রহে এবং চাপেই দীর্ঘ দশ বছর সময় লাগলেও অবশেষে শেষ করতে পেরেছি। শেষ পর্যন্ত যে বইটি প্রকাশ করতে পারছি, এটাই আসলে অনেক কিছু। ভালো গল্প পেলে কিংবা সময়োপযোগী গল্প রচনা করতে পারলে এখনো নাটক নির্মাণের ইচ্ছে আছে। আর অভিনয়তো এখনো করে যাচ্ছি। জীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু আম জনতার যে ভালোবাসা, তাদের কাছ থেকে যে সম্মান পেয়েছি তারসাথে আসলে কোনোকিছুরই তুলনা চলেনা। তাদের এই ভালোবাসার মাঝেই আমি বেঁচে থাকতে চাই। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অভিনয় করে যেতে চাই। সবাই আমার জন্য আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।’
ইউআর/আইএ