ঢাকা : আজ বাংলাদেশের সিনেমার অমর নায়ক সালমান শাহর ৫৩তম জন্মবার্ষিকী। বেঁচে থাকলে আজ তিনি ৫৪তে পা দিতেন এবং তাঁর জন্মদিন ঘিরে যে বর্ণাঢ্য আয়োজন হতো, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়। অল্প সময়ে ছোট-বড় সবার মন কেড়ে নেন এ নায়ক।কিন্তু ভক্তদের কাঁদিয়ে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন এই ক্ষণজন্মা অভিনেতা। তবে তার মৃত্যু নিয়ে আজও রয়েছে রহস্য।আজও কোটি ভক্তের হৃদয়ের সঙ্গে মিশে আছে স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহ। জন্ম ও মৃত্যু তার একই মাসে। সেপ্টেম্বর মাসটি ভক্তদের জন্য আনন্দ-বেদনার মাস।
নিজস্ব স্টাইল, ফ্যাশন, অভিনয়শৈলী আর ব্যবহারগুণে সুনাম কুড়ান সালমান। শোবিজে তাঁকে ডাকা হয় নায়কদের নায়ক, আধুনিক চলচ্চিত্রের সুপারস্টার, স্বপ্নের নায়কসহ নানা উপাধিতে।সালমান শাহ’র জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলায়। তার পিতার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। সালমানের দাদার বাড়ি সিলেট শহরের শেখঘাটে আর নানার বাড়ি দারিয়া পাড়ায়।যে বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউজ’।তার নানা পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ অভিনয় করেছিলেন। অভিনয়ে সালমানও তাই সেই নানার কারণেই আসা। স্কুলে পড়ার সময় সালমান শাহ বন্ধুমহলে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন।১৯৮৬ সালে ছায়ানট থেকে পল্লীগীতিতে পাস করেছিলেন তিনি।
পরিবারের বড় ছেলে ছিলেন ইমন। তবে চলচ্চিত্রে সালমান শাহ নামেই পরিচিতি পান তিনি। অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ থাকায় ১৯৮৫ সালে বিটিভির ‘আকাশ ছোঁয়া’ নাটক দিয়ে অভিনয় শুরু সালমানের।১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে রুপালি পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তিনি।এই সিনেমাতেই পরিচালক তাঁর নাম ইমন থেকে সালমান শাহ রাখেন। তাঁর সঙ্গে আরও অভিষেক হয় চিত্রনায়িকা মৌসুমীর।প্রথম সিনেমাতেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান দুজনে। সালমান শাহর সঙ্গে চিত্রনায়িকা শাবনূরের জুটি ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা জুটিও বলেন অনেকে। এই জুটির প্রতিটি ছবিই সুপারহিট। তাদের পর্দার রসায়ন ছিল নজরকাড়া।সালমানের সঙ্গে জুটি হয়ে বিভিন্ন সিনেমায় অভিনয় করেছেন শাবনাজ, শাহনাজ, লিমা, শিল্পী, শ্যামা, সোনিয়া, বৃষ্টি, সাবরিনা ও কাঞ্চি।
মাত্র তিন বছরের ক্যারিয়ারে সর্বমোট ২৭টি সিনেমায় কাজ করেন সালমান।সালমান শাহ অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো- ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘জীবন সংসার’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘সুজন সখী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেম প্রিয়াসী’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘তোমাকে চাই’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বুকের ভেতর আগুন’ ইত্যাদি। এসব সিনেমা দিয়ে আজও অমর হয়ে আছেন এ তারকা।সালমানই একমাত্র নায়ক, সর্বমহলে যিনি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে এবং তরুণদের স্টাইল আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির দর্শকদের হলে গিয়ে ছবি দেখার অনভ্যাস দূর করেছিলেন সালমান। তাই তার ক্যারিয়ারের ২৭টি সিনেমার সবকটিই ছিল ব্যবসাসফল।
চলচ্চিত্রে আসার আগেই ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রী ছিলেন সামিরা হক।দাম্পত্য জীবনের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎই সালমানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। এদিন ঢাকার ইস্কাটনে নিজ বাসার সিলিংফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার দেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য থেকে যায়।
সালমান শাহকে বলা হয় ঢাকাই সিনেমার ‘রাজপুত্র’। মৃত্যুর দুই যুগ পরও তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা ও আবেদন কমেনি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আরও অনেক বেশি রঙিন হয়েছে তাকে নিয়ে ভালোবাসার রঙ। এখনো টিভি পর্দায় তার অভিনীত ছবি প্রচারিত হলে দর্শক আগ্রহ নিয়ে দেখেন। নব্বইয়ের দশকে রুপালি পর্দায় অভিষেক ঘটা সালমান শাহ পর্দা থেকে বেরিয়ে হয়ে উঠেছিলেন কোটি তরুণ-তরুণীর স্বপ্নের নায়ক। শুরুতেই বিশাল সাফল্য দিয়ে সালমান প্রাণসঞ্চার করে দিলেন মৃতপ্রায় চলচ্চিত্রে। তারপর শুধুই ইতিহাস। অনেকেই বলে থাকেন সালমানের মতো জনপ্রিয় নায়ক হয়তো আর কখনোই কোনোদিন জন্মাবে না এই ইন্ডাস্ট্রিতে।
ইউআর/এমটিআই