• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১
হিমঘরে মনি কিশোরের মরদেহ

মেয়ে চান দাফন, ভাই-বোনেরা চান শেষকৃত্য 


বিনোদন ডেস্ক: অক্টোবর ২২, ২০২৪, ০৮:০৩ পিএম
মেয়ে চান দাফন, ভাই-বোনেরা চান শেষকৃত্য 

ঢাকা: নব্বই দশকের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মনি কিশোরের মরদেহ পড়ে আছে হিমঘরে। বাবার মরদেহ গ্রহণ করতে এখনও দেশে আসেননি প্রবাসী মেয়ে নিন্তি চৌধুরী। বাবার মরদেহ মুসলমান ধর্মরীতি মেনে দাফন করা হবে, সেটাই তার ইচ্ছে। 

অন্যদিকে মনি কিশোরের ভাই-বোনরা চান তাদের ভাইয়ের শেষকৃত্য হোক সনাতন ধর্মের রেওয়াজ মেনে!

গত শনিবার রাতে রাজধানীর রামপুরার ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় শিল্পী মনি কিশোরের মরদেহ।

ময়নাতদন্তের জন্য রোববার মরদেহটি নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তখন থেকে মর্গেই রয়েছে নব্বই দশকের জনপ্রিয় এই শিল্পীর নিথর দেহ। তার বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা অশোক কুমার মণ্ডল জানিয়েছেন, শিল্পীর মরদেহ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হবে। জীবদ্দশায় মনি কিশোর তার মেয়ে নিন্তি চৌধুরীকে এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন।

নব্বই দশকের শুরুতে সংগীতে ক্যারিয়ার শুরু করেন মনি কিশোর। ‘চার্মিং বউ’ নামের একটি আধুনিক গানের অ্যালবামের ‘কী ছিলে আমার’ শিরোনামের একটি গান শিল্পীকে পরিচিতি এনে দেয়। পরে একের পর এক অডিও অ্যালবাম প্রকাশ করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। প্রায় ত্রিশের বেশি একক অ্যালবাম প্রকাশের পর একদিন হঠাৎ করেই নিশ্চুপ হয়ে যান এই শিল্পী।

সংগীতে সরব থাকা অবস্থায় শামীমা চৌধুরীকে বিয়ে করেছিলেন মনি কিশোর। জানা গেছে, মুসলমান এই নারীকে বিয়ের সময়ই সনাতন থেকে মুসলমান হিসেবে ধর্মান্তরিত হন শিল্পী। যদিও বেশিদিন টেকেনি ওই সংসার। সেই সংসারের সন্তান নিন্তি চৌধুরী। এ কারণেই মনি কিশোরকে মুসলমান ধর্মের নিয়ম মেনে দাফন করানোর পক্ষে তার বড় ভাই অশোক কুমার। 

তিনি বলেন, ‘মনি বেঁচে থাকা অবস্থায় দাফনের বিষয়টি একমাত্র মেয়ে নিন্তিকে জানিয়েছিল। মেয়ে আমার বড় ভাইকে জানিয়েছে বিষয়টি। মেয়েকে যেহেতু বলে গেছে, তাই তার ইচ্ছানুসারে দাফন করাই হবে। এ নিয়ে আমরা অন্য কোনো সিদ্ধান্তে যাব না।’

রামপুরা থানার উপপরিদর্শক খান আবদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আপাতত শিল্পীর মরদেহ মর্গেই থাকবে। তার মেয়ে দেশে ফিরলেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দূতাবাসের মাধ্যমে চিঠি পাঠিয়েও যদি কাউকে দায়িত্ব দেন, তাহলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হতো। তিনি যে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন, এ রকম প্রমাণাদি আমাদের সরবরাহ করলেও হতো। মনি কিশোর সাহেবের মেয়ে নিন্তি চৌধুরীর সঙ্গে আমাদের ওসি স্যারের কথা হয়েছে।’

ওসি (তদন্ত) শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নিন্তি চৌধুরী হোয়াটস অ্যাপে আমাদের কিছু তথ্য পাঠিয়েছেন। আমরা তাকে পরামর্শ দিয়েছি, স্থানীয় দূতাবাস অথবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যেন তিনি সেসব পাঠান। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, তার বাবাকে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করতে। অন্যদিকে পরিবার, ভাই-বোনেরা চেয়েছিলেন হিন্দুধর্মের রীতি মেনে শেষকৃত্য করতে। দুই পক্ষ থেকে দুই ধরনের বক্তব্যের কারণে একটা জটিলতা তৈরি হতে পারে। বিতর্ক ও জটিলতা এড়াতে আমরা শিল্পী মনি কিশোরের মেয়ে নিন্তি চৌধুরীকে দেশে উপস্থিত হয়ে মরদেহ গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছি। তিনি যদি দেশে আসতে না পারেন, তাহলে যথা নিয়মে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের অনুরোধ করেছি।’

১৯৬১ সালের ৯ জানুয়ারি নড়াইল জেলার লক্ষ্মীপুরে মামাবাড়িতে জন্ম নেন মনি কিশোর। পুলিশ কর্মকর্তা বাবার সাত সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় ভাই মারা গেছেন। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর থেকে একাই থাকতেন মনি। জনপ্রিয় এই শিল্পী অজানা অভিমান থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন। 

তার গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর অন্যতম ‘সেই দুটি চোখ কোথায় তোমার’, ‘তুমি শুধু আমারই জন্য’, ‘মুখে বলো ভালোবাসি’, ‘আমি মরে গেলে জানি তুমি’। তার সবচেয়ে শ্রোতাপ্রিয় গান ‘কী ছিলে আমার’ তার লেখা ও সুর করা। পরে ‘কে অপরাধী’ ছবিতে ব্যবহার করা হয় গানটি। এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, আবারও গান করছেন তিনি। পুরোনো গানগুলো পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করছেন ইউটিউবে।

আইএ

Wordbridge School
Link copied!