ঢাকা: 'এই মিলনায়তনে এবং মিলনায়তনের বাইরে যে-যেখানে বসে আমাদের এই অনুষ্ঠান দেখছেন, সবাইকে সাদর সম্ভাষণ।' এরপর মিলনায়তনের দর্শকের করতালি। করতালি শেষে আবারও উপস্থাপকের বক্তব্য, 'প্রীতি নিন, শুভেচ্ছা নিন।'
পাঠকের নিশ্চয়ই বুঝতে বাকি নেই, কোন অনুষ্ঠান এবং কোন উপস্থাপকের কথা বলা হচ্ছে। যিনি কথার সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করে তোলেন দর্শকদের। কথার সেই জাদুকর, প্রাণোচ্ছল অথবা হাস্যোজ্জ্বল মানুষটির নাম হানিফ সংকেত। বহুল জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির নির্মাতা, উপস্থাপক ও পরিচালক তিনি। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই মিডিয়াব্যক্তিত্ব আজ স্পর্শ করলেন জীবনের ৬৬তম বছরকে। ১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর বরিশালের বসুরহাটে জন্মগ্রহণ করা এই তারকা একাধারে পরিচালক, উপস্থাপক, লেখক ও প্রযোজক। ঈদ উৎসবে নাটক পরিচালনা করতেও দেখা যায় তাকে।
প্রয়াত ফজলে লোহানীর 'যদি কিছু মনে না করেন' ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দিয়ে পথচলা শুরু হানিফ সংকেতের। এরপর দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান 'ইত্যাদি' দিয়ে তিনি রাজত্ব করে চলেছেন আজঅবধি। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করা এই ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হানিফ সংকেত সমাজের নানা প্রচলিত অসঙ্গতির বিরুদ্ধে জোরালো কণ্ঠ রাখেন। 'ইত্যাদি'র প্রতিটি পর্বে মজার ছলে দেখানো হয় সমসাময়িক নিন্দিত ঘটনার বর্ণনা ও বিরোধিতা। বিবিসিসহ দেশের প্রতিটি জরিপেই দেখা গেছে, 'ইত্যাদি' দেশের সেরা টিভি অনুষ্ঠান এবং দেশের ৭৫ শতাংশ টিভি দর্শক এই অনুষ্ঠান দেখে থাকেন। সর্বশ্রেণির দর্শকের কাছে অনুষ্ঠানটি আকর্ষণীয় করে তুলতে নেপথ্যে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয় বলে জানান হানিফ সংকেত।
নিজের কাজের বিষয়ে খুবই যত্নশীল হানিফ সংকেত। নাটক পরিচালনাতেও নিজের মুন্সিয়ানা বজায় রেখেছেন। তার পরিচালিত জনপ্রিয় নাটকের মধ্যে 'আয় ফিরে তোর প্রাণের বারান্দায়', 'দুর্ঘটনা', 'তোষামোদে খোশ আমোদে', 'কিংকর্তব্য', 'কুসুম কুসুম ভালোবাসা', 'শেষে এসে অবশেষে' উল্লেখযোগ্য।
চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন হানিফ সংকেত। বেশ কয়েকটি ব্যঙ্গ ও রম্য রচনা লিখেছেন তিনি। তার মধ্যে 'চৌচাপটে', 'এপিঠ ওপিঠ', 'ধন্যবাদ', 'অকান্ড কান্ড', 'খবরে প্রকাশ', 'ফুলের মতো পবিত্র ', 'প্রতি ও ইতি', 'আটখানার পাটখানা' অন্যতম।
গুণী এই ব্যক্তিত্ব ২০১০ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘একুশে পদক’ পেয়েছেন। পেয়েছেন ‘জাতীয় পরিবেশ পদক’ এবং ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’সহ দেশি-বিদেশি অনেক সম্মাননা।
ইউআর