• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান থেকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রত্যয়


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪, ০৫:০৫ পিএম
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান থেকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রত্যয়

ঢাকা: ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান যেন ইটকাঠের এই তিলোত্তমা নগরী ঢাকার বুকে একটুকরো সবুজ ভূমি। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদরাজি বিস্তৃত প্রাকৃতিক পরিবেশের এই উদ্যানে আশ্রয় পেয়েছে অসংখ্য বন্যপ্রাণী। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, এই উদ্যানে ৪৫ প্রজাতির ফড়িং, ৭৬ প্রজাতির প্রজাপতি, ১০ প্রজাতির উভচর, ১৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৪০ প্রজাতির পাখি এবং ১২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর বসবাস। কিন্তু বর্তমানে মানুষকে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন উন্নয়নের পদক্ষেপের কারণে উদ্যানের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীদের ক্ষতি হচ্ছে।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অনলাইন প্লাটফর্ম সচেতনতামূলক ‘ওয়াইল্ড ওয়াক’ আয়োজন করে। বাংলাদেশের প্রকৃতিপ্রেমী সাধারণ শিক্ষার্থী, প্রকৃতি নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন সকলে মিলে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের কর্তৃপক্ষের সহায়তায় বন্যপ্রাণী গবেষক পরিবেশবিদ ও লেখক আশিকুর রহমান সমীর নেতৃত্বে এ আয়োজন করা হয়। যেখানে জনসাধারণের মধ্যে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের বন্যপ্রাণী তথা জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, দূষণমুক্ত করণ এর উপর সচেতন করা হয়।

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ সহ সারা বাংলাদেশের পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখা, প্রাণিকল্যান ও ধরিত্রীর জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে শপথ বাক্য পাঠ করে শিক্ষার্থীরা। 

সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী) থেকে প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী এখানে অংশগ্রহণ করে। পাশাপাশি ছিলো বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী ও পরিবেশ বাদী সংগঠন বেঙ্গল ডিসকাভার, ডীপ ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন, সেভ ওয়াইল্ড লাইফ এন্ড নেচার, বাংলাদেশ ইনভারনমেন্টাল এন্ড বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন এলাইয়েন্স, আন্তর্জাতিক সংস্থা এওয়ারনেস ৩৬০ আয়োজনে ডিগ্রি অংশ নেয় এই।

ওয়াইল্ড ওয়াক শেষে শিক্ষার্থীরা উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেয় এবং সেখানে নিজেদের প্রত্যাশা তুলে ধরেন। জীববিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে বইয়ের মুখস্থ বিদ্যার পাশাপাশি প্রয়োগগত বিষয়ে তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়। বিষয় ভিত্তিক অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ, বিষয় সংশ্লিষ্ট চাকরি গুলোর পরিধি আরও বৃদ্ধি ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ সংশ্লিষ্ট বিষয় স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব তোলা হয়।

পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বন্যপ্রাণী ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ নিয়ে আলাদা বিভাগ থাকলেও বাংলাদেশে মাত্র ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পর্যায়ে বন্যপ্রাণী জীববিদ্যা প্রানিবিদ্যা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ফলে বন্যপ্রাণী জীববিদ্যা বিষয়টি আলাদা স্বতন্ত্র বিভাগ হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করার দাবি তোলা হয়। 

প্রাণিবিদ্যা অনলাইন প্লাটফর্মের মডারেটর মো. মোস্তফা আদনানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের পরিচালক মো. শওকত ইমরান আরাফাত, বন্যপ্রাণী পরিবেশবিদ গবেষক ও লেখক আশিকুর রহমান সমী, প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক আফতাব উদ্দীন সুজন, পাখিবিদ ও আলোকচিত্রী  মো.তারিক হাসান, বন্যপ্রাণী বিষয়ক লেখক সরোয়ার পাঠান, বাংলাদেশ-পশ্চিম বঙ্গের জনপ্রিয় লেখক বাপ্পি খান, ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং প্রাণি সংরক্ষনবিদ মাহফুজুর রহমান, বন্যপ্রাণী বিষয়ক সাংবাদিক ও লেখক, বেঙ্গল ডিসকাভার এর এডিটর ইন চিফ  আমিনুল ইসলাম মিঠু, প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ দীপ্ত বিশ্বাস।

বক্তব্যে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানকে প্রাকৃতিক পরিবেশে সমৃদ্ধ, দূষণমুক্ত, প্লাস্টিক বর্জ মুক্ত, জীব বৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণীর বসবাস উপযোগী এক উদ্যানে পরিনত করার আহ্বান জানানো হয়। উদ্ভিদ উদ্যানে প্রকৃতি প্রেমী ও গবেষকদের প্রবেশ ফি কমানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি উদ্ভিদ উদ্যানে দূষণকারী ব্যক্তিবর্গকে উপযুক্ত জরিমানা প্রদানের দাবী জানানো হয়।

বক্তব্যে আশিকুর রহমান সমী জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের জীব বৈচিত্র্যের তথ্য এবং এর ঝুঁকি উপস্থাপন এর পাশাপাশি এর জীব বৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের নানা দিক তুলে ধরেন।

উদ্ভিদ উদ্যানের পরিচালক মো. শওকত ইমরান আরাফাত উদ্ভিদ উদ্যানটিকে শিক্ষার্থী ও সকল পরিবেশবাদী, গবেষকদের জন্য একটি আদর্শ গবেষণার উপযোগী করার প্রচেষ্টার কথা এবং কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার কথা ব্যক্ত করেন।

এসএস

Wordbridge School
Link copied!