ঢাকা : বাতাসের গতিবেগে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২ কিলোমিটার গতিতে প্রবাহিত বাতাসে শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। দেশের উত্তরের তেঁতুলিয়ায় রেকর্ড হয়েছে এ পর্যন্ত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশজুড়ে চলমান এই শৈত্যপ্রবাহ বইবে আরো দুই দিন। আর এরপরই বাড়বে তাপমাত্রার পারদ।
কোনো এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সেই এলাকায় শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্তে দেখা যায়, আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে সর্ব উত্তরের তেঁতুলিয়ায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৭ ও চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এছাড়া ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রেকর্ড হয়েছে রাজশাহীর বাঘাবাড়িতে ১০ দশমিক ৬ ও বাদলগাছিতে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে টেকনাফে ৩০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকায় তাপমাত্রার পারদ বেশি থাকলেও দেশজুড়ে বইছে শীতল বাতাস। এই বাতাসের গতিবেগ কত? তা জানতে কথা হয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ফোরকাস্টিং কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানার সাথে।
তিনি আজ সন্ধ্যায় বলেন,‘ঘণ্টায় সর্বনিম্ন ১৪ কিলোমিটার থেকে সর্বোচ্চ ২২ কিলোমিটার গতিতে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। এই বাতাসের কারণে শীতের অনুভূতি বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এ সময় সাধারণত ১৪ থেকে ১৫ কিলোমিটার গতিতে বাতাস প্রবাহিত হয়ে থাকে। তবে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে স্বাভাবিকভাবেই বাতাসের গতি বেড়ে যায়।’
এই বাতাসের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফিক এন্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের (নোয়ামি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোহন কুমার দাশ বলেন, ‘ঢাকা শহরে গতকালও কানটুপি ও মাফলার ছাড়া বের হয়েছি। কিন্তু আজ বাতাসের তীব্রতায় শীতের অনুভব বেড়ে গেছে অনেক। কুয়াশা বেশি ঘন না হলেও উত্তরের হিমেল বাতাস শীত বাড়াচ্ছে।’
চলমান মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কতদিন থাকতে পারে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, আরো দুই থেকে তিন দিন চলমান মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে এবং এরপরই আবার তাপমাত্রার পারদ বাড়বে।
শীতে আবার তাপমাত্রা বাড়বে কেন? এই প্রশ্নের জবাবে ওমর ফারুক বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে ওই সময়ে। তাই তখন তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তি থাকবে।’
আবার কবে নাগাদ শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে? এর উত্তরে আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, ‘২০ ডিসেম্বরের পর দেশজুড়ে আবারো তাপমাত্রা কমতে পারে। তবে তখন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেশি কমবে না, তবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে আসবে। তখন সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উভয় তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসবে বলে শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিবে অনেকখানি।’
শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়াবিদরা জানান, চলতি মাসে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিক্ষিপ্ত অবস্থায় কয়েকটি এলাকায় তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেও শীত প্রভাবিত অঞ্চলগুলোতে তাপমাত্রার পারদ ৮ ডিগ্রির নিচে নামবে না। আর ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহে পার হতে পারে চলতি মাস। তবে আগামীমাসে তা মাঝারি বা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ পর্যন্ত বয়ে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, কোনো অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যদি ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তখন ওই এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। আর যদি তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় তখন ওই এলাকায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং কোনো এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। দেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল হলেও জানুয়ারি মাস বছরের সবচেয়ে শীতলতম মাস। বছরের এ সময়ে তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে। এ সময়ে সাধারণত উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে শীতল বাতাস প্রবেশ করে থাকে।
এমটিআই