• ঢাকা
  • শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১

পর্যটকে মুখরিত কাঁঠালিয়ার ভাসমান পর্যটন কেন্দ্র ছৈলারচর 


ঝালকাঠি প্রতিনিধি  মার্চ ১৩, ২০২৪, ০৭:১১ পিএম
পর্যটকে মুখরিত কাঁঠালিয়ার ভাসমান পর্যটন কেন্দ্র ছৈলারচর 

ঝালকাঠি: ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার বিষখালী নদীতে প্রাকৃতিকভাবে জেগে দৃষ্টিনন্দন ছৈলারচর। পাখির কলকাকলি। ঢেউয়ের গর্জন। বাতাসের তালে ঘন ম্যানগ্রোভ ছৈলারচরের ছৈলা পাতার শোঁ শোঁ শব্দ। সকাল বেলায় পূর্বাকাশে নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা লাল সূর্যটা। বেলা শেষে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার মতো দৃশ্য যে কোন জায়গায় দাড়িয়ে অবলোকন করার মতো অতুলনীয় স্পটের নাম ছৈলারচর। যেখানে রয়েছে লক্ষাধিক ছৈলা গাছ। আর ছৈলা গাছের নাম থেকেই জেগে ওঠা এ চরের নামকরণ করা হয়েছে ‘ছৈলারচর’ প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এখানে এসে প্রাকৃতির অপারদৃশ্য উপভোগ করেন।

সম্প্রতি বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের সহাস্রাধিক শিক্ষার্থী শিক্ষক কর্মচারী, বরগুনা জেলার বামনা উপজেলা উন্নয়ণ ফাউন্ডেশন, ঝালকাঠির রাজাপুর ও বরগুনা বেতাগী উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে পর্যটন কেন্দ্র ছৈলারচর। 

বামনা উপজেলা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আয়োজনে কাঁঠালিয়ার ছৈলারচরকে পুনার্ঙ্গ পর্যটন কেন্দ্রে দাবীতে মানববন্ধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন টুরিস্ট পুলিশের কুয়াকাটা জোনের পুলিশ সুপার মো.আবুল কালাম আজাদ।

বিশেষ অতিথি ছিলেন যশোর শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড.মোল্লা আমীর হোসেন, বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো.আসাদুজ্জামান, বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রয়ক একেএম এনায়েত হোসেন, বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো.জাকির হোসেন, মো.আসাদুজ্জামান, সমকাল সুহৃদ সমাবেশ সভাপতি অধ্যাপক মো.আবদুল হালিম, সমকাল উপজেলা প্রতিনিধি প্রেস ক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও দি-হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ পিস এ্যাম্বেসেডর নেট ওয়ার্ক গ্রুপের বরিশাল অঞ্চলের কো-অডিনেটর ফারুক হোসেন খান ও কালেরকন্ঠের আঞ্চলিক প্রতিনিধি দেবদাস মজুমদার। 

পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠেছে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির দক্ষিণ জনপদ কাঁঠালিয়ার বিষখালী নদীর তীরে প্রকৃতির অপরুপ লীলাভুমি ছৈলারচর। ভাঙা রাস্তায় ম্লান নিসর্গের সৌন্দর্য। তবু ও ভাঙা রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন প্রকৃতির নয়নাভিরাম এই ছৈলারচর পর্যটকের মিলন মেলায় পরিনত হচ্ছে। জানা যায়, বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র সত্তর কিলোমিটার নিকটবর্তী ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হেতালবুনিয়া মৌজায় বিষখালী নদীতে প্রায় দুই যুগ আগে (২০০০ সনে) ৭০ একর জমি নিয়ে জেগে উঠেছে এক বিশাল চর। বর্তমানে এর আয়তন ১১০ একরের ও বেশি। যেখানে রয়েছে লক্ষাধিক ছৈলা গাছ। আর ছৈলা গাছের নাম থেকেই জেগে ওঠা এ চরের নামকরণ করা হয়েছে ‘ছৈলার চর’। শীতের সময় শুকনো চরে গহীন অরণ্য। চারপাশে নদী ঘেরা যেন ছৈলা বনের দ্বীপ। আর সেখানে লাখ ছৈলা গাছে পাখিরা বেঁধেছে নীড়। শালিক, ডাহুক আর বকের সারি। ছৈলা ছাড়াও এখানে কেয়া, হোগল, রানা, এলি, মাদার, আরগুজিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছে ঘেরা। তাই পাখির কিচিরমিচির ডাক সব সময়। 

ভ্রমণ পীপাষুদের প্রতিদিনের পদচারণায় এখন মুখরীত ছৈলারচর। নৌ ও সড়ক পথে যাওয়া যায় ছৈলারচরে। কাঁঠালিয়া লঞ্চঘাট এবং আমুয়া বন্দর থেকে ও ট্রলারে কিংবা অন্য যেকোন নৌযানে যাওয়া যায়। সড়ক পথেও যাওয়া যায় সেখানে। পর্যটন এলাকাকে ঘিরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রেষ্ট হাউজ সভাকক্ষ নদীতে ঘাটলা, গভীর নলকুপ, বাথরুম এবং দুটি নৌকা, তৈরী করে দেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য খেলনা, দর্শানার্থীদের বসার স্থানসহ ফুল বাগান, মুক্তিযোদ্ধা ইকোপার্ক, ডিসি লেক, রেস্টু হাউস, ইচ্ছে মঞ্চ । এছাড়া ছৈলার চরে পর্যটকদের সুবিধার্থে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ছৈলার চরটি পর্যাটন সম্ভাবনার হাতছনি, এখানে পর্যাটকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তৈরি করতে ইতোমধ্যেই পর্যটন মন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। 

ছৈলার চরে ঘুরতে আসা দর্শানার্থী মো.ওবায়দুল কবির দুলাল আকন জানান, অনেক দৃষ্টি নন্দন এই ছৈলারচর। প্রকৃতিকভাবে এখানে ছৈলার বনের সৃষ্টি যা বিষখালী নদীর তীরবর্তী অপুর্ব নৈসগিক। এখানে পর্যটনের অপার সম্ভবনা আছে। সরকারিভাবে যদি এখানে পিকনিক স্পট গড়ে তোলা যায় তাহলে সরকার এখান থেকে রাজস্ব খাতে আয় সম্ভব।

টুরিস্ট পুলিশের কুয়াকাটা জোনের পুলিশ সুপার মো.আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা ছৈলারচর প্রকৃতির অপার সম্ভবনাময়। এখানে প্রচুর মানুষজন ঘুরতে আসে। পাখির নিরাপদ আবাসস্থল। এখানে পর্যটনের সম্ভবনা থাকলেও এখন পর্যন্ত সরকারি কোন ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এখানে শীত মৌসূমে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ পিকনিক করতে আসে। অবকাঠামোগত কিছু না থাকায় সরকার রাজস্ব পাচ্ছেনা। এটি যদি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায় তবে সরকারে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।

এ ব্যাপারে কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.নেছার উদ্দিন বলেন, ২০১৫ সালে ছৈলারচর স্থানটি পর্যটন স্পট হিসেবে চি‎হ্নিত করে, পর্যটন মন্ত্রাণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে যাওয়ার জন্য দুটি নৌকা, সেট, গভীর নলকুপ শিশুদের জন্য খেলনা, দর্শানার্থীদের বসার স্থান, ফুল বাগানসহ ঘাটলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এমএস

Wordbridge School
Link copied!