ঢাকা : ২০২০ সাল করোনা আক্রান্তের সময়টাতে দেশের মানুষ যখন গৃহবন্দি, এ রকম পরিস্থিতিতে হাটহাজারীর দুই ভাই হাসান ফারুক লুভন ও মিজান ফারুক ইমন বেকার হয়ে পড়েন। যাদের পেশা ছিল ব্যবসা ও চাকরি। তারা চিন্তা করল এভাবে বেকার দিনযাপন করলে তো চলবে না। কিছু একটা করতে হবে। যেই ভাবনা সেই কাজ। তারা দেখল তাদের ১০ একর পৈতৃক জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে।
কৃষি অধিদপ্তরে সহযোগিতায় দুই ভাই উদালিয়া বড় বিল এলাকায় কৃষি খামার করার কথা ভাবলেন। ছোট ভাইদের আগ্রহে উৎসাহী হয়ে তাদের বড় ভাই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী চিকিৎসক ওমর ফারুক লিটন আর্থিক বিনিয়োগ করতে এগিয়ে এলেন।
এখন তাদের ১০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল সমন্বিত কৃষি খামার। খামারে রয়েছে কাটিমন জাতের বারোমাসি আম, বারি-৪ জাতের আম, বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি আপেল কুল, ড্রগন ফ্রুটস, বারি মালটা, টপ লেডি এবং গ্রিন লেডি জাতের উচ্চ ফলনশীল পেঁপে, দেশি জাতের বাংলা কলা।
বাগানের চার পাশ ঘিরে সিডলেস লেবুগাছ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রাকৃতিক বেষ্টনী। যাতে বাহির থেকে গরু ছাগল এবং সাধারণ মানুষ বাগানে অবাদে প্রবেশ করতে না পারে। সৃষ্ট বাগানের সারিবদ্ধ গাছের ফাঁকে ফাঁকে সারা বছরই মৌসুমি শাকসবজির চাষ করে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি তারা গড়ে তুলেছেন একটি দুগ্ধজাত খামার ও গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প। তারা সেখান থেকে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রি করছেন নিয়মিত। এই বাগানে কিছুই যেন ফেলনা নয়।
গবাদিপশুর গোবর থেকে তারা করছেন কেঁচো সার। যা উন্নত জৈব সার। প্রকল্পে উৎপাদিত জৈব সার জমির উর্বরতা শক্তির বৃদ্ধির জন্য বাগানে ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার বাণিজ্যিকভাবে ও বাজারজাত করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে দেশি মুরগির খামার। যে মুরগিগুলো প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে বেড়ে উঠছে। বাগানে খাদ্য অন্বেষণে চড়ে বেড়ানো মুরগির বিস্টায় বাগানের জমির উর্বরতা বাড়াচ্ছে।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রকল্পে প্রতিষ্ঠিত গরুর খামারের জন্য প্রকল্পের অভ্যন্তরে উৎপাদন করা হচ্ছে ভুট্টা, হাইব্রিড ঘাস ও উচ্চ ফলনশীল ধান। ভুট্টা থেকে তৈরি হচ্ছে সাইলেজ আবার ধানের খড় ব্যবহার করা হচ্ছে গরুর খাদ্য হিসেবে। বাগানে সরিষার চাষ করে ও উদ্যোক্তারা পেয়েছে ব্যাপক সফলতা।
উৎপাদিত সরিষা থেকে তেল উৎপাদন ছাড়া ও সরিষার খৈল উৎকৃষ্ট জৈব সার এবং গরুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে পরিবেশবান্ধব প্রকল্প হিসেবে পুরো খামার জুড়ে উদ্যোক্তারা স্থাপন করা হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ।
সম্পূর্ণ বাগান জুড়ে উদ্যোক্তারা ব্যবহার করছেন শ্রমিক সংকট থেকে উত্তোরণের জন্য যান্ত্রিক কৃষি সরঞ্জাম ও আধুনিক প্রযুক্তি। যা একই সময় তাদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় করছে।
তাছাড়া প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার মিটার বাড়ি সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে বিস্তীর্ণ ভূমিতে নিশ্চিত করা হয়েছে বছরব্যাপী কৃষি উৎপাদন। কাপ অ্যাগ্রো নামের তিন ভাইয়ের এই খামার ইকো অ্যাগ্রো রিসোর্টের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে।
উদ্যোক্তাদের এই আধুনিক বাগান দেখতে অনেকেই আসেন। কৃষিজাত পণ্যকে নিরাপদ খাদ্য হিসেবে বাজারজাত করার ও তাদের পরিকল্পনা রয়েছে এই দুই ভাইয়ের।
এমটিআই