• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

যেভাবে জন্ম হলো ছাতার, ছড়িয়ে গেল সারা বিশ্ব্


ফিচার ডেস্ক সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৪:৪৩ পিএম
যেভাবে জন্ম হলো ছাতার, ছড়িয়ে গেল সারা বিশ্ব্

ঢাকা: ছাতা, আমাদের প্রতিদিনকার ব্যবহার্য জিনিসপত্রের মধ্যে অন্যতম এক অনুষঙ্গ। রোদ হোক কিংবা বৃষ্টি, ছাতার কোনো বিকল্প নেই। ছাতার এই ছায়ার সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন জীবন ওতপ্রতোভাবে জড়িত। ছাতা নামটার সঙ্গেই তো গভীর সম্পর্ক ছায়ার। কোন দেশে ছাতা আবিষ্কার হয়েছে, তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক রয়েছে। আসুন শুনে নিই, মানব সভ্যতার অন্যতম সেরা আবিষ্কার ছাতার জন্ম ও তার বিবর্তনের ইতিহাস।

আমাদের আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের মধ্যে খুব অল্প জিনিসই আছে যা হাজার বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। সেদিক থেকে বিচার করলে ছাতা সত্যিই অনবদ্য! আজকাল ছাতা বৃষ্টিতে অধিক ব্যবহৃত হলেও, প্রাচীনকালে কিন্তু একমাত্র রোদ থেকে বাঁচতেই ছাতা ব্যবহার হত। ছাতার ইংরেজী Umbrella শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘Umbrage’ থেকে, যার অর্থ ছায়া। এছাড়াও হালকা ছাতা বা ‘Parasol’ শব্দটি ইতালীয় শব্দ Para এবং Sole এ দুটির সমন্বয়ে গঠিত। যেখানে Para অর্থ প্রতিরক্ষা আর Sole অর্থ সূর্য। 

মনে করা হয় মানুষ ছাতার ব্যবহার করছে মোটামুটি চার হাজার বছর আগে। অনেকের ধারনা, ছাতা আবিষ্কার হয়েছে চিনে। অনেকে আবার মিশর, গ্রিসের কথাও বলে থাকেন। আসলে এই তিন অঞ্চলের প্রাচীন চিত্রকর্মে ছাতার দেখা মেলে। চিনের মতটাই অবশ্য জোরালো। মনে করা হয়, চিনে ছাতা তৈরি হওয়ার পর তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। পরে পাড়ি দেয় ইউরোপেও। চীনে যে সময় ছাতা আবিষ্কার হয়েছিল, তখন ছাতার ব্যবহার মেয়েদের মধ্যেই কিন্তু সীমাবদ্ধ ছিল। পুরুষের হাতে ছাতা উঠেছে অনেক পরে। মেয়েদের ব্যবহারের জিনিস হলেও, যে কোনও মেয়ে ছাতা ব্যবহার করতে পারত না। শুধুমাত্র সমাজের সম্ভ্রান্ত এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী পরিবারের মহিলারাই ছাতার ব্যবহার করতেন। ছাতা ছিল সামাজিক প্রভাব, প্রতিপত্তির প্রতীকও।

খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ সালের দিকে চীনারা তাদের নিজস্ব ঢংয়ে ছাতা তৈরি শুরু করে। প্রথমদিকে গাছের পাতা এবং শাখা-প্রশাখা ব্যবহৃত হত ছাতা তৈরির ক্ষেত্রে, পরবর্তীতে প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে সাথে ছাতা তৈরির কাঁচামালে যুক্ত হয় কাপড়, চামড়া, সিল্ক এবং কাগজ। পশুর হাড়ও ব্যবহৃত হত, যা দিয়ে ছাতার বাঁটে বিভিন্ন নকশা করা হত। আজকের যুগে আমরা যেরকম ছাতা দেখতে পাই, সেরকম ছাতা প্রথম তৈরি হয় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দে। 

১৮৩০ সালে চালু হয় বিশ্বের প্রথম ছাতার দোকান। যার নাম “জেমস স্মিথ অ্যান্ড সন্স”। দোকানটি লন্ডনের ৫৩ নিউ অক্সফোর্ড স্ট্রিটে অবস্থিত। অবাক করা সত্যি হল, “জেমস স্মিথ অ্যান্ড সন্স” আজও ইউরোপের অন্যতম সেরা ছাতার ঠিকানা। প্রায় দুশো বছরের দোকান রমরমিয়ে চলছে। আধুনিক ছাতার জন্য ১৮৫২ সালটাও গুরুত্বপূর্ণ। এই বছরেই সুইচের সাহায্যে ছাতা খোলার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন গেজ বা গেড নামের এক ফরাসি। এরপর বলতে হয় জার্মান হ্যানস হাপটের কথা। এই ব্যক্তি ১৯২০ সালে ছাতা তৈরিতে অভিনব পরিবর্তন আনেন। পকেটে বহনযোগ্য ছাতা তৈরি করে ফেলেন তিনি। নাম দেন “লর্ড অ্যান্ড লেডি”। তবে ছাতার জীবনে শেষ বিপ্লবটি ঘটে যায় ১৯৬০ সালে। এই বছরে পলেস্টার কাপড়ের উদ্ভাবন হয়। ছাতায় যার ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয় বিশ্ব জুড়ে।

১৮৫০ সালে,স্যামুয়েল ফক্স নামক এক ব্যক্তির কল্যাণে ছাতায় স্টিলের ব্যবহার শুরু হয়। ফক্স ছিলেন একজন ইংরেজ শিল্পপতি। স্টিল ব্যবহারের ফলে ছাতা আগের চাইতে অনেক হালকা এবং মজবুত হয়ে ওঠে, ফলে তা বহন করা আরও সহজ হয়ে যায়। ছাতার এ বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পর স্যামুয়েল ফক্স গড়ে তোলেন ফক্স আমব্রেলাস লিমিটেড যা আজও ইংল্যাণ্ডের অন্যতম একটি ছাতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।

হাজার বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসা এ ছাতা হয়তো আরো হাজার বছর ব্যবহৃত হবে। খুব শীঘ্রই এর কোনো বিকল্প আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে দিন দিন যে ছাতার আরো উন্নতি সাধন হবে তা বলাই বাহুল্য। চারদিকে এখন প্রযুক্তির জয়জয়কার। ছাতার সঙ্গে প্রযুক্তি জুড়ে গিয়ে এটি যে বহুল ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠবে না তা কে বলতে পারে! এখন দেখার বিষয়, এ জয়যাত্রায় ছাতার মুকুটে আর কী কী পালক যুক্ত হয়!

ইউআর


 

Wordbridge School
Link copied!