ময়মনসিংহ: ছয় একরের একটি গ্রাম। আর সেখানে রয়েছে মাত্র একটি বাড়ি। আছে ছয়টি পুকুর, রয়েছে শতবর্ষী আম, কাঠাল, জাম, লেচু, আপেল, কমলা, স্ট্রবেড়ী, আঙুরসহ ২৫ থেকে ৩০ রকমের ফলজ ও ঔষধিজাতের বিভিন্ন প্রজাতির এক থেকে দেড় হাজার গাছ। বাড়িটিতে আছে একটি ইসলামিক পাঠাগারও। লতাপাতায় ঘেরা জরাজীর্ণ এই বাড়িটিতে বসবাস মাত্র দুজন মানুষের।
এমনই এক গ্রাম রয়েছে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায়। যার নাম শরীফগঞ্জ। গ্রামটির পূর্ব দিকে স্বল্পপুনিয়া, উত্তর দিকে নয়াবাড়ী, দক্ষিণ দিকে ময়ড়া আর পশ্চিমে সতরবাড়ী গ্রাম অবস্থিত।
গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানা এলাকার দত্তেরবাজার ইউনিয়নে অবস্থিত শরীফগঞ্জ গ্রামটি। এটি স্বল্পপুনিয়া মৌজায় অবস্থিত। গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক ও স্ত্রী মাহফুজা বেগম মেরী। প্রায় ১৩০ বছর পূর্বে ময়মনসিংহ পৌরসভার প্রথম মুসলিম ভাইস চেয়ারম্যান খান সাহেব আলী উনার বাবার নামের সাথে মিল রেখে গ্রামটির নামকরণ করেছিলেন শরীফগঞ্জ।
মূলত এই গ্রামে বসবাসরতরা আর খান আলী হচ্ছেন মোঘল সেনাপতি রাজা মানসিংহের বংশধর। মানসিংয়ের বংশধর যোজার সিং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এখানে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করতে থাকেন। বাড়িটির বর্তমান অধিকারী রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক যোজার সিংয়ের চতুর্থ বংশধর। তিনি আমীর আলীর ছেলে। গ্রামটিতে অবস্থিত পাঠাগারটিও আমির আলীর নামে।
রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক দীর্ঘদিন টাংগাব হাজী ইসমাঈল দাখিল মাদ্রাসা শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে অবসর নিয়ে কান্দিপাড়া আলিমুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পার্ট টাইম শিক্ষকতা করছেন।
তিনি বলেন, ময়মনসিংহ পৌরসভার প্রথম মুসলিম ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন খান সাহেব আলী। উনার বাবার নামের সাথে মিল রেখে শরীফগঞ্জ নাম করন করেন। উনি আমার দাদা হন। ১৯২২ রাজা পঞ্চাদশ উনাকে রোপ্য পদক প্রদান করে খান সাহেব উপাধি প্রধান করেন।
তিনি আরও বলেন, আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত অনার্স মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে পাস করেছি। আমার বড় ছেলে ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিউটার সাইন্সে মাস্টার্সে গোল্ড মেডেল পেয়েছে। দ্বিতীয় ছেলে ডুয়েট থেকে আর্কিটেডে পড়াশোনা করছেন। সৌদি আরবের প্রথম কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ আমার ভাতিজা হন। ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আমার ভাগিনা হয়। মাহমুদউল্লাহ বিয়াদ খান সাহেব আলীর তৃতীয় মেয়ের নাতি। আমাদের বংশে বর্তমানে ৮ জন মাস্টার্স ও ৫ জন ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে।
পাশের গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, শরীফগঞ্জ গ্রাম একটি বাড়ি নিয়ে। বাড়িটিতে বর্তমানে শিক্ষক দম্পত্তির বসবাস।
স্থানীয় কলেজছাত্র মোহাম্মদ আরমান বলেন, শরীফগঞ্জ গ্রামের পরিবেশ খুব সুন্দর। এই গ্রামের দুইজন মানুষ বসবাস করেন। তাদের দুই সন্তান ঢাকায় থাকেন। তারা সবাই উচ্চ শিক্ষিত।
গফরগাঁও আদর্শ বিদ্যা নিকেতনের প্রিন্সিপাল এইচ কবীর টিটু বলেন, শত বছর পূর্বে উপজেলার টাংগাব ইউনিয়নে ঈশা-খাঁ ও মানসিংহের মধ্যে যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। যুদ্ধে ঈশা-খাঁ জয় লাভ করে। মানসিংহের কিছু লোক জন এখানে থেকে যায়। তাদেরই বংশধরের একটি বাড়ির গ্রাম শরীফগঞ্জ। এই বাড়ির সবাই উচ্চ শিক্ষিত।
এসএস
আপনার মতামত লিখুন :