• ঢাকা
  • বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১
৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

কঠিন সংকট উত্তরণে অগ্নিপরীক্ষায় বিএনপি


নিউজ ডেস্ক সেপ্টেম্বর ২, ২০২২, ০৫:৫৬ পিএম
কঠিন সংকট উত্তরণে অগ্নিপরীক্ষায় বিএনপি

ঢাকা : প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছরে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে আছে দলটি। সাংগঠনিক দুর্বলতার পাশাপাশি মামলা ও গ্রেফতারে নেতাকর্মীদের নাজেহাল অবস্থা।

দলটির শীর্ষ দুই কান্ডারি-চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সরাসরি পাশে পাচ্ছেন না নেতাকর্মীরা।

সব মিলিয়ে কঠিন সংকটের মুখে দলটি। তাই সংকট উত্তরণে সামনে তাদের অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

নীতিনির্ধারকরা জানান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করাই তাদের মূল লক্ষ্য। এজন্য দলের চোখ এখন আন্দোলনের দিকে। পাশাপাশি দল পুনর্গঠনও দ্রুত শেষ করতে চায় তারা।

এ পরিস্থিতিতে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর)। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে এবার দুদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৭৮ সালের এ দিনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দলটি প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া রাজনীতিতে এসে দলটির হাল ধরেন। তার নেতৃত্বে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দুইবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়েছে দলটি।

দুর্নীতির মামলায় শর্তসাপেক্ষে জামিনে বাসায় থাকলেও সক্রিয় রাজনীতিতে নেই তিনি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে ছেলে তারেক রহমান ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে দল পরিচালনা করলেও সক্রিয় অনুপস্থিতির শূন্যতা পূরণ হচ্ছে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সামনে বিএনপিকে নানা ‘কৌশলে এগোতে হবে। সামনের দিনে গণতান্ত্রিক বিশ্বের সমর্থন আদায়ের পাশাপাশি নিজেদের ভুলত্র“টিগুলো চিহ্নিত করে তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

দলমত নির্বিশেষে দেশের বিভিন্ন সেক্টরের জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ এবং দলে টেনে গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগাতে হবে। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের সফলতা ঘরে আনতে হলে জেলা থেকে শুরু করে তৃণমূলের সব পর্যায়ে দলের যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাদের হাতে নেতৃত্ব দিতে হবে। কারণ আগামীতে ক্ষমতায় না এলে ‘অস্তিত্ব সংকটে’ পড়তে পারে দলটি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০০৮ সাল থেকে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নেই। ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে।

বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হামলা, গুম ও খুন করে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। এই সংকট বিএনপির একার নয়, গোটা রাষ্ট্রের। এ থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে আন্দোলন গড়ে তোলাই বিএনপির এখন মূল চ্যালেঞ্জ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর চেয়েছিল দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে, মামলা করে বিএনপিকে নিঃশেষ করার।

এরই অংশ হিসাবে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় সাজা দিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে আসতে দেওয়া হয় না। সরকারের চরম দমনপীড়নের পরও তারেক রহমানের অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতায় বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপিতে কোনো সংকট নেই। ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রযুক্তির সহায়তায় সার্বক্ষণিক আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। যে কোনো সিদ্ধান্ত তার সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হয়। জরুরি হলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। যারা বলেন সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়, তারা ভুল তথ্য দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য আনন্দ পেতে পারেন। কিন্তু তথ্যটি সঠিক নয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জনপ্রিয়তা থাকার পরও ভুল রাজনীতির কারণে এখনো ‘চোরাগলিতে’ আটকে আছে বিএনপি। এ থেকে উত্তরণে দলটির সামনে চ্যালেঞ্জের মধ্যে উলে­খযোগ্য হচ্ছে-গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, পুরোনো ও নতুন জোটের রাজনৈতিক নানা হিসাবনিকাশ, দল এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অন্তদ্বন্দ কাটিয়ে পুনর্গঠন, সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বপ্রথম নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা ও মনোবল ফিরিয়ে আনতে হবে।

তাদের মতে, ২০ দলীয় জোটে জামায়াতে ইসলামীকে রাখা নিয়েও বিএনপির মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে। যদিও বিএনপির ভয় জামায়াতকে সরকার ব্যবহার করতে পারে। ভোটব্যাংকের কথা মাথায় রেখে জামায়াতসঙ্গ ছাড়ার ব্যাপারে দলের হাইকমান্ড চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ একটি ইতিবাচক দিক। সব দলের মতামত নিয়ে ‘যুগপৎ’ হোক কিংবা ‘ঐক্যবদ্ধভাবে’ হোক আন্দোলনে যেতে পারলে দাবি আদায়ে সফলতা আসতে পারে। তবে তার আগে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাজনৈতিক ‘সমঝোতা’ হলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক হতো। এটি নির্ভর করবে বড় দুদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ওপর।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, বিএনপি গত ১৩-১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে আছে। এর মধ্যে নানারকম দমনপীড়ন, গুম ইত্যাদির শিকার নেতাকর্মীরা। তারপরও দল হিসাবে বিএনপি দাঁড়িয়ে আছে। কোনো নেতা এখন পর্যন্ত দল ত্যাগ করে অন্য দলে যায়নি। বিএনপিকে ভাঙারও চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু পারেনি। এটা বিএনপির সফলতা। তবে বিএনপিতে সংকটও আছে। একই সঙ্গে তা দেশেরও সঙ্কট। তা হচ্ছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। এই নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে না পারা যায় তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধাকারাচ্ছন্ন।

তিনি বলেন, এই সঙ্কট উত্তরণে বিএনপি প্রাণপণ চেষ্টা করছে সরকারের পতন এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যাতে নির্বাচন করতে পারে। কিন্তু দমনপীড়নের কারণে এই পথটা অনেক দুরূহ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নিষেধাজ্ঞা আসছে।

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব একটা অবস্থান নিয়েছে। এটা বিএনপির জন্য একটা সুযোগ। বিএনপি এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, দেশের ভবিষ্যৎ ভালো হবে।

তবে বিএনপিকে কোনো ধরনের সহিংসতায় না গিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতে হবে। সহিংসতা হলে সরকার সুযোগ পেয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে দলটির নীতিনির্ধারকদের মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে বিএনপির ভবিষ্যৎ নেই, কিন্তু সে ধরনের নির্বাচন করতে হলে নির্দলীয় তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে, যেটা বিএনপি দাবি করছে। 

কিন্তু মনে রাখতে হবে ওই ব্যবস্থা বর্তমান সরকার বাতিল করেছে এবং এটি আদায় করতে হলে বিএনপিকে কঠোর আন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতি তৈরি করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যেটা আওয়ামী লীগ পেরেছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির কর্মকৌশল কী, তার ওপরই সুষ্ঠু নির্বাচন নির্ভর করছে।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আজ বিএনপি সংকটে, গণতন্ত্রও সংকটে, সরকারি দল সংকটে এবং পুরো জাতিই সংকটে। এ সংকট উত্তরণে বিশ্বাসযোগ্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। ভোট ছাড়া যেমন গণতন্ত্র হয় না, তেমন বিরোধী দল ছাড়াও গণতন্ত্র শক্তিশালী হয় না।

একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়াতে হবে। দলে গণতন্ত্র না থাকলে দেশে গণতন্ত্র চর্চা দুরাশায় পরিণত হবে।

বিএনপির অন্যতম একটি সংকট নেতৃত্বের। পরিবারতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জনগণের আস্থা অর্জনকারী বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন।

এ নেতৃত্বকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হতে হবে। শ্যাডো ক্যাবিনেট প্রক্রিয়া করা দরকার। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পথ চলতে হবে।

কর্মসূচি : এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ ভোর ৬টায় কেন্দ্রসহ সারা দেশের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, দুপুর ১২টায় শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিকাল ৩টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র‌্যালি।

এ ছাড়া আগামীকাল শুক্রবার বিকালে মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনাসভা হবে। একইভাবে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরসহ সব ইউনিটে তাদের সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভা, র‌্যালি কর্মসূচি পালন করবে। সূত্র : যুগান্তর

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School

সংবাদ পত্রের পাতা থেকে বিভাগের আরো খবর

Link copied!