ঢাকা : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি নেতারা জামিনে মুক্ত হয়ে ঘরে ফিরছেন। তবে এখনই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারছেন না তারা।
কারণ হিসেবে কারামুক্ত নেতা ও তাদের স্বজনরা বলছেন, কারাগারে বিনা চিকিৎসায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তারা। শারীরিক নির্যাতন করা না হলেও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। তারা এখন ট্রমায় আক্রান্ত। তাই তাদের কিছুদিন বিশ্রাম নিতে হবে, কাউকে চিকিৎসা নিতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যারা কারাবন্দি হয়েছিলেন তারা অন্যবারের চেয়ে এবার কারাগারে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমরা নেতাদের আইনজীবীদের মাধ্যমে নির্যাতনের বিষয়টি জেনেছিলাম। এখন ধীরে ধীরে নেতাকর্মীরা জামিনে বের হয়ে আসার পর তাদের মুখে নির্যাতনের কথা শুনছি। কারাগারে তারা একটা ট্রমার মধ্যে ছিলেন। এখন কারামুক্ত হলেও সুস্থ হয়ে রাজনীতিতে ফিরতে তাদের সময় লাগবে। কারণ আগে নেতাদের সুস্থতা জরুরি। কারামুক্ত নেতারা চিকিৎসা ও বিশ্রাম নিয়ে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ৩ মাস ৬ দিন পর জামিনে মুক্ত হন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক। তার বড় ভাই মঈনুল হক বলেন, ‘আমিনুলের বিরুদ্ধে থাকা ১২টি মামলার সবকটিতে জামিন হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পায়। আমিনুল হক শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাকে বেশ কিছুদিন চিকিৎসাধীন থাকতে হবে। সুস্থ হয়ে আবারও রাজনীতির মাঠে ফিরবে জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক এ অধিনায়ক।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর ২ নভেম্বর আমিনুলকে গুলশান-২ এলাকা থেকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় করা বিভিন্ন থানায় ১২টি মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এসব মামলায় দুই দফায় তাকে ১১ দিন রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ডে থাকাবস্থায় আমিনুল অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার কিডনিতে পাথর ধরা পড়ে। এখন তাকে কিছুদিন চিকিৎসা নিতে হবে।’
গত বছর ৪ নভেম্বর রাজধানীর বাড্ডার বোনের বাসা থেকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্সকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর কয়েক দফা রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন তিনি।
প্রিন্স বলেন, ‘কারাগার থেকে মুক্ত হতে পারলেও শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগবে। আগে সুস্থ হয়ে তারপর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেব।’
তিনি বলেন, ‘কারাগারে শারীরিক নির্যাতন না হলেও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এ কারণে একটা ট্রমার মধ্যে রয়েছি। কারাগারে যেখানে রাখা হয়েছিল সেখান থেকে নিচে নামতে দেওয়া হতো না। হাঁটতে যেতে পারতাম না। লাইব্রেরিতে বই পড়তে যেতে দেওয়া হতো না। ক্যান্টিনে যাওয়া যেত না। এভাবে নানা মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব থাকাবস্থায় গত বছর ২০ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তানভির আহমেদ রবিন। গত ২৮ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তিনি।
রবিন বলেন, ‘অন্যবারের চেয়ে এবার কারাগারে মানসিক নির্যাতন বেশি হয়েছে। তাই কারাগার থেকে মুক্ত হলেও শারীরিকভাবে আমিসহ অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। চিকিৎসা ও বিশ্রাম নিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে সময় লাগবে কিছুটা।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর ৩ আগস্ট আমার বাবা ও বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কারাগারে থাকাবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে ২১ নভেম্বর ভোরে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তাকে রাখা হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তার হার্টে চারটি রিং বসানো হয়েছিল। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরলেও চিকিৎসকদের পরামর্শে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রয়েছেন।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ‘নেতাদের গ্রেপ্তারের পর থেকে দফায় দফায় রিমান্ড, রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে নেওয়া হয়েছিল। কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় আহত হয়েছিলেন। তাদের চিকিৎসা না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। কারাগারে যথাযথ চিকিৎসা হয়নি। কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ও বিনা চিকিৎসায় অনেকেই কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। যথাযথ চিকিৎসার অভাবে এ পর্যন্ত আমাদের ১৩ নেতাকর্মী মারা গেছেন। তাই জামিন পাওয়ার পর এখন কারামুক্ত নেতাদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। তাদের সুস্থ হতে সময় লাগবে।’
তিনি বলেন, ‘কারাবন্দি নেতাদের মধ্যে আমাদের দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ অনেকেই গুরুতর অসুস্থ। কারাগারে তাদের যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না। পাশাপাশি তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন না হলেও মানসিক নির্যাতন হচ্ছে। কারাবন্দি নেতারা কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে এসব নেতা কারামুক্ত হলেও সুস্থ হয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে সময় লাগবে তাদের।’ সূত্র : দেশ রূপান্তর
এমটিআই