ঢাকা: রাজধানীর গুলশান ক্লাবের উল্টো পাশে এক বিঘার বড় একটি প্লট রয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের। অনেকটা বাগানবাড়ির আদলে জায়গাটি গড়ে তুলেছেন তিনি।
ক্ষমতায় থাকাবস্থায় পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে সেখানে আড্ডা দিতেন তিনি। সেসময় প্লটটি ছিল তার ‘সুখের রাজ্য’।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান নসরুল হামিদ। কিছুদিন কোনো খোঁজ-খবর না থাকলেও গত দুই মাস ধরে জায়গাটি বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজছেন তিনি। বর্তমানে তার এই জায়গার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই প্লটটি বিক্রি করতে বড় বড় ব্যবসায়ীদের ধরছেন নসরুল হামিদ।
তবে এত বড় জায়গা মোটা অংকের টাকা দিয়ে কেনার মতো কোনো ক্রেতা না পাওয়ায় ছোট প্লট আকারে বিক্রির তৎপরতা চালাচ্ছে নসরুল হামিদের কোম্পানি হামিদ রিয়েল এস্টেট। শুধু এ জায়গাই নয়, রাজধানীর মাদানী এভিনিউর ১০০ ফুট রাস্তার পাশেও নসরুল হামিদের পাঁচ বিঘা জমি রয়েছে। এ জমিও বিক্রি জন্য ক্রেতা খুঁজছেন তিনি।
সূত্র জানায়, বড় আয়তনের এই দুইটি জায়গা এখন পর্যন্ত বিক্রি করতে না পারলেও গুলশান, বনানী ও নিকেতন এলাকার একাধিক ছোট প্লট ও বাড়ি এরই মধ্যে বিক্রি করে দিয়েছেন নসরুল হামিদ।
সম্পত্তি বিক্রির ওই টাকার বড় অংশই তিনি হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে নিয়ে গেছেন। বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, নসরুল হামিদ আমাকে বলেছেন, তার বেশির ভাগ সম্পত্তিই বিক্রি করে দেবেন। সেজন্য ক্রেতা খুঁজছেন তিনি। আমাকে অনুরোধ করেছেন যেন তার গুলশান ও মাদানী এভিনিউয়ের জায়গা কিনি।
এ ছাড়া তাকে যেন ক্রেতা খুঁজে দেই। তার জমি কেনার মতো আমার কাছে এত টাকা নেই। আমি অপারগতা প্রকাশ করেছি।
নসরুল হামিদের পৈতৃক ব্যবসা ছিল জমি বেচাকেনা তথা রিয়েল এস্টেটের। তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হামিদ গ্রুপ। এ গ্রুপের অধীনে হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, হামিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, ডেলকো বিজনেস অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড, হামিদ ইকোনমিক জোন, হামিদ ফ্যাশন লিমিটেড অ্যান্ড হামিদ সোয়েটার লিমিটেড ও হামিদ এগ্রো লিমিটেডের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। হামিদ গ্রুপের রিয়েল এস্টেট ব্যবসার ব্র্যান্ড হলো ‘প্রিয়প্রাঙ্গণ’। গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদে রয়েছেন নসরুল হামিদ বিপুর ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপু। বিপুর মতো তিনিও বর্তমানে পলাতক।
সম্পত্তি বিক্রির বিষয়ে বক্তব্য জানতে নসরুল হামিদ ও তার ভাই ইন্তেখাবুল হামিদের সঙ্গে একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগ করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নসরুল হামিদ বিপু ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের পরিমাণ অন্তত ৮ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত কোম্পানিগুলোর ব্যবসা সচল ছিল। কিন্তু এর পর থেকেই পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হয়েছে। বেশকিছু কর্মীকে এরই মধ্যে ছাঁটাই কিংবা ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। কোম্পানির রিয়েল এস্টেট ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। বেশকিছু জমি এরই মধ্যে বেদখল হয়ে গেছে।’
হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের আওতায় রাজধানীর কেরানীগঞ্জে প্রিয়প্রাঙ্গণ-১ ও প্রিয়প্রাঙ্গণ-২ আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আবাসিক এলাকাটিতে নগদ ও কিস্তিতে প্লট বিক্রি করছে হামিদ গ্রুপ। আবাসিক এলাকাটির প্রতিষ্ঠাকালীন জোরপূর্বক জমি কিনে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার বাজারমূল্যের চেয়ে কমেও জমি বিক্রিতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর তার এমপি-মন্ত্রীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তাদের বেশিরভাগ ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ সম্পত্তি বিক্রি করে সেই টাকা দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে নিয়ে গেছেন।
নসরুল হামিদ ২০১৪ সাল থেকে এক দশকের বেশি সময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বিগত দেড় দশকে সরকারের সবচেয়ে বেশি অর্থের অপচয় ও লুটপাট হয়েছে এ মন্ত্রণালয় ঘিরে। নিজের ব্যবসা ও ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থে নসরুল হামিদ বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানেও তার সম্পত্তি ও ব্যবসা রয়েছে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ
আইএ







































