ঢাকা : কিডনি দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিডনি রোগ খুব নীরবে শরীরের ক্ষতি করে। খুব জটিল অবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত লক্ষণগুলো ভালোভাবে প্রকাশও পায় না।
একটি অসুস্থ বা অকার্যকর কিডনির কারণে একজন মানুষ দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। এজন্য অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুস্থ রাখার পাশাপাশি কিডনি সুস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরি।
কিডনির কাজ : কিডনির মূল কাজ হলো পুরো শরীরের রক্ত পরিশোধিত করা এবং দূষিত বর্জ্য বের করা দেওয়া। হার্ট রক্তকে পাম্প করে কিডনিকে দিচ্ছে, কিডনি পরিশোধিত করে হার্টে পাঠাচ্ছে। এভাবে সার্বক্ষণিক চলছে।
প্রতিদিন একটি কিডনি ১২০ থেকে ১৫০ লিটার রক্ত পরিশোধিত করে এবং দেড় থেকে দুই লিটার দূষিত বর্জ্য শরীর থেকে বের করে দেয়। পানি হোক, লবণ হোক, দূষিত যে কোনো কিছুই কিডনি শরীর থেকে বের করে দেয়।
কিডনি রোগের লক্ষণ
১) সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব: কিছুতেই ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না, কাজ করার নামেই গায়ে জ্বর আসছে— এই সব উপসর্গকে অবহেলা করবেন না। কাজকর্মের উদ্যম হারিয়ে ফেলা, কিডনির সমস্যার অন্যতম প্রধান লক্ষণ। কিডনির মূল কাজই হল রক্তকে পরিশুদ্ধ করা। কাজেই কিডনি সঠিক ভাবে কাজ না করলে রক্তে বিষাক্ত উপাদানগুলি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে শরীরে ক্লান্তি ভাব আসে।
২) ত্বকের সমস্যা: শরীরের লবণ ও প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থের ভারসাম্য রক্ষা করা কিডনির কাজ। ত্বকের জেল্লা বজায় রাখতে ও হাড়ের স্বাস্থ্যরক্ষায় এই উপাদানগুলির বড় ভূমিকা থাকে। কিডনি বিকল হতে শুরু করলে শুষ্ক খসখসে ত্বক, ত্বকের ঘা, চুলকানি ও হাড়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩) অনিদ্রা: কিডনি ঠিকঠাক না কাজ করলে মূত্রের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থগুলি দেহের বাইরে বেরোতে পারে না। এটি অনিদ্রার অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত মানুষদের ঘুম না আসার সমস্যা সুস্থ মানুষদের তুলনায় অনেক বেশি।
৪) প্রস্রাবে সমস্যা: বার বার প্রস্রাবের বেগ আসছে মানেই যে ডায়াবিটিস, এমনটা কিন্তু নয়। কিডনির অসুখেরও লক্ষণ হতে পারে এটি। বিশেষত রাতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বার মূত্রত্যাগ করতে উঠলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। মূত্রের সঙ্গে রক্তপাত বা মূত্রে অতিরিক্ত ফেনা হওয়াও কিডনি বিগড়ানোর উপসর্গ।
৫) প্রস্রাবে ব্যথা: প্রস্রাবের সময় ব্যথা হওয়া কিডনির সমস্যার আরেকটি লক্ষণ। মূলত প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বালাপোড়া- এগুলো ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের লক্ষণ। যখন এটি কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে তখন জ্বর হয় এবং পিঠের পেছনে ব্যথা করে। প্রস্রাবের সাথে রক্ত গেলে এটি খুবই ঝুঁকির বিষয়।এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৬) পা ফুলে যাওয়া: কিডনির সমস্যায় রক্তে সোডিয়ামের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। এর ফলে পায়ের পাতা, গোড়ালি ফুলে যায়। বার বার প্রস্রাবের কারণে শরীরে জলের ঘাটতি হয়, তাই হাঁটতে গেলে পেশিতেও মাঝেমধ্যেই টান পড়ে।
কিডনি রোগ প্রতিরোধে করণীয়
১. কিডনি রোগের অন্যতম ঝুঁকির কারণ ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ। সুতরাং কিডনি ভালো রাখতে হলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
২. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যথার ওষুধ এবং এন্টিবায়েটিক খাওয়া যাবে না।
৩. নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে এবং শরীরের অতিরিক্ত ওজন দ্রুত কমিয়ে ফেলতে হবে। যারা ধূমপান করে, তাদের জন্য ধূমপান ত্যাগ করার অন্যতম একটি কারণ হতে পারে।
৪. খাবারের সাথে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
৫. প্রস্রাব কমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। এতে ৯০-৯৫ ভাগ স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে। তবে এক দুই সপ্তাহ চলে গেলে আর স্বাভাবিক পর্যায়ে আসে না।
৬. পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। রক্তে কলস্টেরল যেন সবসময় স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। প্রতিদিন বেশি পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই