ঢাকা : এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর পরিস্থিতি দেশজুড়ে ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভেঙেছে অতীতের সব রেকর্ড। মশাবাহিত এই রোগটি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে তরুণ বিশেষ করে শিশুদের আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখার তথ্য মতে, চলতি বছরের ১ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৫৪ হাজার ৪১৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে ১১ হাজার ৩১৬ জনের বয়স ০ থেকে ১৫ বছরের কোঠায়। যা মোট আক্রান্তের শতকরা ২০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আর ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সী আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৯০ জন। যা মোট আক্রান্তের ১৩ দশমিক ০২ শতাংশ। অর্থাৎ এডিস মশাবাহিত রোগটিতে মোট আক্রান্তের ৩৩ দশমিক ৮১ শতাংশই শিশু ও কিশোর।
মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের এক-তৃতীয়াংশের মতোই মৃত্যুর সংখ্যাতেও এগিয়ে শিশু-কিশোররা। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২৬১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। যাদের ৫৫ জনই ২০ বছর বা তার কম বয়সী শিশু-কিশোর। এর মধ্যে ০ থেকে ৫ বছর বয়সী ১১ জন, ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী ১৩ জন, ১১-১৫ বছর বয়সী ১৪ জন এবং ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সী ১৭ জন রয়েছেন।
সরকারি তথ্যের পাশাপাশি হাসাপাতালগুলোতেও একই ধরনের চিত্র লক্ষ্য করা যায়। হাসপাতালগুলোর একটি বড় অংশই শিশু ও কিশোরদের দ্বারা পরিপূর্ণ। এর মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক শিশু ভর্তি রয়েছে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে। হাসপাতালের রোগী পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাসপাতালে রোগীর চাপ অত্যন্ত বেশি। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় আমরা বর্তমানে ১০০টি শয্যা ডেঙ্গু ডেডিকেটেড করেছি। এটিও রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। আমাদের এখানে সব ক্রিটিক্যাল রোগীরা আসেন। আমরা সাধারণ অবস্থায় ভর্তি নিচ্ছি না। তবুও শয্যা দেওয়া কঠিন হচ্ছে।
চলতি বছরে শিশু হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ এক বছরের নিচের শিশু, এক বছরের শিশু ১৫ শতাংশ এবং এক থেকে পাঁচ বছর শিশু ৩২ শতাংশ এবং পাঁচ থেকে দশ বছর ৩৫ শতাংশ বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক।
পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে হাসপাতালটির প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগী যদি বাড়ে তাহলে আমরা আরও একটি ওয়ার্ড ডেঙ্গু ডেডিকেটেড করে দেব। প্রয়োজনে পুরো হাসপাতাল ডেঙ্গু ডেডিকেটেড করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে সাধারণ রোগী ভর্তি করা কমিয়ে দিয়েছি। ডেঙ্গু ওয়ার্ডগুলোতে ভিজিটের জন্য আমরা চিকিৎসকদের তিনটি ভাগে ভাগ করে সিডিউল করে দিয়েছি। ২৪ ঘণ্টাই আমাদের চিকিৎসক-নার্সরা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জ্বর হলেই সাথে সাথে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হলে সাথে সাথে অভিভাবককে সতর্ক হয়ে যেতে হবে। কোনো বাচ্চার যদি মারাত্মক ঠান্ডা লেগে যায়, খেতে না পারে, বমি হয়, পেটে সমস্যা দেখা দেয় এবং দুর্বল হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :