• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

বিপর্যস্ত জনজীবন, হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৪, ২০২৪, ১১:০১ এএম
বিপর্যস্ত জনজীবন, হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা

ঢাকা : শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বায়ুদূষণ; যা ভোগাচ্ছে সবাইকে। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুসহ নানা বয়সীদের ভিড় বেড়েছে হাসপাতালে।

পৌষের শেষ দিকে শীতের প্রকোপ গত কয়েকদিনে বেড়ে যাওয়ায় ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধির তথ্য দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি বাইরের জেলাগুলো থেকে অনেক অসুস্থতা নিয়ে রোগী আসছে। হাসপাতালগুলো ঘুরেও দেখা গেছে রোগীদের ভিড়।

আবহাওয়া অফিস জানাচ্ছে, ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গত ২৪ ঘণ্টায় নেমেছে ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রিতে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে। নওগাঁর বদলগাছীতে ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি, সৈয়দপুরে ৯ ডিগ্রি, রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি এবং পাবনার ঈশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

শীতের দাপটের সঙ্গে ঢাকার বাতাস আরও বিষাক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শনিবার (১৩ জানুয়ারি) বিকালে ঢাকার অবস্থান ছিল তিন নম্বরে। বিকাল পৌনে ৫টায় ঢাকার বাতাসের একিউআই ছিল ১৯৫, দিনের বায়ুমান ১৮০। বাতাসের এ মান চরম অস্বাস্থ্যকর।

আইকিউএয়ারের তথ্যে দেখা গেছে, গত ১৫ ডিসেম্বরের পর ঢাকার বাতাসের মানের সূচক একিউআই কখনই ১৮০ এর কম ছিল না।

ঠান্ডার সঙ্গে বায়ু দূষণের কারণে অসুস্থতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার তথ্য দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারেও রোগী বাড়তে দেখা গেছে।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে রোগীদের ভিড়। বহির্বিভাগের সামনে এক শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন হাসিনা বেগম নামে এক নারী।

নোয়াখালীর বসুরহাট থেকে তাকরিম ও তাফসির নামে দুই মাস এগারো দিন বয়সী জমজ দুই নাতি নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন হাসিনা। এরমধ্যে তাকরিম নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি, তাফসিরের জ্বর আসায় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে এসেছেন।

তিনি বলেন, প্রথমটার জ্বর হলে আমাদের ওখানকার প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাই। অবস্থা খারাপ হলে তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে আসতে বলেন ডাক্তার। তাকরিমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এক সপ্তাহ আগে।

তাফসিরেরও গত চার দিন আগে থেকে জ্বর। আজ এখানে নিয়া আসছি, ডাক্তার পরীক্ষা দিছে। রিপোর্ট দেখার পর প্রয়োজনে ভর্তি দেবেন।

সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ১৯ মাস বয়সী নাবিলা সুলতানাকে নিয়ে এসেছেন তার মা আয়েশা খাতুন।

আয়েশা বলেন, সাত-আটদিন ধরে ঠাণ্ডা, কাশি। কিছুতেই কমতেছে না। এজন্য এই হাসপাতালে নিয়া আসছি।

মোহাম্মদপুরের সাইফুল ইসলাম তার ৬ মাস বয়সী শিশুপুত্র ওমরকে নিয়ে এসেছেন শিশু হাসপাতালে। ওমর গত ৬ দিন ধরে জ্বরে ভুগছে।

সাইফুল বলেন, তার জ্বরজারি খুব একটা হয় হয় না। শীত বাড়ার পরই জ্বর আসছে। সঙ্গে কাশিও আছে। এজন্য নিয়ে আসলাম। ডাক্তার দেখে বুকের এক্সরে, রক্ত পরীক্ষা দিয়েছেন।

ঠান্ডার সঙ্গে পাতলা পায়খানার মতো ভিন্ন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে অনেক শিশুর। ঢাকার মধ্য বাড্ডা থেকে দুই বছরের সাগ্নিক দাসকে শিশু হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন তার মা অনিমা দাস।

অনিমা বলেন, গত চার দিন ধরে সাগ্নিকের জ্বর। পাশাপাশি শুক্রবার থেকে পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে।

ডাক্তার দেখিয়ে বাসায়ই ওষুধ খাওয়াচ্ছিলাম। জ্বর কমে, আবার বাড়ে। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে পাতলা পায়খানা। এজন্যই এখানে আসা।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা শনিবার (১৩ জানুয়ারি) বলেন, শীত ও বায়ুদূষণজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে।

তাদের অনেকে আসছে সর্দি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, হাঁচি-কাশি নিয়ে। একটা অংশের তীব্র জ্বর, গলাব্যথা, কাশির উপসর্গ রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, দেখা গেছে এই ধরনের রোগীদের কোনো সংক্রমণ নাই, জ্বরও নাই। কিন্তু নাক বন্ধ থাকায় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, নবজাতক হলে দুধ টেনে খেতে পারে না। বাচ্চা ঘুমাতে পারে না, কান্নাকাটি করে। বাচ্চারা শ্বাসতন্ত্রের নানা ধরনের সংক্রমণ এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এই সময় বাচ্চাদের অ্যাজমাও বেড়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনস-বিসিপিএসের বর্তমান এই সভাপতি বলেন, শীতের সময় বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। বায়ুদূষণের ফলে বিভিন্ন বস্তুকণার পরিমাণ বাড়ে। এসব বস্তুকণা ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার ছাতা হিসেবে কাজ করে।

যার ফলে ওই ডাস্ট পার্টিকেল নিঃশ্বাসের সঙ্গে শ্বাসতন্ত্রে যাওয়ায় ছোটবড় সবারই ক্রনিক কাশি হচ্ছে। সবগুলো সমস্যাই শৈত্যপ্রবাহের সময়, শৈত্য প্রবাহ চলে যাওয়ার সময় বেশি হচ্ছে।

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের জটলায় কথা বলে জানা যায়, রোগীদের প্রায় সবাই শ্বাসতন্ত্রের নানা সমস্যা নিয়ে এসেছেন। তাদের অনেককেই একটু পরপর কাশতে দেখা যায়।

কাশি ও শ্বাসকষ্টের জন্য ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না বেরাইদ থেকে আসা গৃহিণী সিনথিয়া।

তার স্বামী ইমন হোসেন বলেন, ঠাণ্ডা বাড়ার পর থেকেই হঠাৎ করে তার সর্দি আসে। এরপর থেকে প্রচণ্ড কাশি আর শ্বাসকষ্ট। ঠিকমতো দম নিতে পারতেছে না। এজন্য হাসপাতালে আনছি। ডাক্তার ওষুধ দিছেন আর কয়েকটা পরীক্ষা করতে দিছেন।

ষার্টোর্ধ্ব মাকে নিয়ে আসা আশরাফুল হক জানান, তার মায়ের ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে। শীত এলে সেটি বাড়ে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও আছে। যে কারণে হাসপাতালে আসা।

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. সেরাজুল ইসলাম শনিবার (১৩ জানুয়ারি) বলেন, হাসপাতালে এখন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে রোগীরা বেশি আসছেন। বেশি ঠাণ্ডা ইনহেল করার কারণে এটা হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও বাচ্চারা বেশি আসছেন, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।

অধিক মাত্রায় শীতের এ সময়ে যতটা সম্ভব ঘরের ভেতর থাকা এবং শরীরকে সব সময় গরম রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সব সময় গরম খাবার খাওয়া, গরম পানি পান করা দরকার। এসব নিয়ম মেনে চললে কিছুটা ভালো থাকা যাবে।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!