বরগুনা: উপকূলীয় অঞ্চল বরগুনাহ পাথরঘাটায় আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও বেড সংকটে ফ্লোরেই থাকতে হচ্ছে অনেক রোগীদের। অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন রোগীরা। তবে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়লেও এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কোনো রোগী মারা যাননি। ডেঙ্গু রোগীর পাশাপাশি হাসপাতালে ভয়াবহ রূপ নিয়ে বাড়ছে অন্য রোগীর সংখ্যা। নিওমোনিয়া, কাশি, ইসফেকশন ও ডেঙ্গুসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে অসংখ্য রোগী। চিকিৎসক সংকটের কারণে সেবা পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক ও সেবিকাদের নিয়েও রোগীদের স্বজনদের রয়েছে নানা অভিযোগ। তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রায় সময়ই দু-চার বার ডেকেও কোনো ডাক্তার ও সেবিকাদের পাওয়া যায় না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকার কারণে হাসপাতাল নিয়ে রয়েছে তাদের বিভিন্ন অভিযোগ।
সোমবার (১১ নভেম্বর) পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুসারে, জানুয়ারি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে ২১৬ জন। জানুয়ারি মাসে ১৬ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে আট জন, মার্চ মাসে ছয় জন, এপ্রিল মাসে সাতজন, মে মাসে ১৭ জন, জুন মাসে চার জন, জুলাই মাসে ১০ জন, আগস্ট মাসে ১২ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ২৮ জন, অক্টোবর মাসে ৬৪ জন, নভেম্বর মসের ১০ দিনে ৪৪ জন চিকিৎসা নিয়েছে। সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রতি মাসেই বাড়ছে দ্বিগুণ ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই ১০ মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছে মোট ৫৬ হাজার ৬৫১ জন রোগী। এরমধ্যে বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে ৩৮ হাজার ৬৫৫ জন, জরুরি বিভাগ থেকে ১৭ হাজার ৯৯৬ জন চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ছয় হাজার ২৬৭ জন। প্রতিদিন গড়ে ১৮০ থেকে ২০০ জন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে চান জন চিকিৎসক।
ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি কামারহাট কালিপুরের সঞ্জীব দেব কুমার বলে, গত বুধবার আমি ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হই। তখন আমার প্লাটিলেট ছিল ৪০ হাজার, দীর্ঘ ৫ দিন চিকিৎসা নেয়ার পর আমার প্লাটিলেট হয়েছে এক লাখ ৩৭ হাজার। কিন্তু ডাক্তার সংকট থাকার কারণে জরুরী প্রয়োজনে সব সময়ের জন্য ডাক্তার পাওয়া যায় না। ডাক্তার জাহিদ স্যার আমাকে আন্তরিকতার সাথে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে তিনি আমাকে বলেছে দুই লাখ ৫০ হাজার প্লাটিলেট হলে আমি বাসায় যেতে পারবো।
চিকিৎসা নিতে এসে রফিক বলেন, দেড় দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। একজন অসুস্থ রোগী নিয়ে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নেয়া দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে। ফ্লোরগুলোতে ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। নোংরা পরিবেশে বাধ্য হয়েই রোগী নিয়ে থাকতে হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, আমাদের ২৯ জন চিকিৎসকের বিপরীতে চার জন চিকিৎসক রয়েছে। চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীদের সেবা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। পরিচ্ছন্ন কর্মী, টেকনোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ানসহ অনেক পদে জনবল সংকট রয়েছে। ডেঙ্গু রোগীর সাথে সাথে বাড়ছে শিশুরোগ। সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ইনফেকশন জনিত রোগ নিয়ে শিশু ভর্তি হচ্ছে। এ ছাড়া ডেঙ্গুরোগ নিয়েও শিশুরা আসছে। তবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়লেও হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সামগ্রী আছে। প্রতিদিন রোগী বাড়তে থাকলে নরমাল স্যালাইনের সংকট দেখা দিতে পারে।
উপজেলায় কোন এলাকায় ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত সংখ্যা বেশি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বরগুনা জেলায় পাথরঘাটায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। হাসপাতালে ভর্তি অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী পৌরসভার বাসিন্দা।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌরসভার প্রশাসক রোকনুজ্জামান খান বলেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সে জন্য পৌর সংশ্লিষ্ট সবাই সক্রিয় আছেন। ২য় রাউন্ডে মশা নিধনে স্প্রে কার্যক্রম শেষ হয়েছে। ৩য় রাউন্ড আবার মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে।
এসএস