ঢাকা : কাবুলের বোরকা কারবারিদের ব্যবসা এখন রমরমা। বাজারে গেলেই দেখা যায় ডজন-ডজন নীল রঙের বোরকা ঝুলছে দোকানগুলোতে।
তালেবানরা কাবুলের দিকে এগিয়ে আসছে শুনেই শহরের নারীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। আরিফ নামে এক বোরকা ব্যবসায়ী দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, আগে আমাদের অধিকাংশ ক্রেতা আসতেন শহরের বাইরে থেকে। এখন বোরকা কিনছেন শহরের নারীরা।
ক্রেতা আইলা জানান, গত বছর যে বোরকার দাম ছিল ২০০ আফগানি (২.৫ ডলার), তা এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার আফগানিতে (২৫ ডলার থেকে ৩৭ ডলার)। কাবুলের নারীদের আতঙ্কের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বোরকার দাম।
ঐতিহ্যবাহী আফগান বোরকা নীল রঙের। বিশ্বজুড়ে আফগান নারীদের সমার্থক এই নীল রঙের বোরকা। ভারি কাপড়ে তৈরি এই পোশাক মাথা থেকে পা পর্যন্ত সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখে। চোখের কাছে শুধু দেখার জন্য জালের মতো কাপড় থাকে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান শাসনামলে নারীদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক ছিল। বোরকা না পরে ঘর থেকে বের হলে কঠোর শাস্তি পেতে হতো।
২০০১ তালে তালেবানের পতনের পর আফগান নারীদের ওপর থেকে বোরকা পরার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেওয়া হয়। তবে অনেকেই ধর্মীয় ও ঐতিহ্যগত কারণে বোরকা পরতেন। আবার অনেকেই বোরকা ছাড়া নিজের পছন্দের পোশাক পরতেন। কাবুলের রাস্তায় এখনো ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক পোশাকের মিশেলে তৈরি রং-বেরঙের পোশাক পরা নারীদের দেখা মেলে। কিন্তু, তালেবান ফের ক্ষমতা দখল করে নেওয়ায় হারিয়ে যাবে এসব পোশাক। বোরকা পরতে বাধ্য হবেন সব নারী।
ষাটোর্ধ্ব ফাওজিয়া জানান, দুই দশক আগে মেয়েরা বোরকা না পরে বের হলেই তালেবানরা তাদের মারধর করত।
মিরিয়াম নামে এক তরুণী জানান, তার স্বামী তাকে জোর করে বোরকা কেনার জন্য বাজারে পাঠিয়েছেন। আমি যে ধরনের কাপড় পরি, সেগুলো বদলে আমাকে বোরকা পরতে বলেছেন আমার স্বামী, যেন বাইরে গেলে আমার ওপর তালেবানের নজর কম পড়ে।
হেরাত দখলের পরপরই তালেবানের পক্ষ থেকে অনলাইনে ঘোষণা দেওয়া হয়, এখন থেকে বাইরে গেলে নারীদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের মোট বাসিন্দার দুই-তৃতীয়াংশের বয়সই ৩০-এর নিচে। শহরটির অধিকাংশ নারীই তালেবান শাসন দেখেননি। তাই কাবুলের অনেক অল্পবয়সী নারীই বোরকা পরতে চান না। এ নিয়ে তাদের পরিবারেও মনোমালিন্য চলছে। মেয়েদের রক্ষা করার জন্য বোরকা পরার অনুরোধ করছেন অভিভাবকরা।
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন কাবুলের নারীরা : এদিকে তালেবানের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে, আফগান নারীরা চাইলে হিজাব পরে বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন। এমনকি চাকরিও করতে পারবেন। পড়াশোনাও করতে পারবেন।
এক ভিডিও বার্তায় তালেবানের অন্যতম প্রভাবশালী মোল্লা বারাদার আখন্দজাদা বলেছেন, আফগানিস্তানের মানুষের সেবা আর তাদের জীবনমান উন্নয়ন করার সময় এসেছে।
কিন্তু এরমধ্যে তালেবান-নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি প্রদেশে চাকরিজীবী নারীদের বরখাস্ত করার অভিযোগ এসেছে। কিছু জায়গায় নারীদের বোরকা পরতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :