ঢাকা : ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র হামলা ও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেইসাথে দক্ষিণ, পূর্ব এবং উত্তরের প্রধান ইউক্রেনীয় শহরগুলির চারপাশে যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন যে রাশিয়ান বাহিনী চেষ্টা করছে রাজধানী কিয়েভ পুরোপুরি দখলে নেয়ার। এরপর তারা দেশটির নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করবে।
রাজধানীতে, মাইডান স্কয়ারের কাছে একটি বড় ধরণের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং শহরের ত্রয়েশ্চিনা এলাকায় একাধিক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কিয়েভের উপর গোলা হামলার শব্দ এতোটাই তীব্র ছিল যে শহরের কেন্দ্র থেকে কয়েক মাইল দূর পর্যন্ত শব্দ পেয়েছেন তারা।
কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলছে, শহরের চিড়িয়াখানার কাছে এবং শুলিয়াভকা শহরের আশেপাশে ৫০টিরও বেশি বিস্ফোরণ এবং ভারী মেশিনগানে গোলাগুলি হয়েছে।
ফক্স নিউজের সংবাদদাতা ট্রে ইংস্ট বলেছেন যে কিয়েভ "এই মুহূর্তে একাধিক দিক থেকে" আক্রমণের শিকার হয়েছে।
ইউক্রেনীয় স্টেট স্পেশাল সার্ভিসের মতে, রাজধানীর ট্রয়েসচিনা এলাকার সিএইচ পি-৬ পাওয়ার স্টেশনের কাছে তীব্র লড়াই চলছে। এই হামলার মাধ্যমে পুরো শহরটিকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে।
কিয়েভের পেরেমোহি অ্যাভিনিউতে গাড়ির ধ্বংসাবশেষ এবং বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
ভাসিলকিভের একটি বিমান ঘাঁটির কাছে তীব্র লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে রাশিয়ান প্যারাট্রুপাররা কিয়েভের উপর হামলা চালানোর জন্য এই ঘাঁটিকে তাদের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করবে।
অন্যদিকে ইউক্রেনীয় বাহিনী দাবি করছে যে তারা, কৃষ্ণ সাগরের শহর মাইকোলাইভে থেকে রাশিয়ানদের সফলভাবে হটিয়ে দিয়েছে। সেইসাথে কিয়েভ সেনা ঘাঁটিতে হামলা ঠেকিয়ে দেয়া হয়েছে।
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী শনিবার একটি ফেসবুক পোস্টে জানায়, কিয়েভের একটি সেনা ঘাঁটিতে রাশিয়ান সৈন্যরা আক্রমণের চেষ্টা করলে তারা এর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস রুশ সেনাদের ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস রুশ সেনাদের ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, শান্তিকে আরেকটি সুযোগ দেওয়া উচিত।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পরপরই তিনি মন্তব্য করেন, যেখানে ইউক্রেনে আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে রাশিয়া।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে রাশিয়ার ভেটো ক্ষমতার কারণে এই খসড়া প্রস্তাবটি ব্যর্থ হয়ে যায়।
"জাতিসংঘের জন্ম হয়েছিল যুদ্ধাবস্থায়, যুদ্ধের অবসান ঘটাতে। আজ সেই উদ্দেশ্য অর্জিত হয়নি। কিন্তু আমাদের কখনোই হাল ছাড়লে চলবে না। আমাদের শান্তিকে আরেকটি সুযোগ দিতে হবে," টুইট করেন মি. গুতেরেস।
এর কিছুক্ষণ পরে, তিনি ইউক্রেন হামলা চালানো রাশিয়ান সেনাদের তাদের ব্যারাকে ফিরে যেতে বলেন।
রাশিয়ায় জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন যারা খসড়াকে সমর্থন করেননি, একে তিনি "রুশ-বিরোধী" প্রস্তাব বলে আখ্যা দিয়েছেন।
নিরাপত্তা পরিষদের এগার সদস্য দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। চীন, ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ভোটদান থেকে বিরত থাকে।।
এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কিয়েভে লড়াই প্রতিহত করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি ইউক্রেনীয়দের সতর্ক করে বলেছেন যে তারা কোন অবস্থায় রাজধানীকে "হারাতে পারবে না"।
এজন্য "খুব কঠিন" এক রাতের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন তিনি।
রাশিয়ান রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ইইউ প্রথমবারের মতো সরাসরি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
এছাড়া অনেক দেশ রাশিয়ার বাণিজ্যিক এয়ারলাইনস এবং ব্যক্তিগত জেট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ
আপনার মতামত লিখুন :