ঢাকা : খুব দ্রুত হারে গলে যাচ্ছে এশিয়ার হিন্দুকুশ হিমালায়ের হিমবাহগুলি, এতে করে শতাব্দীর শেষ সময় অর্থাৎ ২১০০ সাল নাগাদ বরফ গলে আয়তনের ৭৫ শতাংশ হারাতে পারে এই হিমালয়। ফলে বন্যা ও সুপেয় পানির ঘাটতিতে পরবে এশিয়ার ২০০ কোটি মানুষ।
মঙ্গলবার (২০ জুন) কাঠমান্ডু ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্টের এক প্রতিবেদনে এমনটাই সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয় সামনের বছরগুলোতে আকস্মিক বন্যা এবং তুষারপাত আরও বাড়বে। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভুগবে ২৪ কোটি মানুষ।
হিন্দুকুশ হিলালয় অঞ্চলের (এইচকেএইচ) হিমবাহগুলো আশপাশের পাহাড়ি এলাকার ২৪ কোটি মানুষের পানির উৎস। এ ছাড়া নিচের দিকে নদী উপত্যকার আরও ১৬৫ কোটি মানুষ হিমালয়ের পানির ওপর নির্ভরশীল।
মাইগ্রেশন বিশেষজ্ঞ এবং এই প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক আমিনা মাহারজান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষরা। বর্তমানে নেয়া পদক্ষেপগুলো অপর্যাপ্ত এবং বরফ গলার প্রভাব বৃহত্তর সমর্থন ছাড়া এই সম্প্রদায়গুলি মোকাবেলা করতে অক্ষম হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এই বিশেষজ্ঞ।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে মাউন্ট এভারেস্টের হিমবাহগুলিতে গত ৩০ বছরে ২০০০ বছরের সমপরিমান বরফ গলেছে।
আইসিআইএমওডির প্রতিবেদনের প্রধান লেখক পরিবেশ বিজ্ঞানী ফিলিপাস ওয়েসটার বলেন, তাপমাত্রা বাড়লে হিমবাহগুলো গলবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এগুলো গলছে অস্বাভাবিক হারে, দ্রুততার সঙ্গে। তিনি আরও বলেন, "আমরা হিমবাহগুলি হারাচ্ছি, এবং ১০০ বছরের মধ্যেই সেগুলি হারাচ্ছি।"
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, হিমালয়ের হিমবাহগুলো ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে আগের দশকের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি হারে গলেছে। এভাবে গলতে থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ হিমবাহগুলোর ৮০ শতাংশ উধাও হয়ে যাবে।
হিন্দুকুশ হিমালয় আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, চীন, ভারত, মায়ানমার, নেপাল এবং পাকিস্তান জুড়ে ৩৫০০কিমি প্রসারিত। প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে গঙ্গা, সিন্ধু এবং মেকংসহ এই অঞ্চলগুলোর ১২টি নদীর অববাহিকায় জলের প্রবাহ চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সর্বোচ্চ হতে পারে, যার প্রভাব পড়বে এই নদীগুলোর আশেপাশে বসবাসকারীদের উপর।
ফলে আগামী দিনগুলোতে ঘন ঘন বন্যা ও তুষারপাতের সম্মুখীন হবে দেশগুলো।
সাধারণত গঙ্গা, সিন্ধু, মেকং, হোয়াংহো (ইয়েলো), ইরাবতীসহ বিশ্বের বড় বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নদীর পানির উৎস হিমালয়ের হিমবাহগুলো এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ১৬৫ কোটির বেশি মানুষের খাদ্য, জ্বালানি ও দূষণমুক্ত বায়ুর জোগান দেয়। একই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক এই মানুষের আয় অনেকটাই এর ওপর নির্ভরশীল।
সোনালীনিউজ/এমটিআই