• ঢাকা
  • বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১
জি-২০ সম্মেলন

যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হলেন বিশ্বনেতারা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩, ১২:২৩ পিএম
যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হলেন বিশ্বনেতারা

ঢাকা : জি-২০ সম্মেলন নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা ছিল, এখানে কোনো ঘোষণাপত্র জারি করা যাবে কি না? কারণটা হলো—ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মতবিরোধ। পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা করার পক্ষে ছিল।

জি-২০ সম্মেলন নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা ছিল, এখানে কোনো ঘোষণাপত্র জারি করা যাবে কি না? কারণটা হলো—ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মতবিরোধ। পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা করার পক্ষে ছিল। কিন্তু রাশিয়া, চীন তা মানতে রাজি ছিল না। ভারত এই যুদ্ধে কারো পক্ষই নেয়নি। ফলে তারা এমন একটা অবস্থান নিতে চাইছিল, যাতে সর্বসম্মতভাবে বিষয়টি নিয়ে এগোনো যায়। আর এটাই ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কূটনীতিকদের পরীক্ষা ও চ্যালেঞ্জ। শেষপর্যন্ত সেই পরীক্ষায় তারা সফল হয়েছেন। সবার সম্মতিতে ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়েছে।

ঘোষণাপত্রে কী বলা হয়েছে?

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দিল্লি ঘোষণাপত্রে মোট সাতটি পয়েন্ট আছে। দিল্লি ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বে যুদ্ধ ও অন্য সংঘাতের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। মানুষের কষ্ট বাড়ছে বলে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আমরা বালিতে যে আলোচনা করেছিলাম, তা মনে করিয়ে দিয়ে আবার বলতে চাই—আমরা আমাদের জাতীয় অবস্থানের কথা বলেছি এবং জাতিসংঘের সাধারণ সভা ও নিরাপত্তা পরিষদে যে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর কথা বলেছি। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো দেশ যেন জোর করে অন্য দেশের জমি অধিকার এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা না করে। পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি একেবারেই মানা যায় না।’

ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘জি-২০ হলো আন্তর্জাতিক আর্থিক সহযোগিতার মঞ্চ। এটা কোনো ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের মঞ্চ নয়। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, এই বিষয়গুলোর একটা বড় প্রভাব বিশ্বের অর্থনীতির ওপর পড়ে।’

দিল্লি ঘোষণাপত্রে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিশ্বের খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তায়, সরবরাহ শৃঙ্খলা, মুদ্রাস্ফীতি ও বৃদ্ধির ওপর। কম উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো এখনও কোভিড ১৯-এর ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি, তারা আরও চাপের মধ্যে পড়েছে।’

তুরস্কের প্রয়াসের প্রশংসা করে বলা হয়, ‘রাশিয়া ও জাতিসংঘের সচিবালয়ের মধ্যে যে ইস্তাম্বুল সমঝোতা চুক্তি হয়েছিল, তাতে রাশিয়ার খাদ্যসামগ্রী ও সার যাতে বিশ্ববাজারে আসে এবং ইউক্রেনের বন্দর থেকে খাদ্যশস্য যাতে বাইরে আসতে পারে তা নিয়ে সমঝোতা হয়। আমরা চাই, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য ও সার যেন সময়মতো বিশ্ববাজারে আসতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এটা আফ্রিকার উন্নয়নশীল ও কম উন্নত দেশের চাহিদা।’

এ প্রসঙ্গ টেনেই খাদ্য ও জ্বালানি সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে ঘোষণাপত্রে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘আমরা আবেদন জানাই, পরিকাঠামোর ওপর আঘাত যেন না করা হয়। এই সংঘাতের প্রভাব যেভাবে বেসামরিক মানুষের ওপর পড়ছে এবং তার ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুর অবস্থা তৈরি হচ্ছে, তাতে আমরা গভীরভাবে চিন্তিত।’

ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, ‘আমরা সব দেশের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, তারা যেন আন্তর্জাতিক আইন, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব মেনে চলে। শান্তি ও স্থিরতাকে অক্ষুণ্ন রাখে। তারা যেন আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান করে। বিশ্বের অর্থনীতির ওপর যুদ্ধের প্রভাবের মোকাবিলায় আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য যেকোনো গঠনমূলক উদ্যোগ আমরা সমর্থন করব। জাতিসংঘের চার্টার মেনে শান্তি, বন্ধুত্ব ও সু-প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বাড়ানো এবং এক বিশ্ব, এক পরিবার ও এক ভবিষ্যৎ নীতির পক্ষে থাকব আমরা।’

কী করে মতৈক্য হলো?

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মতৈক্যের পেছনে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে। প্রচুর আলোচনা হয়েছে। সবাই সহযোগিতা করেছে। তারপর ঘোষণাপত্র নিয়ে মতৈক্য হয়েছে। পুরো বিষয়টার মধ্যে স্বচ্ছ্বতা ছিল।’

আর বর্তমানে ভারতের প্রেসিডেন্সিতে জি-২০ শেরপা অমিতাভ কান্ত বলেন, ‘ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে এ ব্যাপারে ভারত খুবই ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। আলোচনা খুবই কঠোর ও সংকল্পবদ্ধ ছিল। অবশেষে বিষয়টি নিয়ে মতৈক্য হয়েছে। আমরা বলেছি—আমাদের নেতারা চান, তাই আমাদের একমত হতেই হবে।’

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!