ঢাকা : গত শনিবার সকালে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ‘আল-আকসা ফ্লাড’ নামে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের অভিযান বা হামলা এবং এরপর ইসরায়েলি বাহিনীর ‘সোর্ড অব আয়ন’ নামের অভিযান বা পাল্টা হামলায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে হু-হু করে। হামাসের হামলায় অন্তত ৬০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। সেখানে আহত মানুষের সংখ্যা ২২০০ জনের বেশি।
দেশটির কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সময় যত গড়াচ্ছে, সীমান্ত এলাকায় হতাহতের সংখ্যা তত বাড়ছে।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৪১৩ ফিলিস্তিনি। আর আহত মানুষের সংখ্যা অন্তত ২৩০০ জন। দুই এলাকাতেই হতাহতের মধ্যে আছেন অনেক বিদেশি নাগরিকও। হামাস যাদের ইসরায়েল থেকে ধরে নিয়ে গেছে তাদের মধ্যেও আছেন প্রবাসীরা।
এদিকে গতকাল ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে জড়িয়েছে লেবাননের ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও। তারা ইসরায়েলে রকেট ছুড়ছে, পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। পরে তারা পরিস্থিতিকে পুরো যুদ্ধাবস্থা হিসেবে বর্ণনা করেছে। একই সঙ্গে হামাসের হামলার কঠোর বদলা নেওয়ার কথা বলেছে।
রোববার (৮ অক্টোবর) দিনভর গাজার সীমান্তে ভারী অস্ত্র ও বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছে। বিবিসি বলছে, গতকাল দিনভর গাজা উপত্যকায় পাল্টা বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, যার অবসানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
আইডিএফ জানিয়েছে, গাজায় হামাসের অবস্থান লক্ষ্য করে আক্রমণ করা হচ্ছে। তারা বলেছে, ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় আমরা কাজ করে যাব।
এদিকে হামাস ও ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) নেতার সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট কথা বলেছেন বলে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত মিডিয়া খবর দিয়েছে। তবে ওই দুই নেতার সঙ্গে ইব্রাহিম রাইসির আলোচনার বিষয়বস্তু প্রকাশ করা হয়নি। হামাস ইরানের সমর্থনপুষ্ট। দেশটি তাদের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে থাকে।
রোববার (৮ অক্টোবর) সকালের দিকে হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ শুরু করার আগে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে দিয়েছিল ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। গাজা উপত্যকার সাতটি ভিন্ন ভিন্ন এলাকার নাগরিকদের নিজেদের ঘর থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
তারা জানিয়েছে, যেসব এলাকায় হামাসের ঘাঁটি রয়েছে, সেখানে নতুন হামলা চালানো হবে। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে হামলার সতর্কতা আসার পর গাজার নাগরিকদের অনেকে এরই মধ্যে তাদের ঘর ছেড়ে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
প্রতিশোধের হুমকি দিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার সবশেষ ভিডিও বার্তায় বলেছেন, তাদের শত্রুকে এর চূড়ান্ত মূল্য দিতে হবে, যা তাদের আগে কখনো দিতে হয়নি।
বিবিসি জানাচ্ছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকেই গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলের কর্র্তৃপক্ষ।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিসের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে, ইসরায়েল গাজায় খাবার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেবে।
নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ২০০৭ সাল থেকে মিসর ও ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় চলাচল এবং প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। গাজার ওপরের বিমান চলাচলের পথ ও গাজা উপত্যকা-সংলগ্ন উপকূল নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। গাজা ভূখণ্ডের একদিকে প্রবেশে ও পণ্য চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল, অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ করে মিসরের কর্র্তৃপক্ষ।
শনিবার সারা রাত ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ২২টি স্থানে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাদের সংঘর্ষ হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত দুটি জায়গায় ইসরায়েলি নাগরিকদের জিম্মি করে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের কর্র্তৃপক্ষ। কয়েকটি জায়গায় জিম্মি হয়ে থাকা ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্ত করার খবরও জানাচ্ছে তারা।
হামলার প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর কিব্বুতজ বে’এরি অঞ্চলের একটি খাবার ঘরে জিম্মি করে রাখা নাগরিকদের মুক্ত করা হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম। গাজা উপত্যকা-সংলগ্ন সীমানায় দুপক্ষের লড়াইয়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর একজন কমান্ডারও নিহত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
অন্যদিকে হামাসের শীর্ষ কমান্ডার মোহাম্মেদ দেইফ বলেছেন, ‘আমরা শত্রুদের এর আগেই সতর্ক করেছি। তারা শত শত বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করেছে। তাদের অপরাধের জন্য শত শত মানুষ শহীদ হয়েছে।’ হামাসের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা করার পেছনে তাদের সহযোগী ইরানের সহায়তা রয়েছে। তবে আকস্মিক এই হামলার পেছনে কী কারণ রয়েছে, তা বিস্তারিতভাবে জানায়নি হামাস।
বিভিন্ন রিপোর্ট সূত্রে বিবিসি জানতে পেরেছে, ইরান এই ফিলিস্তিনি হামলার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ইরানের সংবাদ সংস্থা আইএসএনএর খবর দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনির উপদেষ্টা রহিম সাফাভি বলেছেন, আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের অভিনন্দন জানাই, যতক্ষণ ফিলিস্তিন ও জেরুজালেমের স্বাধীনতা না আসে আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের পাশে থাকব।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ ইসরায়েলের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। অবশ্য সৌদি আরব, রাশিয়ার মতো কয়েকটি দেশ ও জাতিসংঘ যত দ্রুত সম্ভব হামলা-পাল্টা হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
এমটিআই