• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

ইসরায়েল যা-ই করুক, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘সাত খুন মাফ’ কেন


আন্তর্জাতিক ডেস্ক অক্টোবর ২১, ২০২৩, ১০:২৯ এএম
ইসরায়েল যা-ই করুক, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘সাত খুন মাফ’ কেন

ঢাকা : গাজায় যতই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হোক, বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হোক, যুক্তরাষ্ট্র দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে। হামাস-ইসরায়েল চলমান যুদ্ধ প্রসঙ্গে একই কথা তারা ঘুরেফিরে বলছে, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্বস্ত মিত্রের জন্য জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রের চালান পাঠিয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানাতে সেই দেশে পাঠানোর পর গত বুধবার নিজেই ইসরায়েল সফরে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

ইসরায়েলকে এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ঢালাও সমর্থন ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়ন চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে। সামরিক শক্তি ও সম্পদে ফিলিস্তিন তাদের ধারেকাছেও নেই। গত ১২ দিনের নির্বিচার ইসরায়েলি হামলায় ইতিমধ্যে প্রায় ৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু। ইসরায়েলের এতটা বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের পরও তাহলে কেন ইসরায়েলকে অটুট সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র?

যখন থেকে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন : মধ্যপ্রাচ্য তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল। রয়েছে সুয়েজ খালের মতো কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। এটাই বিশ্বশক্তিগুলোকে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে নামতে উৎসাহী করে তুলেছিল।

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে তুলনামূলকভাবে দুর্বল মিসর, সিরিয়া ও জর্ডানের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে ইসরায়েলি বাহিনী। এই যুদ্ধে ইহুদি রাষ্ট্রটি ফিলিস্তিনের বাকি ঐতিহাসিক জায়গা দখল করে নেয়। এর বাইরে সিরিয়া ও মিসরের কিছু অঞ্চল দখল করে।

তখন থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র দ্ব্যর্থহীনভাবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছে। তারা এই রাষ্ট্রটির প্রতি আরব বিশ্বের কোনো ধরনের মনোভাবকে তোয়াক্কা করে না।

প্রশ্ন হচ্ছে, আর কী এমন কোনো বিষয় রয়েছে, যার কারণে ইসরায়েলকে অন্ধ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? এই প্রসঙ্গে বলতে হয় ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের কথা। সেই যুদ্ধে আবারও মিসর ও সিরিয়াকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে ইসরায়েলি বাহিনী।

এই যুদ্ধে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রেরও কিছু ভূমিকা ছিল। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধে মিসরকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করতে চেয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বাধায় সেটা ব্যাহত হয়। যুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও মিসরের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে।

কতটা সহায়তা পায় ইসরায়েল : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বিদেশি সহায়তা পেয়ে থাকে ইসরায়েল।

২০১৬ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইসরায়েলের সঙ্গে ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই করেন। ওই চুক্তির আওতায় পরবর্তী ১০ বছরে মার্কিন সামরিক সহায়তা পাবে ইসরায়েল। এর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোমের তহবিলও রয়েছে।

তবে ইসরায়েলের আসলে সহায়তার খুব একটা দরকার হয় না। কারণ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি খাত থেকে এই দেশের বিপুল পরিমাণ আয় রয়েছে, যা ইসরায়েলকে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত করেছে।

মার্কিন রাজনীতিকদের সমর্থন : যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইসরায়েলের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান মার্কিন রাজনীতিকদের মধ্যে কার প্রতি ইসরায়েলের সমর্থন বেশি। যত দূর জানা যায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ইসরায়েলের অগাধ সমর্থন রয়েছে। তিনি ইসরায়েলকে সমর্থন করেন বলে ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরা তাকে সমর্থন করেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুরও তার প্রতি সমর্থন রয়েছে। চার বছরের ক্ষমতার মেয়াদে ট্রাম্প ইসরায়েলের ঘোর সমর্থক ছিলেন।

মার্কিন কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির বেশির ভাগ সদস্য প্রকাশ্যেই ইসরায়েলকে সমর্থন করে থাকেন।

প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট-দলীয় সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি, সদ্য সাবেক স্পিকার জন ম্যাকার্থি, সিনেটর চাক শুমার থেকে শুরু করে বেশির ভাগ সদস্যই ইসরায়েলের পক্ষে। এই নামের তালিকা করতে গেলে বোধ করি খুব কমই বাদ যাবেন। তারা বর্তমান সংঘাতে ইসরায়েলের পক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলছেন এবং হামাসকে নির্মূল করার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন।

মার্কিন জনমতের ভূমিকা : দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন জনমত ইসরায়েলের পক্ষে এবং ফিলিস্তিনের বিপক্ষে। কারণটা হচ্ছে, ইসরায়েলের শক্তিশালী জনসংযোগব্যবস্থা রয়েছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ২৫ শতাংশ মার্কিন ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। ২০২০ সালের তুলনায় এই হার ২ শতাংশ এবং ২০১৮ সালের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি।

২০২১ সালে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতি মার্কিন জনগণের সমর্থন ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে। ২০২০ সালের তুলনায় তা ৭ শতাংশ বেশি।

তবে এখনো মার্কিন জনমত ইসরায়েলের প্রতি অনেক বেশি। একই জরিপে দেখা যায়, ৫৮ শতাংশ মার্কিন ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল।

ডলারের দিক থেকে প্রভাব : ইসরায়েলপন্থী বিভিন্ন গ্রুপ মার্কিন রাজনীতিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে থাকে। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ইসরায়েলপন্থী গ্রুপগুলো ৩ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার তহবিল দিয়েছে, যার ৬৩ শতাংশ পেয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা, ৩৬ শতাংশ পেয়েছেন রিপাবলিকানরা।

ওপেন সিক্রেট ডট ওআরজি-এর তথ্যমতে, ২০১৬ সালের তুলনায় ওই বছর প্রায় দ্বিগুণ নির্বাচনী তহবিলের জোগান দিয়েছে ইসরায়েলপন্থী গ্রুপগুলো। সূত্র- আল জাজিরা

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!