ঢাকা : দীর্ঘ সময় পার হওয়া এবং যুদ্ধের ময়দানে ইউক্রেনের সেনারা ব্যর্থ হওয়ায় রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে এখন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো। শান্তি চুক্তি হলে রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের কী কী দিয়ে দিতে হবে- সে ব্যাপারেও এখন চলছে আলোচনা।
শনিবার (৪ নভেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা এখন এ যুদ্ধ নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ যুদ্ধ অনেকটাই থমকে গেছে এবং ইউক্রেনও তাদের বহুল কাঙ্খিত পাল্টা আক্রমণে বড় কোনো ব্রেকথ্রু পায়নি।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনকে যেসব দেশ সহায়তা করেছে- সেগুলোর মধ্যে ন্যাটো সদস্যভুক্তসহ ৫০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা গত মাসে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তি করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।
সৈন্য-সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন : সম্প্রতি বাইডেন ইসরায়েল ও ইউক্রেনের জন্য তহবিল চাইলে তাতে বাধ সাজে রিপাবলিকান নেতারা। তারা শুধুমাত্র ইসরায়েল ইস্যুতে সহায়তা দেওয়ার পক্ষে ভোট দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছেন, এ যুদ্ধে যারা যতদিন বেশি টিকে থাকতে পারবে তারাই জিততে পারবে। শীতের আগে এখন দুই দেশের সেনারাই পরিখা খনন করে অবস্থান নিচ্ছেন। যার অর্থ যে কোনো ধরনের বড় সাফল্য এখন আর সম্ভব নয়। অপরদিকে ইউক্রেন সেনাবাহিনীতে নতুন সদস্য যুক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে। যেখানে রাশিয়ার জনসংখ্যা বেশি।
অপর এক সেনা পরিচয় গোপন রেখে বলেছেন, আমাদের অনেক ইস্যু নিয়ে সমস্যা আছে। প্রথম, আমাদের সেনাদের প্রশিক্ষণের মান। দ্বিতীয়, আমাদের পর্যাপ্ত অস্ত্র ও কামান নেই। আমরা কামানের জন্য হাহাকার করছি। আর পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
এএফপির সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, কয়েক সপ্তাহ আগে ইউক্রেন একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম পুনর্দখল করার দাবি জানায়। কিন্তু এখনো সেখানে রুশ বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই চলছে।
জনসমর্থন হারিয়েছে ইউক্রেন : যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না পাওয়ায় অতিরিক্ত সহায়তা পেতে ইউক্রেনের জন্য যে জনসমর্থন দরকার, তা অনেকটাই কমে গিয়েছে।
চলতি সপ্তাতে এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভের জন্য মাত্রারিক্ত সহায়তা দিচ্ছে- এ বিষয়ে মত দিয়েছেন ৪২ শতাংশ আমেরিকান। ইউরোপেও ইউক্রেনের জন্য মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির নেতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধ এবং ইউক্রেনে যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে বৈদেশিক সহায়তা যে আরও বেশি প্রয়োজন সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন কর্মকর্তারা।
এনবিসিকে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা ইউক্রেনকে জানিয়ে দিয়েছেন তাদের কাছে এ বছরের শেষ পর্যন্ত সময় আছে। এরপর তাদের উপর শান্তি আলোচনা জন্য চাপ বাড়বে।
শনিবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তাসংস্থা এএফপি। এতে মুদ্রি (ছদ্মনাম) নামের এক সেনার সঙ্গে কথা বলে সংস্থাটি। তার বক্তব্যে ওঠে এসেছে বর্তমানে ভালো অবস্থানে নেই ইউক্রেন। তিনি বলেছেন, আমি গত কয়েকদিন ধরে বলছি। ধাপে ধাপে আমরা এ যুদ্ধে হারছি। এ যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে; বিষয়টি আমাদের জন্য ততই খারাপ হবে।
পুতিন কি আলোচনার জন্য প্রস্তুত : বাইডেন প্রশাসনের কাছে এমন কোনও ইঙ্গিত নেই যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শান্তি আলোচনায় সম্মত হবেন। দুইজন আমেরিকান কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুতিন এখনো বিশ্বাস করেন যে- অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে ইউক্রেনে পশ্চিমা সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হলে তিনি যুদ্ধে জয়ী হবেন। আর তিনি সে অপেক্ষাই করছেন।
সামরিক সরঞ্জাম ও সৈন্য সরবরাহে রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় দেশই ভুগছে। পশ্চিমা এক কর্মকর্তা জানান, রাশিয়া তার আর্টিলারি উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে দুই মিলিয়ন শেল প্রস্তুত করতে সক্ষম হবে দেশটি। কিন্তু গত এক বছরে রাশিয়া ১০ মিলিয়নেরও বেশি শেল খরচ করে ফেলেছে। যা তাদের জন্য ভাবনার বিষয় হতে পারে। সূত্র- দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স
এমটিআই