• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নেতানিয়াহুর অপরাধে নিষ্ক্রিয় আইসিসি


আন্তর্জাতিক ডেস্ক নভেম্বর ১৪, ২০২৩, ১১:২০ এএম
নেতানিয়াহুর অপরাধে নিষ্ক্রিয় আইসিসি

ঢাকা : গাজায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর বস্তুত গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। নিহত হওয়া ১১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজারই শিশু। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রীতিনীতি, আইনকানুনের কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না। হামলার বাইরে নেই হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা স্কুল।

এ অবস্থায় নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে প্রত্যাশিত মাত্রায় সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না। অথচ ইউক্রেনে শিশুদের জোরপূর্বক রাশিয়া নেওয়াসহ বেআইনি স্থানান্তরের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে চলতি বছর মার্চে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি।

অবশ্য আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান গাজা যুদ্ধ নিয়ে তার দপ্তরের তৎপরতা নিয়ে এমন এক অবস্থান ব্যক্ত করেছেন, যা ভারসাম্যপূর্ণ। তিনি বলেন, গাজা ও পশ্চিমতীরে এরই মধ্যে আইসিসি তদন্ত শুরু করেছে। সেই সঙ্গে হামাস ও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য যেসব আন্তর্জাতিক অপরাধ করেছে, তা আমলে নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন থেকে যেসব ছবি ভেসে আসছে তা যেকোনো মানুষের হৃদয়কেই ব্যথা দেবে।’

ব্রিটিশ নাগরিক করিম খান তার দায়িত্বকালে পুতিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে নজির স্থাপন করেছেন। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পুতিনের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ প্রথম কোনো ঘটনা। ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের আলামত সংগ্রহের বিষয়ে ব্যাপক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে তার দপ্তর। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংসতার বিরুদ্ধে সেই কর্তৃত্ব ব্যবহার নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

পুতিনের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থাকে যেসব দেশ স্বাগত জানিয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল যুক্তরাজ্য। সম্প্রতি লেবার পার্টির তরফ থেকে আইসিসিকে তদন্ত শুরুর আহ্বান জানানো হয়েছে। যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নেতা ও ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলকে জবাবদিহি করতে সব দলের সমর্থন প্রত্যাশা করেন। কিন্তু সেই পদক্ষেপ যুক্তরাজ্য সরকার আটকে দেবে কি না, সেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি এবার কী পদক্ষেপ নেয় তাই সবার নজরে।

এর আগে পাঁচ বছর তদন্ত শেষ করার পর ২০২১ সালে ইসরায়েলের অপরাধের প্রাথমিক তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করে আইসিসি, যা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সমন্বিতভাবে আটকে দেয়।

২০২১ সালের এপ্রিলে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইসরায়েলপন্থি আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে বলেন, তার সরকার আইসিসিতে ইসরায়েলের শুরু হওয়া তদন্ত প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করবে। এ ক্ষেত্রে তার যুক্তি ছিল, ইসরায়েল আইসিসির কার্যপ্রণালির ভিত্তি ‘রোম চুক্তির’ কোনো পক্ষ নয়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনও আইসিসির পদক্ষেপের বিরোধিতা করে যুক্তি দেয়, ফিলিস্তিনি সার্বভৌম কোনো দেশ নয় এবং এজন্য তারা আইসিসির কাঠামোর মধ্যে পড়ার যোগ্য নয়।

তবে এসব পরিস্থিতি সত্ত্বেও করিম খান গত সপ্তাহে বলেন, ফিলিস্তিনে যেকোনো পক্ষের সংঘটিত অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে আইসিসির কর্তৃত্ব রয়েছে। এমনকি গাজা এবং পশ্চিমতীরে এখন যা ঘটছে তাও।

সাধারণত আইসিসি আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলো বিশেষত লিবিয়া ও সুদানের মতো দেশের শীর্ষ রাজনীতিক কিংবা অরাষ্ট্রীয় সত্তাকে যেভাবে লক্ষ্যবস্তু করে এবং এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, পশ্চিমাবিশ^ ও তাদের মিত্ররা সব সময় দায়মুক্তি পেয়ে যায়। নেতানিয়াহুও তাই দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছেন।

১৯৪৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করা, ভূমি দখল করা, হাসপাতালে আক্রমণ এবং নির্বিচারে নারী ও শিশু হত্যার মতো জঘন্য কাজ করেও ইসরায়েলকে এখন পর্যন্ত জবাবদিহির আওতায় আনা যায়নি। যদিও ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার কেউই আইসিসি-সংক্রান্ত রোম চুক্তির স্বাক্ষরকারী নয়। তবু আইসিসি রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ ক্ষেত্রে ইসরায়েলকে দায়মুক্ত করার যুক্তি হিসেবে ওয়াশিংটন বারবার বলে এসেছে, সদস্য নয়, এমন দেশের ক্ষেত্রে আইসিসির কোনো কর্তৃত্বকে তারা স্বাগত জানায় না। সর্বশেষ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও তাই বলেছে।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!