ঢাকা : অভিবাসন, পরিবেশসহ একাধিক বিষয়ে ঐক্যের ডাক দিলেন ইউরোপের চরম দক্ষিণপন্থী নেতারা। আসন্ন ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনে তৃতীয় স্থান দখল করে এমন পরিবর্তন আনতে চান তারা৷
মহামারি, যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি, শরণার্থীর ঢলের মতো একের পর এক সংকট ইউরোপের মানুষের মনে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে তুলছে৷ ব্যালট বাক্সে সেই পরিস্থিতির ফায়দা তুলছে চরম দক্ষিণপন্থী দলগুলি৷
একের পর এক দেশে নির্বাচনে সাফল্য এবং জনমত সমীক্ষায় ভালো ফল করে এই দলগুলি সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চাইছে৷ সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের সাধারণ নির্বাচনে জয় এবং জার্মানিতে জনসমর্থনের বিচারে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসায় এই শিবির আরো চাঙ্গা বোধ করছে৷
গত রবিবার (৩ ডিসেম্বর) ইটালির ফ্লোরেন্স শহরে মিলিত হয়ে চরম দক্ষিণপন্থী নেতারা ইউরোপের ভবিষ্যতের রূপরেখা তুলে ধরলেন৷ আগামী বছর ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিজেদের আসনসংখ্যা আরো বাড়িয়ে রণকৌশল স্থির করলেন তারা৷
ইটালির উপ-প্রধানমন্ত্রী মাটেও সালভিনি বলেন, ইইউ পার্লামেন্টে কমপক্ষে তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শিবির হয়ে ওঠাই চরম দক্ষিণপন্থী দলগুলির লক্ষ্য৷ বর্তমানে ‘আইডেন্টিটি অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি’ বা আইডি নামের এই রাজনৈতিক শিবির ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে৷
নেদারল্যান্ডসের নির্বাচনে জয়ী চরম দক্ষিণপন্থী দলের প্রধান খেয়ার্ট ভিল্ডার্স ভিডিও লিংকের মাধ্যমে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন৷ তার মতে, নেদারল্যান্ডস ও ইউরোপে ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’ জাতীয় নির্বাচনেও সমমনস্ক দলগুলির জয়ের ঢেউ সৃষ্টি করতে পারে৷
ইউরোপে শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রবেশ আরো কঠিন করে তোলাই চরম দক্ষিণপন্থী দলগুলির প্রধান লক্ষ্য৷
ফ্রান্সের ন্যাশানাল ব়্যালি পার্টির নেতা জর্দ্যাঁ বারেলা বলেন, ইউরোপ আফ্রিকার ‘ফাইভ স্টার হোটেল’ হয়ে উঠতে পারে না৷ তার মতে, বিশাল আকারে অভিবাসন হিংসা ও অপরাধের জন্য দায়ী৷ সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ইউরোপের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রাও অনেকটা দুর্বল করতে চায় এই শিবির৷
তারা ২০৩৫ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত নতুন গাড়ি বাজারে নিষিদ্ধ করার বিরোধী৷ জার্মানির এএফডি দলের নেতা টিনো ক্রুপালা ‘গাড়ির বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ বন্ধ করার ডাক দেন৷
সাম্প্রতিক নির্বাচনি সাফল্য সত্ত্বেও ইউরোপের চরম দক্ষিণপন্থী দলের মধ্যে এখনো ঐক্যের অভাব রয়েছে৷ সম্মেলনে ইউরোপের তিন প্রধান নেতার অনুপস্থিতিও নজর কেড়েছে৷ ফ্রান্সের মারিন ল্য পেন, নেদারল্যান্ডসের খেয়ার্ট ভিল্ডার্স ও জার্মানির আলিস ভাইডেলকে সেখানে দেখা যায়নি৷ খোদ ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির ব্রাদার্স অফ ইটালি দল সালভিনির চরম দক্ষিণপন্থী জোটে যোগ দেয় নি৷
বিভিন্ন মৌলিক বিষয়েও মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ যেমন নেদারল্যান্ডসের নেতা ভিল্ডার্স মাত্রাতিরিক্ত সরকারি ব্যয়ের বিরোধিতা করলেও ইটালির সালভিনি ইউরো এলাকার বাজেটের ক্ষেত্রে কড়া নিয়ম তুলে দেবার পক্ষে৷ রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইসরায়েল-হামাস সংকটের মতো পররাষ্ট্র নীতির বিষয় সম্পর্কেও দলগুলির একক অবস্থান দেখা যাচ্ছে না৷
এমটিআই