ঢাকা: গত সপ্তাহেই সাজার মুখে পড়ে বরখাস্ত হয়েছিলেন বিরোধীদলীয় ১৫ এমপি। এবার সেই একই কারণেই এক দিনে পার্লামেন্টের ৭৮ জন এমপি বরখাস্ত হওয়ার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল।
দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, সোমবার ভারতের পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তৃতার মাঝেই নতুন সংসদ ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সরব হন বিরোধী সাংসদরা। তুমুল চিৎকার শুরু হয় সংসদ কক্ষে।
এমন হৈ-হট্টগোল করে বিরোধী এমপিরা সংসদের নিরাপত্তা প্রশ্নে অমিত শাহের বিবৃতি দাবি করার কারণে ৩৩ জন এমপি-কে বরখাস্ত করেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই রাজ্যসভাতেও দেখা যায় একই চিত্র। সেখান থেকে বরখাস্ত হন ৪৫ জন এমপি।
সাম্প্রতিক সময়ে একসঙ্গে এত জন সাংসদকে বরখাস্ত করার ঘটনা দেখা যায়নি। আগামী ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে ভারতের পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশন। তত দিন এই এমপি’রা অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন না।
সোমবার লোকসভায় টেলিকম বিল পেশ করে সরকার। তা নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই তুমুল বিক্ষোভ দেখান বিরোধী সাংসদরা। তাদের দাবি ছিল, সংসদভবনের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হোক। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিবৃতি দাবি করেন বিরোধীরা। স্লোগানও দিতে শুরু করেন তারা। এই বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন লোকসভার কংগ্রেস নেতা দলনেতা অধীর চৌধুরী। কংগ্রেস সাংসদদের মতই স্লোগান দেন তৃণমূল ও ডিএমকে সাংসদরাও। এরপরই অসন্তোষ প্রকাশ করে স্পিকার ৩৩ জন এমপি’কে বরখাস্ত করেন।
রাজ্যসভাতেও একই বিষয় নিয়ে হই হট্টগোল হয়; যা নিয়ে বারবার স্পিকার জগদীপ ধনখড়কে দেখা গেছে বিরোধী এমপি’দের সতর্ক করতে। তারপরও তারা বিক্ষোভ থামাননি। এরপরই ধনখড় ৩৪ জন এমপি’কে বরখাস্ত করেন এবং এর পাশাপাশি প্রিভিলেজ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আরও ১১ জন এমপি’ও বরখাস্ত হন রাজ্যসভা থেকে।
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় বিরোধী এমপি’দের নিজ নিজ আসনে গিয়ে বসতে বলেছিলেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাতও করেননি তারা। ধনখড়কে বারবার বলতে শোনা গেছে, 'মাননীয় সাংসদদের সংসদে নিয়মানুযায়ী আচরণ করার অনুরোধ করছি।' কিন্তু বিশৃঙ্খলা না থামায় শেষে বরখাস্তের পদক্ষেপ নেন তিনি।
গত সপ্তাহে ১৪ জন বিরোধী এমপি লোকসভা থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন। আর সোমবার মিলিয়ে লোকসভা থেকে মোট ৪৭ জন এমপি বরখাস্ত হলেন। ওদিকে, রাজ্যসভা থেকে গত সপ্তাহে তৃণমূলের একজন এমপি বরখাস্ত হয়েছিলেন। আর সোমবারের ৪৫ জন মিলিয়ে রাজ্যসভা থেকে বরখাস্ত এমপি’র সংখ্যা দাঁড়াল ৪৬ জনে। বিরোধীদের বলছেন, “এভাবে কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু তা সম্ভব হবে না।”
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত বুধবার লোকসভার নিরাপত্তা ভঙ্গ করে দুই আগন্তুকের দর্শক গ্যালারি থেকে কক্ষে ঢুকে পড়াকে কেন্দ্র করে। তাদের সঙ্গে ছিল রংবোমা। হলুদ রঙের ধোঁয়া তারা সভাকক্ষের চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
দু’জনকেই ধরে ফেলার পর তুলে দেওয়ার হয় নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে। পার্লামেন্টের বাইরে থেকে আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ জন এ ঘটনায় জড়িত বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
এআর