ঢাকা : ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে জান্তা বাহিনী । ক্ষমতার মসনদে বসার পর থেকেই শুরু হয় জান্তার দমন-পীড়ন।
গত চার বছরে জান্তা বাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন ও হামলায় দেশটিতে অন্তত সাড়ে ৪ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। বন্দী করা হয়েছে ২৫ হাজার মানুষকে। এছাড়া জান্তা বাহিনীর নৃশংস হামলায় মিয়ানমারজুড়ে অন্তত ৭৮ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সূচক অনুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট সরকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলছে মিয়ানমারের সংবাদ মাধ্যম ইরাবতী।
ইরাবতীর প্রতিবেদন অনুসারে, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম বলছে ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকট এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে দেশটি। যার ফলে ১ কোটি ২৯ লাখ মানুষ বা জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশর জীবন সরাসরি প্রভাবিত হচ্ছে। সংস্থাটির হিসেবে, এই ক্ষুধার্থ মানুষদের জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন।
বিপদজনক অঞ্চল : গ্লোবাল পিস ইনডেক্স ২০২৩ অনুসারে, সামরিক শাসনের অধীনে মিয়ানমার এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলির মধ্যে ১৮ তম স্থানে রয়েছে। এই অঞ্চলের আরেক দেশ উত্তর কোরিয়া এর নীচের অবস্থানে রয়েছে।
সবচেয়ে বড় কারাগার : অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) অনুসারে, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত, মিয়ানমারে মোট ১৯ হাজার ৯৯৩ জন রাজনৈতিক বন্দী কারাগারে ছিল, যার মধ্যে ৩ হাজার ৭৮০ জনই নারী।
এমনকি আগের শাসনামলেও এই সংখ্যা কখনো তিন-চার হাজার ছাড়িয়ে যায়নি বলছে ইরাবতী।
সাংবাদিকদের দ্বিতীয় নিকৃষ্ট কারাগার : ইরাবতী জানায়, ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের পর থেকে গত তিন বছরে জান্তা গনমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ক্রমাগত লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। যার ফলে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে চীনের পরে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ কারাগারের দ্বিতীয়তে রয়েছে মিয়ানমার।
সাংবাদিকদের সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) অনুসারে, গত বছর ৪৩জন সাংবাদিক কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে জান্তা বাহিনী।
এছাড়া এএপিপি জানিয়েছে যে ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের পর থেকে ১৯২ জন মিডিয়া কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দেশটিতে, যাদের মধ্যে ৬১ জন এখনও কারাগারে রয়েছে।
'মুক্ত নয়' পদবী : একই সঙ্গে মার্কিন থিংকট্যাংক ফ্রিডম হাউস বলেছে, মিয়ানমার ব্যক্তির মুক্ত চলাচলের জন্যও উন্মুক্ত নয়। সংস্থাটির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে মিয়ানমারকে "মুক্ত নয়" হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
নাগরিক স্বাধীনতা বিভাগে, মিয়ানমার ৬০ এর মধ্যে ৯ পয়েন্ট পেয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক অধিকারের জন্য অভ্যুত্থানের পর থেকে সামরিক বাহিনীর দ্বারা রাজনৈতিক নিপীড়নের কারণে ৪০এর মধ্যে শূন্য পেয়েছে দেশটি।
রেকর্ড উচ্চতায় বাস্তুচ্যুত : জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের কারণে তিন বছরে অন্তত ২১ লাখ মানুষ স্থায়ীভাবে তাঁদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন। একই সময়ে আরও অন্তত ৭০ হাজার মানুষ মিয়ানমার ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। ২০১৭ সালে জান্তা বাহিনীর নিপীড়নের কারণে এবং এর আগে সব মিলিয়ে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা সংকলিত ২০২৩ দুর্নীতি উপলব্ধি সূচকে (সিপিআই) ১৮০টি দেশের মধ্যে মিয়ানমার ১৬২তম স্থানে রয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত এনএলডি সরকারের অধীনে অভ্যুত্থানের আগে দেশটি ২০২২ সালে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫৭তম এবং ২০২০ সালে ১৩৭তম স্থানে ছিল।
এছাড়া পরিবেশ সূচকেও মিয়ানমারের অবস্থান তলানিতে। এনভায়রনমেন্ট পারফরম্যান্স সূচকে মিয়ানমারের নিচে আছে কেবল একটি দেশ—ভারত।
এছাড়া ধর্মীয় স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ার ফলে মার্কিন কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে মিয়ানমারকে "বিশেষ উদ্বেগের দেশ" হিসাবে তালিকাভুক্ত করে।
এমটিআই