ঢাকা : পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান কারাগারে বন্দী। দেশটির জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তিনি বা তার পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে ছিল নিষেধাজ্ঞা। অনুগত সদস্যরা নির্বাচনে অংশ নিলেও ব্যবহার করতে পারেনি দলীয় প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট। স্বতন্ত্র পরিচয়ে লড়তে হয়েছে তাদের। এরপরও দেশটির সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন জিতে নিয়েছে পিটিআই সদস্যরাই।
জিও নিউজ জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ২৬৬ আসনের (একটি ফল ঘোষণা স্থগিত ও একটিতে ভোট হয়নি) জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছে ৯৩ আসনে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নওয়াজের দল মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) পেয়েছে ৭৫ আসন। ৫৪ আসন নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে বিলাওয়াল ভুট্টোর দল পিপলস পার্টি (পিপিপি)। বাকি আসনগুলো পেয়েছে ছোট দলগুলো।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, চূড়ান্ত প্রতিকূলতার নির্বাচনে ইমরান খান সমর্থিত প্রার্থীদের এমন সাফল্য দেশটির রাজনৈতিক সমীকরণ বেশ জটিল করে তুলেছে। আর তাদের এমন অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে আছেন দুই নারী। তাদের মধ্যে একজন ইমরান খানের বোন আলিমা খান। অন্যজন ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবির বড় বোন মারিয়াম রিয়াজ ওয়াত্তু।
পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীদের এমন সাফল্যকে ‘নির্বাচনে জয়লাভ’ হিসেবে দেখছেন আলিমা। এরই মধ্যে তিনি বলেছেন, পিটিআই পাকিস্তানের পরবর্তী সরকার গঠনের দাবিদার। তবে এবারের নির্বাচনে দলটিকে হারাতে ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নির্বাচনের আগে পিটিআই কর্মী ও সমর্থকদের কাছে আলোচিত ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেন আলিমা। বিশেষ করে ইমরান খান জেলে যাওয়ার পর দলের রাজনৈতিক কার্যক্রমের অন্যতম মুখপাত্র হয়ে উঠেন তিনি। এ সময় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। তাদের উৎসাহ দিয়েছেন। পাশাপাশি কঠোর ভাষায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন। সক্রিয় ছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়ও।
ইমরান খানের পদচ্যুতির পর থেকেই আলিমা তার সমর্থনে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। গত মে মাসে পাকিস্তানজুড়ে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের অন্যতম আয়োজক তিনি। ওই বিক্ষোভ সংঘর্ষে রূপ নিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি মামলায় তাকে আসামিও করা হয়েছে। গত অক্টোবরে আদালতে এক মামলার হাজিরা দেয়ার পর আলিমা বলেন, পরিস্থিতি যত প্রতিকূলই হোক, ভাইয়ের পাশে থাকবেন তিনি।
এভাবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে আলিমার নাম উঠে এসেছে বারবার। আগে তার পরিচিতি ছিল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে। লাহোরভিত্তিক টেক্সটাইল বায়িং হাউজ ডটকম সোর্সিং প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তার ব্যবসার পরিধি লাহোর থেকে করাচি হয়ে নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত বিস্তৃত।
তবে আলিমার মতো আলোচনায় না এলেও পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীদের এবারের সফলতার পেছনে ভূমিকা রেখেছেন বুশরা বিবির বোন মারিয়াম রিয়াজ ওয়াত্তুরও। বিশেষ করে বুশরা বিবি ও ইমরান খানের বিয়ে নিয়ে আদালতের রায় ও পরবর্তী বিতর্কের সময়ে তাদের পক্ষে জোরালো ক্যাম্পেইন চালিয়েছেন তিনি। তার এ ক্যাম্পেইন সাধারণ জনগণের মধ্যে দম্পতির প্রতি সহানুভূতি তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লন্ডন বিজনেস স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী মারিয়াম। পেশায় ডাটা সায়েন্টিস্ট হলেও অতীতে ওআইসি, বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি ও ইউনেস্কোর বিভিন্ন প্রকল্পে সংযুক্ত ছিলেন। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনেক আগে থেকেই পিটিআইয়ের সক্রিয় কর্মী ছিলেন মারিয়াম। বোন বুশরা বিবির সঙ্গে ইমরান খানকে তিনিই প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন।
এদিকে এককভাবে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় পাকিস্তানে শুরু হয়েছে জোট সরকার গঠনের তৎপরতা। শুক্রবার রাতে ভোটের ফল আসতে শুরু করলে রাতেই সরকার গঠনের ঘোষণা দেন মুসলিম লীগ নওয়াজের (পিএমএল-এন) নওয়াজ শরিফ। জোট সরকার গঠনে পিপিপিসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ছোট ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে নির্দেশ দেন তিনি। তার দল চাইছে, নতুন জোট গঠিত হলে সেই জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন নওয়াজ শরিফ।
যদিও আরেক বড় দল পিপিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জোট গঠনের বিষয়ে তাদের আপত্তি নেই। তবে তারা চায় নওয়াজ শরিফ নয়, পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। পিএমএল-এন সূত্র দাবি করছে, নির্বাচনের ফল প্রত্যাশামাফিক না হওয়ায় ধাক্কা খেয়েছে দলটির নেতৃত্ব। তাদের মতে, নওয়াজ শরিফ, মরিয়ম নওয়াজ এবং পিএমএল-এনের অন্য নেতারা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। ফলে দলটি জনসভা, ঘরে ঘরে প্রচারণা এবং ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের বিষয়ে মনোযোগ দেয়নি।
তবে এখন পর্যন্ত পিপিপির সঙ্গে জোট গঠনই প্রথম বিকল্প ছিল পিএমএল-এনের। কিন্তু তারা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চায় না। ফলে পিপিপির সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হলে পিএমএল-এনকে অন্য দলগুলোর সঙ্গে জোট সরকার গঠনের চেষ্টা করতে হবে।
এমটিআই