ঢাকা: আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনী আচরণবিধি জারি করল ভারতের নির্বাচন কমিশন। প্রচারের সময় কেউ কোনো ধর্মস্থানকে ব্যবহার করতে পারবে না।
গতকাল শুক্রবার প্রচারিত সেই নির্দেশিকায় ইসি স্পস্ট করে বলেছে, মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদ্বারসহ কোনো ধর্মস্থানকে দলীয় প্রচারের সময় ব্যবহার করা যাবে না। ধর্মস্থানে দাঁড়িয়ে নির্বাচনী প্রচার করা চলবে না।
এই নির্দেশের পাশাপাশি সব দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে সজাগ করে ইসি জানিয়েছে, অতীতে বিচ্যুতির জন্য ‘তারকা প্রচারকারীদের’ নৈতিক ভর্ৎসনা করা হতো। এবার থেকে কিন্তু ইসি তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। নির্বাচনী আচরণবিধি মানার ক্ষেত্রে ইসি কড়া মনোভাব নেবে।
নির্বাচনের তারিখ বা তফসিল ঘোষণার দিন থেকেই নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক। সেই আচরণবিধি ভাঙা হলে ইসি নিজের থেকে ব্যবস্থা নেয়, কেউ অভিযোগ করলেও তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।
আচরণবিধিতে বলা আছে, জাত, ধর্ম, বর্ণ বা ভাষার ভিত্তিতে কেউ ভোট চাইতে পারবেন না। পুরোনো সেই আচরণবিধি মনে করিয়ে দিয়ে ইসি এবার নতুন এক নির্দেশ দিয়েছে। বলেছে, ঈশ্বর অথবা বিগ্রহের সঙ্গে ভক্তের সম্পর্ক নিয়ে উপহাস বা কটূক্তি করা যাবে না। এমন কিছু করা যাবে না, যা ভক্তি, ধর্মবিশ্বাস অথবা দৈব ক্ষমতার পক্ষে অসম্মানজনক।
ইসির নির্দেশে বলা হয়েছে, ধর্ম, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা কোনো জাতের নামে রাজনৈতিক প্রচার চালানো যাবে না। নির্বাচনী প্রচারে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া যাবে না। কোনো ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে অর্ধসত্য প্রচারও চলবে না। কোনো জাত বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক ভাষণও দেওয়া যাবে না। এমন কোনো বক্তব্য রাখা যাবে না, যাতে জাত, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার নিয়ে নানা অভিযোগ অনেক দিন ধরেই উঠছে। ইসি এবার সে বিষয়েও বেশ কিছু নির্দেশ দিয়েছে, যাতে ভুয়া প্রচার, অপপ্রচার বা কুরুচিক্রপূর্ণ ব্যক্তি-আক্রমণ বন্ধ করা যায়।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে এ ধরনের নির্দেশিকা অতীতে কখনো জারি করা হয়নি। তফসিল ঘোষণার দিন থেকে আচরণবিধি চালু হয়ে যায়। সেটাই বরাবরের নিয়ম। এবার কেন ইসি আগে থেকে তা জারি করল, কোনো উদ্দেশ্যে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে একটা বিষয় পরিষ্কার, খুব শিগগির নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতে চলেছে।
১০ বছর ধরে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ঘিরে বিরোধীরা সরব। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু ইসির দৃষ্টিতে সেগুলোর একটিও অপরাধ বলে বিবেচিত হয়নি। এ নিয়ে তিন সদস্যের কমিশনে মতপার্থক্যও দেখা দিয়েছিল। মতপার্থক্য নথিভুক্ত করা নিয়ে তিন সদস্যের কমিশনে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছিল।
এআর