ঢাকা: প্রাত্যহিক জীবনের চাহিদা মেটাতে মানুষ সবসময় ভালো কিছুরই সন্ধানে থাকে। উচ্চ বেতন আর সুযোগ-সুবিধা যেখানে আছে সেখানে চাকরি করতে কার না মন চায়। তবে সেটি যদি হয় কোটি টাকার উপরে তাহলে তো কথাই নেই।
এই যেমন কোটি টাকা বেতনে চিকিৎসক আর শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে স্কটল্যান্ডের একটি দ্বীপ। এই দ্বীপের একটি হাসপাতালে নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এই পদের বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ ২৬ হাজার ৯৮ টাকা (১ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড)। হেব্রিডিয়ান দ্বীপপুঞ্জের উস্ট ও বেনবেকুলায় থেকে ওই চিকিৎসককে কাজ করতে হবে।
তা ছাড়া এ এলাকার নিকটবর্তী আইল অব রামে প্রাথমিক স্কুলে আছে পাঁচজন শিক্ষার্থী ও নার্সারি শ্রেণিতে আছে দুজন শিক্ষার্থী। এই সাত শিক্ষার্থীর জন্যও শিক্ষক খোঁজা হচ্ছে। এই শিক্ষকের বেতন হবে ৯৪ লাখ ৮৬ হাজার ৪৯৭ টাকা (৬৮ হাজার পাউন্ড)।
গ্রামীণ পরিবেশে নিয়োগ-সংকট মোকাবিলার প্রচেষ্টার অংশ উচ্চ বেতনে এই নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া এর আরও একটি উদ্দেশ্য আছে, তা হলো স্কটল্যান্ডের এই দ্বীপে নতুন মানুষের বসবাস বাড়ানো।
ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) পশ্চিমাঞ্চলীয় দ্বীপের প্রধান নির্বাহী গর্ডন জেমিসন বলেন, ‘আমরা সব সময় দেখি এখানে কে আসছেন। ওই ব্যক্তি ও তার পরিবারের খেয়াল রাখি। আমরা অংশীদারদের জন্য সুযোগ খুঁজছি, এটা শুধু সফল ব্যক্তিদের জন্য নয়। কারণ, প্রত্যন্ত দ্বীপ এলাকায় সবাই আসতে বা থাকতে চান না। উস্ট ও বেনবেকুলা স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের জন্য অনেক দূরের একটি এলাকা।’
বেনবেকুলা মেডিকেল প্র্যাকটিসের ওপর ভিত্তি করে এনএইচএস পশ্চিমাঞ্চলীয় দ্বীপে নতুন কর্মীদের আকৃষ্ট করতে সাধারণ বেতনের ওপর ৪০ শতাংশ বেশি বেতন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই চিকিৎসকেরা প্রায় ৪ হাজার ৭০০ জনসংখ্যার পাশাপাশি আউটার হেব্রাইডসের ছয়টি দ্বীপের মানুষের চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিষয় দেখভাল করবে।
স্বাস্থ্য বোর্ড বলেছে, এটি একটি বড় প্রণোদনা। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের ‘সবচেয়ে সুন্দর এলাকায়’ কাজ করার সুযোগও এটি। নির্বাচিত প্রার্থীরা এই দ্বীপে স্থানান্তরিত হওয়ার খরচও পাবেন। পাশাপাশি প্রায় ১৩ লাখ ৯৫ হাজার ৭৩ টাকা (১০ হাজার পাউন্ড) ‘গোল্ডেন হ্যালো’ পেমেন্ট পাবেন।
বিবিসি রেডিওর গুডমর্নিং স্কটল্যান্ডকে গর্ডন জেমিসন বলেছেন, ‘যারা এই নির্দিষ্ট ধরনের চাকরি ও দায়িত্ব চান, তারাই এই সুযোগ পাবেন। এটা সবার জন্য নয়। এ কারণেই আমরা তাদের পুরস্কৃত করতে চাই। বিশ্বে এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা এ রকম প্রত্যন্ত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে চান। আমরা একটি টেকসই পরিষেবা চাই। আমরা চাই, এখানে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে থাকুক।’
আইল অব রামে জনসংখ্যা মাত্র ৪০ জন। তারা সবাই কিনলোচ গ্রামের চারপাশে বাস করে। এখানকার রাম প্রাইমারি স্কুলে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী মাত্র পাঁচজন শিক্ষার্থী এবং নার্সারি শ্রেণিতে তিন ও চার বছর বয়সী দুজন শিশু আছে।
হাইল্যান্ড কাউন্সিল এই স্কুলে নতুন প্রধান শিক্ষকের জন্য বছরে বেতন নির্ধারণ করেছে ৮৬ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৩ টাকা (৬২ হাজার পাউন্ড)। এ ছাড়া দূরবর্তী কাজের ভাতা হিসেবে এই শিক্ষককে আরও ৭ লাখ ৬৭ হাজার ২৯০ টাকা (৫ হাজার ৫০০ পাউন্ড) দেওয়া হবে।
কাউন্সিল বলছে, ইতিমধ্যে অনেকেই এই পদের জন্য আগ্রহ জানিয়েছেন। তবে নিয়োগপ্রক্রিয়া এখনো চলছে।
মূল শহর থেকে ৯০ মিনিটের ফেরিযাত্রায় এই দ্বীপে যাওয়া যায়। এখানে বিদ্যুতের মূল গ্রিড নেই। ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। দ্বীপটি লাল হরিণের অভয়াশ্রমের কারণে বেশ পরিচিত। এখানকার বেশির ভাগ জমি স্কটিশ সরকারি সংস্থা নেচারস্কটের মালিকানাধীন। দ্বীপটিতে সর্বশেষ চার বছর আগে কিনলোচে চারটি নতুন বাড়ি তৈরি নির্মিত হয়েছে।
আইল অব রাম কমিউনিটি ট্রাস্ট বলেছে, তারা আশা করে এটি তরুণ পরিবারগুলোকে আকৃষ্ট করবে এবং দ্বীপের জীবনকে আরও উপযোগী করে তুলবে।
এর আগে গত মাসে ওয়েস্ট হাইল্যান্ডের আর্দনামুরচান উপদ্বীপের কিলচোয়ান প্রাইমারি স্কুলে ১৫ জন ছাত্রের জন্য ৭৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮৭ টাকা (৫৩ হাজার পাউন্ড) বেতনে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়।
এআর