ঢাকা : ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে দেশজুড়ে কার্যকর হলো সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ। বিরোধী দলগুলো সমালোচনা করে একে বলে ‘ক্যা’। সোমবার (১১ মার্চ) বিজ্ঞপ্তি জারি করে আনুষ্ঠানিকভাবে এই আইন চালু হওয়ার কথা ঘোষণা করে ভারত সরকার। কিন্তু বিল পাশের চার বছর পর কার্যকর হওয়া এই ‘সিএএ’ আসলে কী? ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন আর বর্তমান সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের পার্থক্যটাই বা কী? কেনই বা সিএএ নিয়ে এত বিতর্ক?
পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতেই আনা হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)। ২০১৯ সালে নাগরকিত্ব সংশোধনী বিল পাশ হলেও বিধি নিয়ে জট থাকায় তা এত দিন বলবৎ করা যায়নি।
সোমবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় প্রজ্ঞাপন জারি করে অবশেষে তা কার্যকর করেছে ভারতের মোদি সরকার। লোকসভা ভোটের আবহে ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তে পুরোপুরি শোরগোল পড়ে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া শিবিরে আনন্দোৎসবের পাশাপাশি আসামের আকাশে প্রতিবাদের মেঘ গাঢ় হচ্ছে।
তাৎপর্যপুর্ণভাবে, ১৯৫৫-র নাগরিকত্ব আইনের সাথে সিএএ-র ফারাক উসকে দিয়েছে বিতর্ক। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে কোনো ধর্মের উল্লেখ ছিল না। ২০১৯ সালে ভারত সরকার যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাস করিয়েছে, তাতে স্পষ্টত ধর্মের উল্লেখ আছে।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে স্পষ্ট বলা আছে, কোনো ভারতীয় বংশোদ্ভূত বা ভারতীয় উপমহাদেশে জন্মানো নাগরিক নির্দিষ্ট মেয়াদের বেশি সময় এদেশে থাকলেই তাকে নাগরিকত্ব দেয়া হবে।
এক্ষেত্রে মুসলিম বা অমুসলিম উল্লেখ করা ছিল না। একই সাথে বলা হয়েছিল নাগরিকত্ব পেতে টানা এক বছর ভারতে থাকতে হবে। এছাড়াও বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতে থাকা বাধ্যতামূলক। নতুন আইনে ওই ১১ বছরের সময়কাল কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে।
কিভাবে সিএএ থেকে সুবিধা পাবেন শরণার্থীরা? আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এদেশে আসা ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে নির্যাতিত শরণার্থীরা ভিসা বা পাসপোর্টের মতো নথি না থাকলেও ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
তবে ২০১৯ সালে সিএএ আইন পাশ হয়ে গেলেও তা কার্যকর হওয়ার বিষয়টি গত চার বছরের উপর ঝুলে ছিল। করোনা পর্বে দেশের নানা প্রান্তে এই আইনের বিরোধিতায় শুরু হয় আন্দোলন। যার জেরে অশান্তি, সহিংসততা প্রাণ যায় প্রায় ১০০ জনের। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মতুয়া সম্প্রদায়ের দাবি ছিল অবিলম্বে সিএএ কার্যকর করার।
কিছুদিন আগে এ বিষয়ে বার্তা দিয়ে ভারতের মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেছিলেন, নির্বাচনের আগেই সিএএ কার্যকর হচ্ছে। সোমবার ভারতব্যাপী সিএএ কার্যকর হওয়ার পর খুশিতে মেতে উঠতে দেখা যায় মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের।
অন্যদিকে, তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ বহু অবিজেপি নেতানেত্রীরা এই আইনের প্রতিবাদ জানান। তাদের অভিযোগ, সংশোধিত আইনে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী।
এছাড়াও, আসামসহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতে আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘু হিন্দুরা ব্যাপক হারে ভারতে চলে আসতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। তাছাড়া, আসামে থাকা বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদেরও (বাংলাভাষী) নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়ে যাবে কেউ কেউ মনে করছেন। ফলে আসামের জনবিন্যাস বদলে যেতে পারে। বিপন্ন হবে স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি।
এছাড়া, সিএএ চালুর পরেই নাগরিকপঞ্জি আপডেট করার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
এমটিআই