ঢাকা : ইসরায়েলে হামলার ৭২ ঘণ্টা আগে প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কবার্তা দেওয়ার দাবি করেছে ইরান। তুরস্ক, জর্ডান এবং ইরাকের কর্মকর্তারা ওই দাবির পক্ষে কথা বললেও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তা অস্বীকার করেছেন।
রোববার (১৪ এপ্রিল) তারা বলেছেন, তেহরান হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি এবং তাদের লক্ষ্য ছিল হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলের ‘মারাত্মক ক্ষতিসাধন’ ।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। এ মাসের প্রথম দিন সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ড্রোন হামলায় ইরানের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হওয়ার জেরে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তেহরান ইসরায়েলে এই হামলা চালিয়েছে।
যদিও ইসরায়েল সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে তারাই যে ওই হামলা চালিয়েছে সেটা ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়।
শনিবার রাতে ইরানের ছোড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ৯৯ শতাংশ ইসরায়েলের ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করা হয়। যদিও এ হামলায় ছোট্ট একটি মেয়ে গুরুতর আহত হয়েছে এবং দুই চিরশত্রু দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
হামলার আগে সতর্কবার্তা পাঠানোর বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাব্দোল্লাহিয়ান রোববার বলেছেন, ইরান প্রতিবেশী দেশ এবং ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে ৭২ ঘণ্টা আগে নোটিস পাঠিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালাতে যাওয়ার কথা বলেছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ইসরায়েলে হামলার আগে তারা ওয়াশিংটন এবং তেহরান উভয়ের সঙ্গেই কথা বলেছেন। হামলার প্রতিক্রিয়া আনুপাতিক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে তারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বার্তা প্রেরণ করেছে বলেও জানিয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বিবৃতি অস্বীকার করে বলেন, সুইজারল্যান্ডের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ওয়াশিংটন ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করলেও ৭২ ঘণ্টা আগে ইসরায়েলে হামলার বিষয়ে তারা কোনো নোটিস পায়নি।
তিনি বলেন, “এটা সম্পূর্ণরূপে অসত্য। তারা কোনো নোটিস দেয়নি। এমনকি তারা এমন কোনো আভাসও দেয়নি যে…. ‘এখানে হামলা হবে, তাই সেই স্থান খালি করে ফেলুন’।
বরং ইসরায়েলে হামলা শুরুর পর তেহরান যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়ে বার্তা পাঠিয়েছে এবং তাদের উদ্দেশ ‘অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক’ ছিল বলেও দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। বলেন, যেহেতু হামলায় বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তাই তেহরান এখন আগেই সতর্কবার্তা পাঠানোর দাবি করে নিজেদের ইমেজ বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
আমরা সুইজারল্যান্ডের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইরানিদের এই বার্তা পাই যে, হামলা চলছে। তাদের সেই বার্তা মূলত এই ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে, এরপর হামলা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তখনও হামলা চলছিল। তারা আমাদের এই বার্তাই পাঠিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আগাম সতর্কবার্তা পাওয়ার কথা অস্বীকার করলেও তারা শুক্রবার ও শনিবার বেশ কয়েকবারই বলেছেন, ইরান যেকোনো সময় হামলা করতে চলেছে, এমনটাই তারা প্রত্যাশা করছেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট বাইডেন সরাসরি তেহরানকে হামলা ‘না করতেও’ বলেছেন।
ইরাক, তুরস্ক এবং জর্ডানের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত সপ্তাহেই ইরান তাদের প্রত্যেককে হামলার বিষয়ে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। হামলার ধরণ নিয়ে বেশ কিছু বিস্তারিত তথ্যও দিয়েছে।
ইরান শনিবার রাতে ১৭০টি ড্রোন, ৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১২০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ।
এমটিআই