ঢাকা : ইরান ইসরাইলে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল। এর মধ্যে অন্তত নয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের বিস্তৃত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম হয়। ইসরাইলের মিত্র ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও জর্ডানের সামরিক বাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও সেগুলো প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
নয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাঁচটি ইসরাইলের নেভাটিম বিমানঘাঁটিতে আঘাত হানে। এতে সি-১৩০ নামে একটি পরিবহন বিমান, একটি পুরো রানওয়ে এবং একটি খালি গুদাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাকি চারটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নেগেভ বিমানঘাঁটিতে আঘাত হানে। তবে এতে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আল জাজিরা।
অ্যারো-৩ ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর একটি নতুন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সম্প্রতি এটি প্রথমবারের মতো মোতায়েন করা হয়। প্রধানত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। তাই ইরানের গত শনিবারের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছিল এর জন্য একটা পরীক্ষা।
কিন্তু সেই পরীক্ষায় পাস করতে অ্যারো-৩ যে ব্যর্থ হয়েছে, তা অনেকটা স্পষ্ট। জানা গেছে, অতি গর্বের এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে এরই মধ্যে পোস্টমর্টেম শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনী। যদিও সাধারণ ইসরাইলিরা প্রকাশ্যে বলছেন, নতুন এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘শতভাগ সফল’।
কিন্তু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাকি দিয়ে দুই বিমানঘাঁটি নয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের নির্ভুল আঘাত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্যদের কপালে চিন্তার ভাজ ফেলেছে।
ইরানি হামলার পর পাল্টা হামলা চালানো হবে কি না সে ব্যাপারে এরই মধ্যে মন্ত্রিদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন নজিরবিহীন চাপের মুখে থাকা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। কিন্তু এ ব্যাপারে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা দুটি প্রধান দলে ভাগ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
প্রথম দলটি হলো নেতানিয়াহুর জোট সরকারের অতি ডানপন্থী। এই দলটি ইরানে পাল্টা হামলা দেখতে চায়। অপর দলটি ইরানের বিরুদ্ধে একটি ‘বৈশ্বিক জোট’ গঠনের পক্ষে। কিন্তু তাদের কাঙিক্ষত সেই ‘বৈশ্বিক জোট’ প্রকৃতপক্ষে সম্পব বা বাস্তবসম্মত কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যেখানে তাদের এক নম্বর মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ইরানে ইসরাইলের পাল্টা হামলায় অংশ নেবে না মার্কিন বাহিনী। এছাড়া পাল্টা হামলা চালাতে সক্ষম হওয়ার জন্য যতটা আন্তর্জাতিক সমর্থনের প্রয়োজন, গাজায় গণহত্যার কারণে তা এই মুহূর্তে ইসরাইলের নেই।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে কনস্যুলেটে হামলার প্রতিশোধ হিসেবে গত শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে ইসরাইলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে নজিরবিহীন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেন থেকেও।
ইসরাইল বলছে, তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। তবে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে বেশিরভাগই ঠেকিয়ে দেয়া হয়েছে। ইসরাইলি কর্মকর্তাদের এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট যে, তারা সব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে পারেনি।
অর্থাৎ অবশিষ্ট ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। তাতে ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। কিন্তু ‘কিল খেয়ে কিল হজম’ করার মতো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য গোপন করার চেষ্টা করছেন নেতানিয়াহু সরকার।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, ইরান ১৭০টি ড্রোন, ৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১২০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এ হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির দাবি করেছে তেহরান। তবে তেল আবিব দাবি করেছে, ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিমান ঘাঁটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত এবং এক শিশু গুরুতর আহত হয়েছে।
হামলার পর ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বার্তা সংস্থা ইরানিয়ান স্টুডেন্টস নিউজ এজেন্সি (আইএসএনএ) একটি কলাম প্রকাশ করে। তাতে জানানো হয়, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরাইলের নেভাতিম বিমান ঘাঁটি এবং হেরমন পাহাড়ের ওপর একটি সামরিক অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বার্তা সংস্থাটি আরও জানায়, নেভাতিম বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। কারণ গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে যে ভয়াবহ হামলা হয়েছিল, সেটি এই ঘাঁটি থেকে চালানো হয়েছিল।
এছাড়া হেরমন পাহাড়ের ওপর থাকা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর একটি গোয়েন্দা অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এই স্থান থেকে সিরিয়ায় ইরানের বিভিন্ন অবস্থানের ওপর চালানো অসংখ্য হামলা পরিচালিত হয়েছিল।
হামলার ক্ষয়ক্ষতি লুকানোর বিষয়টি উল্লেখ করে বার্তা সংস্থাটি বলেছে, ইরানের বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। হামলার কয়েক ঘণ্টা পর রোববার ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি বলেন, ইসরাইলে হামলা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সফল হয়েছে।
এমটিআই