ঢাকা : চলতি সপ্তাহে তীব্র ঝড় ও ব্যাপক ভারী বৃষ্টিপাতের কবলে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় দেশগুলো। বিশেষ করে তীব্র ঝড়ো হাওয়া, ভারী বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যাতে বিপর্যস্ত অবস্থা দুবাই ও ওমানের।
ভারী বর্ষণে মরুর দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরের মধ্যে একটি হলো দুবাই। শহরটিতে ৭৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টিপাতে ডুবে গেছে রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে শপিং মল ও বিমানবন্দর। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বিমানসহ সকল পরিবহন পরিষেবা।
এমনকি বন্ধ রাখতে হয়েছে স্কুল কলেজ সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারি কর্মকর্তাদের কাজ করতে বলা হয়েছে বাসা থেকে। এমনকি কিছু এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে স্থানীয়দের।
ক্লাউড সিডিং কি ঝড়ের কারণ?
মরুভূমির দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাধারণত বৃষ্টি হয় না বললেই চলে। সাধারণত শুষ্ক মরুভূমির আবহাওয়ার জন্য পরিচিত দেশটি। গ্রীষ্মে সেখানের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে।
অথচ সেই দেশটিতেই বর্তমানে প্রবল বৃষ্টিপাত, ভয়াবহ বন্যা। গত মঙ্গলবার দেশটিতে ভারী বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে বিমানবন্দর সব পানিতে টইটুম্বুর। কোমর পানিতে ভাসছে বুগাতি, ফেরারি ও মার্সিডিজ বেঞ্জের মতো দামি দামি গাড়ি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবহাওয়া দপ্তর বলছে, গত ৭৫ বছরে এত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়নি দেশটিতে। প্রশ্ন উঠেছে, মরুর দেশে হঠাৎ কেন এত বৃষ্টিপাত? এর জন্য ‘ক্লাউড সিডিং’কে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
ক্লাউড সিডিং কি?
আকাশে ভেসে থাকা বৃষ্টির অনুপযোগী মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে মাটিতে ঝরে পড়ার জন্য পর্যাপ্ত ঘনীভবন প্রয়োজন হয়। স্বাভাবিকভাবে বৃষ্টি না হলে ড্রাই আইস অথবা সিলভার আয়োডাইড ব্যবহার করে মেঘের ঘনীভবন ঘটানো যায়।
ড্রাই আইসের তাপমাত্রা মাইনাস ৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে। ভেসে থাকা মেঘের ওপর এই ড্রাই আইসের গুড়া ছড়িয়ে দিলে সেটা ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি হয়ে মাটিতে পড়ে। এই প্রক্রিয়াকেই ক্লাউড সিডিং বলা হয়।
পানির নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক বছর ধরে এই ক্লাউড সিডিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার। আর তাই মঙ্গলবারের ঘটনার পরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটিতে রেকর্ড পরিমান ভারী বৃষ্টিপাত ও ভয়াবহ বন্যার মূল কারণ ক্লাউড সিডিং।
যদিও রয়টার্সকে দেশটির সরকার জানিয়েছে যে এই ঝড়ের আগে আগে এমন কোন কার্যক্রম পরিচালনা করেনি তারা।
আবার কিছু কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে জলবায়ু পরিবর্তন এই বিধ্বংসী বৃষ্টি ও বন্যার কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিন দিন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্বাভাবিক আবহাওয়া ব্যবস্থার মধ্যেও বিপুল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা ছিল।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানব নেতৃত্বে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে তীব্র বৃষ্টিপাতসহ বিশ্বজুড়ে আরও চরম আবহাওয়ার ঘটনা ঘটছে এবং পরবর্তীতে আরও বাড়বে।
এমটিআই