ঢাকা : শ্রীনগর শহরের নওহাটা এলাকার মানুষ ভারতবিরোধী মনোভাবের জন্য পরিচিত। সেই শহরের একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন হারুন খান। ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়ে কিছুক্ষণ আগে পোলিং বুথ থেকে বেরিয়ে এসেছেন তিনি।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের মানুষ নির্বাচন বর্জন করে আসছে বহু বছর হল। স্বাধীনতার দাবিতে ১৯৮৯ সাল থেকে সেখানে সশস্ত্র বিদ্রোহ চলে আসছে।স্থানীয় অনেকে মনে করেন, এ অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বৈধতা আদায়ের কৌশল হিসেবে নয়াদিল্লি ভোটের আয়োজন করে। সে কারণে যে কোনো নির্বাচনের আগে কাশ্মিরের সশস্ত্র গোষ্ঠী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের নিয়ম করে ভোট বর্জনের ডাক দিতে দেখা যায়।
তবে এবারের লোকসভা নির্বাচনে ভোট নিয়ে কশ্মিরিদের মনোভাবের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আলজাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়া, রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি বাতিল করা এবং সরাসরি নয়াদিল্লির নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পাঁচ বছর পর হারুন খান ও তার বন্ধুদের ভোটকেন্দ্রে দেখা গেল। ভোটকে এবার তারা প্রতিবাদের ‘নতুন ধরন’ হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
আলজাজিরাকে হারুন বলেন, (ভোট) বয়কট করে, কিংবা অন্য কোনোভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা কিছুই পাইনি। আমার অনেক বন্ধু, প্রতিবেশী বছরের পর বছর জেলে পচছে, কেউ তাদের খবর রাখে না। আর নতুন এই প্রতিবাদে হারুন খান একা নন।
ভারতের নিম্নকক্ষ লোকসভায় কাশ্মিরের রয়েছে তিনটি আসন, যেগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে ভোট নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ১৩ মে শ্রীনগর আসনে ভোট হয়।
এবার সেখানে ৩৮ শতাংশ ভোট পড়েছে, ১৯৮৯ সাল থেকে ভোট পড়ার এই হার সবচেয়ে বেশি। ২০১৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল মাত্র ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
ভোটার ও স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বলছেন, ভোটের হারে এই পরিবর্তন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি সমর্থনের প্রতিফলন নয়। স্থানীয়দের নীতিগত অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে– এমন ভাবারও কোনো কারণ নেই। বরং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নাটকীয়ভাবে বদলে যাওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ এখন নিজেদের এমন এক জায়গায় আবিস্কার করছেন, যেখানে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে নিজেদের কথাগুলো বলার আর কোনো উপায় তাদের সামনে নেই।
‘তাদের বেছে নাও, যার আমাদের জন্য কথা বলবে’
কাশ্মির নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের বিরোধ সেই স্বাধীনতার কাল থেকেই। উভয় দেশ পুরো কাশ্মির নিজের দাবি করে। কাশ্মিরকে দুই ভাগ করে তারা আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। হিমালয়ের পাদদেশের এ অঞ্চলটি নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দুই দেশ তিনটি যুদ্ধ করেছে।
ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে ১৯৮৯ সালে কাশ্মিরে প্রথম বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ার সেই সময় হাজারো কাশ্মিরি হত্যার শিকার হন। সেই থেকে ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি ঘটিয়ে কাশ্মিরিদের জীবনযাপনের অধিকাংশ বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে আসছে ভারত সরকার।
বিশেষ মর্যাদার রাজ্য হিসেবে জম্মু ও কাশ্মির কিছু স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত। তার মধ্যে একটি হল- বহিরাগতরা সেখানকার জমি কিনতে পারত না।
হারুন খান বলেন, ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের অধীনে ওই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদী সরকার ২০১৯ সালে তা বাতিল করায় সব বদলে গেছে। তখন থেকে পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হয়েছে।
কশ্মিরে বিধানসভার ভোট হয় না। ফলে অনেক কাশ্মিরি বুঝে গেছে, আইন-কানুন প্রণয়নে তাদের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন ঘটবে না, যা তাদের জীবন চালানোর পথ দেখাতে পারে।
আজ আমার ভোট দেওয়ার কারণ হল, আমি স্থানীয় কাশ্মিরি জনপ্রতিনিধি বাছাই করতে চাই, যিনি আমাদের পক্ষে ভারতের সঙ্গে কথা বলবেন। জেলে থাকা আমার বন্ধুদের বের করে আনতে চাই আমি, বলেন হারুন।
৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর ফারুক আবদুল্লাহ, মেহবুবা মুফতিসহ কাশ্মিরের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে মোদী সরকার। ছবি: রয়টার্স
‘কম শয়তানকে বেছে নেওয়ার ভোট’
কয়েক দশকের মধ্যে এবারই প্রথম সশস্ত্র গোষ্ঠী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা ভোট বর্জনের ডাক দেননি। অধিকাংশ বিচ্ছিন্নতবাদী নেতা এখন কারাগারে।
২০১৯ সালে দমনপীড়নের সময় প্রথাগত ভারতপন্থি দলগুলোও নয়াদিল্লির কড়া সমালোচনায় নেমেছিল। তাদের নেতারাও তখন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তারা অভিযোগ তুলেছিলেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মিরের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে নয়াদিল্লি।
ভোটার ও বিশেষ্জ্ঞরা বলছেন, যেসব দলকে একসময় ভাবা হত তারা নয়াদিল্লির কাছে বিক্রি হয়েছে গেছে, সেসব দল এখন জনগণের কণ্ঠ হয়ে উঠেছে।
৩৮ বছর বয়সি ফাহিম আলম একজন ওয়েব ডেভেলপার। শ্রীনগরের লালচক কেন্দ্রে তিনি ভোট দিয়েছেন। ফাহিম বলছেন, অপেক্ষাকৃত ‘কম শয়তানকে’ বেছে নিতেই ভোট দিয়েছেন তিনি।
মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) ‘বড় শয়তান’ হিসেবে ইঙ্গিত করে তার চেয়ে কম ক্ষতিকর কাউকে বেছে নেওয়ার কথা বলছেন ফাহিম।
তিনি জানান, নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরাকে চ্যালেঞ্জ করে মাঠে থাকা বেশিরভাগ বিরোধী দল নিয় গঠিত ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে তিনি ভোট দিয়েছেন।
কোনো রাজনৈতিক দলকে আমি পছন্দ করি না। তবে বিজেপিকে কোণঠাসা করার ইচ্ছা থেকে আমি ভোট দিয়েছি।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের শ্রীনগর আসনে ১৩ মে লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেন ৩৮ বয়সি ওয়েব ডেভেলপার ফাহিম আলম। ছবি: আলজাজিরা
নরেন্দ্র মোদী তার নির্বাচনি বক্তব্যে মুসলমানদের যে ভাষায় আক্রমণ করেছেন, তা চিন্তায় ফেলেছে ফাহিম আলমকে। প্রধানমন্ত্রী মোদী কখনও তাদের বলেছেন ‘অনুপ্রবেশকারী’, কখনও আবার বলেছেন, ‘তারা, যারা বেশি সন্তান নেয়’।
ফাহিম বলেন, কাশ্মির মুসলমান অধ্যুষিত এটা ঠিক, কিন্তু ভারতের অন্যান্য রাজ্যে মুসলমাদের সঙ্গে যা হচ্ছে, তা গায়ে কাঁটা দেওয়ার মত। যাই হোক, বিজেপির হাত থেকে আমাদের অঞ্চলকে রক্ষা করার জন্য আমার এবার ভোট দেওয়া।
বয়কটের বদলে ভোট দেওয়ার এই ‘কৌশলকে’ স্বাগত জানিয়েছে কাশ্মিরের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল।
শ্রীনগর আসন থেকে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ন্যাশনাল কনফারেন্সের (এনসি) প্রার্থী আগা সৈয়দ রুহুল্লাহ মেহদি মনে করেন, ভোটে অংশগ্রহণ না করে কাশ্মিরিরা বছরের পর বছর ‘অপরাধ’ করেছেন, সেজন্য তাদের এখন মূল্য দিতে হচ্ছে।
শ্রীনগরে নিজ দলের কার্যালয়ে আলজাজিরাকে তিনি বলেন, এই দীর্ঘসময়ে কাশ্মিরের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে পচানোর চেষ্টা করা হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকে ‘পাপ’ হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।
আর তাতে কাশ্মিরিরা আত্মপরিচয় হারিয়েছে এবং বহিরাগতরা তাদের শাসন করার সুযোগ পেয়েছে বলে মনে করেন রুহুল্লাহ মেহদি।
শ্রীনগর আসনে মেহদির প্রতিদ্বন্দ্বী পিপল’স ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) ওয়াহেদ উর রেহমান পারা। তিনিও মেহদির বক্তব্যের সঙ্গে একমত।
জনগণ এখন বুঝে গেছে, ভোট হল আসল অস্ত্র, আলজাজিরাকে বলেন তিনি।
ওয়াহেদ উর রহমান বলেন, কাশ্মিরজুড়ে আজ নীরবতা। কথা বলতে ভয় পায় মানুষ। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তারা নয়াদিল্লিকে ২০১৯ সালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বার্তা পাঠাতে পারছে।
৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর থেকে মোদী সরকার কাশ্মিরের শত শত মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। এমনকি অখণ্ড ভারতের অস্বিত্ব স্বীকার করা এনসি ও পিডিপির অনেক নেতার ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
শ্রীনগরের ৩৪ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ কাশ্মিরের পুলওয়ামা জেলা। জায়গাটি একসময় ভারত শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। সোমবার সেখানকার ভোটকেন্দ্রগুলোর সামনে লাইন ধরে দাঁড়াতে দেখা যায় ভোটারদের।
গত লোকসভা নির্বাচনেও শ্রীনগর আসনের মধ্যে ছিল পুলওয়ামা। সেবার মাত্র ১ শতাংশ ভোট পড়েছিল সেখানে। অথচ এবার ভোট পড়েছে ৪৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
পুলওয়ামার বাসিন্দা মুনিব বশির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরু শহরের এএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যয়নত এই শিক্ষার্থী এবার প্রথম ভোটার হয়েছেন।
তিনি বলেন, কাশ্মিরি তারুণদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আমাদের তরুণ নেতা চাই। (ভোট) বয়কটের সেই দিন আর নাই।
ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ‘লোক ঢুকিয়ে’, বহিরাগতদের জমি কেনার সুযোগ দিয়ে মুসলমান-প্রধান কাশ্মিরের জনমিতি বদলে দেওয়ার যে চেষ্টা করছে মোদীর বিজেপি, তা নিয়ে খানিকটা উদ্বেগ দেখা গেল মুনিব বশিরের কণ্ঠে।
ভোটের লাইনে মুনিবের পেছনে ছিলেন ২৫ বছর বয়সি মুনির মুস্তাক। জীবনে প্রথমবার তার ভোট দিতে আসার উদ্দেশ্য হল, ভারতের সংবিধানের ‘প্রস্তাবনা’ রক্ষা করা।
তার ভাষায়- সংবিধানের এই মৌলিক অংশ আধুনিক ভারতে সেই মূল্যবোধ ধারণ করার কথা বলে, যা অসাম্প্রদায়িক ও সাম্যবাদ রাষ্ট্রকে বোঝায়।
মুস্তাক বলেন, কাশ্মিরে বিধানসভা ভোট হয়েছে সেই ১০ বছর আগে। তবে এই ভোট (লোকসভা) ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ভোট।
অন্যবার দেখা যায়, ভোটকেন্দ্রের সামনে নারী ভোটাদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। বিভিন্ন কেন্দ্রে নারী ভোটাদের লাইন দেখা গেছে।
দক্ষিণ কাশ্মিরের নাইরা গ্রামে বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সি রুকসানার আশা, তার ভোট গ্রামের তরুণদের জেল থেকে বের করে আনতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, কাশ্মিরে অনেক নৃশংসতা ঘটে যাচ্ছে। কাজকর্মে যদি আমাদের লোক থাকে, তাহলে আমাদের দুর্ভোগ কিছুটা কমবে।
দীর্ঘদিন বিদ্রোহীদের প্রভাবে থাকা দক্ষিণ কাশ্মিরের সোপিয়ান জেলাতেও এবার ভোটার উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে যেখানে ভোট পড়েছিল ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ, এবার সেখানে পড়েছে ৪৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
কৃতিত্ব নিচ্ছেন কে? কে দোষারোপের মুখে?
নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) শ্রীনগর আসনে ভোটের হার বৃদ্ধির কৃতিত্ব দাবি করে বলেছেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করায় এবার ভোট পড়ার হার বেড়েছে।
মোদী বলেছেন, আগের সব বারের চেয়ে এবার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় উৎসাহব্যঞ্জক ভোটার উপস্থিতির জন্য শ্রীনগর সংসদীয় আসনের ভোটাদের বিশেষভাবে অভিবাদন জানাচ্ছি।
ভারতের নির্বাচন কমিশন শ্রীনগরে ভোটাদের দীর্ঘ লাইনের ছবি শেয়ার করেছে। সেখান থেকে নিয়ে মোদীও শেয়ার করেছেন সেই ছবি।
অমিত শাহর দাবি, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে জম্মু-কাশ্মিরে গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, মোদী সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছেন, তার প্রভাব নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতিতেও দেখা যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক বিশ্বাস পোক্ত করেছে এবং এর শেকড় জম্মু-কাশ্মিরের ভেতরে প্রবেশ করেছে।
তিনি বলছেন, যারা এখনও অনুচ্ছেদ বাতিলের বিরোধিতা করছেন এবং তা পুনরায় চালু করার পক্ষে কথা বলে যাচ্ছেন, ভোটের লাইনে দাঁড়ানো উপচে পড়া মানুষ এবং এবং জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দারা তাদের সমুচিত জবাব দিয়েছে।
কাশ্মির অঞ্চলের তিনটি সংসদীয় আসনের একটিতেও এবার প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। বিরোধীরা বিষয়টিকে নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখানে ভোট করলে গণঅসন্তোষের মুখে পড়তে হবে, এটা বিজেপির জানা আছে। প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত তারই প্রতিফলন।
রাজনীতি বিশ্লেষক শেখ শওকত হোসাইন বলছেন, বিজেপি যেমনটি বলছে, তেমনটি নয়। মানুষ ভোট দিচ্ছে ‘বিজেপিভীতি’ থেকে, যা এনসি ও পিডিপি জনগণের মধ্যে তৈরি করতে পেরেছে। এ কারণেই গতবারের চেয়ে এবার বিপুল ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে।
কেন্দ্রে উপস্থিতি বাড়লেও বয়কটের ডাক ছাড়াই প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটার এবারও কেন্দ্রে আসেননি, সে বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়েছেন শওকত হুসাইন।
তিনি বলেন, কাশ্মিরে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর আগে ১৯৮৪ সালের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৭৩ শতাংশ, মাঝের দীর্ঘ খরা বাদ দিয়ে ২০২৪ সালে এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ।
শ্রীনগরের ১৪ কিলোমিটার দূরের চদোরা জেলার ২২ বছর বয়সি ইনায়েত ইউসুফ সেসব ‘বাহিরাগতদের বিরুদ্ধে ভোট’ দেওয়ার কথা বলছিলেন, যারা কাশ্মিরের ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে।
তার দুশ্চিন্তা, এখানে বিজেপির জন্য বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতার মানে হল তারা কাশ্মিরের চেহারা যেমন ইচ্ছা বদলে দেওয়ার জন্য ‘আরও দানবীয়’ হয়ে উঠবে।
ভোটের সময় উন্নয়ন ও কর্মসংস্থার বরাবরই গুরুত্ব পেয়ে থাকে। তবে এবার আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন, বলেন ইউসুফ।
এমটিআই