ঢাকা: হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ান। প্রাথমিকভাবে এই ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে আখ্যা দেওয়া হলেও বারবারই প্রশ্ন উঠছে এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না। ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের বৈরি সম্পর্ক থাকায় অভিযোগের আঙুল উঠছে তাদের দিকেও।
সোমবার (২০ মে) সকালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যান ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির দুর্ঘটনাস্থলে ‘কোনও জীবিত ব্যক্তি’ পাওয়া যায়নি। বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি পুড়ে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। তার সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ানও ছিলেন। ঘন কুয়াশার মধ্যে হেলিকপ্টারটি পার্বত্যাঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়।
কর্মকর্তাদের দাবি, বৈরি আবহাওয়াই এই দুর্ঘটনার মূল কারণ। প্রেসিডেন্টের বহরে মোট তিনটি হেলিকপ্টার ছিল। অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে অবতরণ করলেও ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। নিরাপদে ফেরা হেলিকপ্টারে ছিলেন ইরানের জ্বালানি মন্ত্রী আলী আকবর মেহরাবিয়ান এবং আবাসন ও পরিবহনমন্ত্রী মেহরদাদ বজরপাশ।
মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বৈরিতা দীর্ঘদিনের। সর্বশেষ এপ্রিলে পরস্পরের ভূখণ্ডে হামলা চালায় দেশ দু'টি। হামলার আর সামনের দিকে না গড়ালেও উত্তেজনা পুরোপুরি হ্রাস পায়নি। তাই এই দুর্ঘটনায় ইসরায়েলের সংশ্লিষ্টতা খোঁজা হচ্ছে।
যদিও ইরান কিংবা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিভিন্ন মন্তব্য করতে শুরু করেছেন।
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার জানান, মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সাথে তার কথা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো সন্দেহ করার মত কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
শুমার বলেন, ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যে স্থানে কপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সেখানকার আবহাওয়া অত্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন ও খারাপ ছিল। তাই এটিকে একটি দুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। তবে, বিষয়টি এখনো পুরোপুরি তদন্তাধীন।
ইরানের কর্মকর্তারও বলছেন আবহাওয়ার কথা। প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বেল ২১২ মডেলের একটি হেলিকপ্টার বহন করছিল। এই মডেলটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের হেলিকপ্টার ইরানের কাছে বিক্রি করার কথা নয়। সে হিসাবে, এটি অন্তত ৪৫ বছরের পুরোনো।
পল বিভার নামে একজন উড়োজাহাজ বিশেষজ্ঞ আল-জাজিরাকে বলেন, হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে ‘অবশ্যই’ মেঘের আচ্ছাদন, কুয়াশা, জলীয় বাষ্প এবং নিম্ন তাপমাত্রা ভূমিকা রেখেছে। হেলিকপ্টারগুলো ফিক্সড-উইং প্লেনের মতো বিরূপ আবহাওয়ায় সহজে উড়তে পারে না। হেলিকপ্টারে সেই সুবিধা নেই।
প্রশ্ন উঠেছে বৈরি আবহাওয়ায় এমন একটি হেলিকপ্টার নিয়ে কেন রাইসি সেখানে গেলেন। আর এই যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই হেলিকপ্টারের দুর্বলতা নিয়েও মিত্র দেশ ইসরায়েলের ভালো ধারণা আছে বলেও দাবি অনেকের।
এর আগেও বেল টু ওয়ান টু মডেলের হেলিকপ্টার বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাত উপকূলে মারাত্মক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এই হেলিকপ্টার। এরও আগে, ২০১৮ সালে ইরানেই একই ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অন্তত চারজন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষা আগ্রাসন নিয়ে আওয়াজ তুলেছিল ইরান। আর ইব্রাহিম রাইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর এই কণ্ঠ আরও জোরাল হয়। তাই পশ্চিমা বিশ্ব ও ইসরায়েলের অনেক চক্ষ্মুশূলেই পরিণত হয়েছিলেন তিনি। তাই তার মৃত্যুতে আঙুল উঠছে শত্রুপক্ষের দিকেই। আর অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকায় দুর্ঘটনাটি হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে নিরাপত্তা বলয় সেখানে কম থাকায় রাইসিকে টার্গেট করাও সহজ।
এমএস